নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী নগরীতে ছাত্র আন্দোলন দমনে শীর্ষ সন্ত্রাসী জহিরুল ইসলাম রুবেলকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ওই দিন রুবেলের নেত্বত্বে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অন্তত এক ডজন নেতাকর্মী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছোঁড়ে। এ ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। এছাড়াও রুবেল একটি হত্যা মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনেও মামলা রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে হাতে জোড়া পিস্তল নিয়ে মুহুর্মুহু গুলি করা শীর্ষ সন্ত্রাসী জহিরুল হক রুবেলকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। রুবেল রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দুই শিক্ষার্থী হত্যা মামলার আসামি। রুবেলের (৪১) বাড়ি রাজশাহী নগরীর চণ্ডিপুর এলাকায়। তার বাবার নাম আব্দুর রাজ্জাক। রুবেল যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও তিনি পরপর দুইবার রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন।
র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফিরোজ কবির জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে রুবেল কক্সবাজার থেকে কুমিল্লা হয়ে ঢাকার দিকে আসছেন। পরে র্যাব-১০ যাত্রাবাড়ী ও র্যাব-৫ যৌথ অভিযান চালিয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি ব্রিজের ওপর থেকে তাকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল শিক্ষার্থী আলী রায়হান ও সাকিব আনজুম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, যেখানে গ্রেফতার হয়েছে, সেখানে কোনো মামলা থাকলে আদালতের মাধ্যমে রুবেলকে রাজশাহীতে আনা হবে। আর ওখানে তার বিরুদ্ধে মামলা না থাকলে সরাসরি রাজশাহীতে আনা হবে। রাজশাহীতে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আলী রায়হান ও সাকিব আনজুম হত্যা মামলার আসামি রুবেল। এখানে এনে আদালতের মাধ্যমে তাকে রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।
নিজ এলাকা ছাড়াও নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় রুবেলের ছিল দুর্ধর্ষ ক্যাডার বাহিনী ও শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট। এ ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে জমি দখল, মাদক, জুয়া, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন রুবেল। হাফডজন মামলার আসামি হয়েও ২০২৩ সালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হলফনামায় তথ্য গোপন করে প্রার্থী হন তিনি। সর্বশেষ গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের দিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে শক্তিশালী শ্যুটার বাহিনী গুলির্বষণ করে। এই শ্যুটার বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন রুবেল।
ওইদিন দুপুরে তালাইমারি এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা নগরীর সাহেববাজারের দিকে এগোতে থাকে। তারা শাহ মখদুম কলেজ এলাকায় পৌঁছলে রুবেলের নেতৃত্বে শ্যুটার বাহিনী নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রুবেল মাথায় হেলমেট পরে দুটি পিস্তল দুই হাতে নিয়ে সমান তালে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করছেন। ওই সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব আনজুম ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী আলী রায়হান নিহত হন। এই দুই শিক্ষার্থী হত্যা মামলারও আসামি রুবেল। তবে হাসিনা পালানোর পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সঙ্গে রুবেলও গা ঢাকা দেন।
২০১৮ সালের এপ্রিলে রাজশাহীর নগরীর হড়গ্রাম নতুনপাড়া মহল্লা থেকে রুবেল ও তার এক সহযোগীকে পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, চার রাউন্ড গুলি ও ১২ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করেছিল কাশিয়াডাঙ্গা থানা পুলিশ। ২০১৩ সালের মে মাসে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টেন্ডারের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে নিহত হন মহানগরীর ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সারোয়ার হোসেন ডাবলু। ডাবলু শীর্ষ সন্ত্রাসী রুবেলের ভাই।
টেন্ডারের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে যুবলীগ কর্মী মাহফুজের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন যুবলীগ কর্মী মাহফুজুর রহমান মাহফুজ (৩০)। এ ঘটনার মাত্র ৫ মাসের মাথায় অক্টোবরে মাহফুজকে হত্যা করা হয়। স্থানীয়রা জানান, ভাই হত্যার প্রতিশোধ নিতে রুবেলের মায়া বাহিনী মাহফুজকে হত্যা করে। যদিও পরে মোটা অংকের টাকা দিয়ে রুবেল হত্যা মামলাটি আপোস করাতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।