নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর ছয়টি আসনে বাধাহীনভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এই নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ভোটকে ঘিরে মানুষের মাঝে সৃষ্টি হওয়া উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল। অপচেষ্টা ছাপিয়ে মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনা আর উচ্ছ্বাসে পরিণত হয়েছে। রাজশাহীর প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশে। দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণ।
জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে গড়ে ৪১ দশমিক ৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। ভোটগ্রহণ শেষে বিকেল ৫টায় তিনি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শীতের সকালে কুয়াশায় ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। শহরের তুলনায় গ্রামে ভোটার বেশি লক্ষ্য করা গেছে। প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ছিল। এছাড়াও সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাবও মাঠে দায়িত্ব পালন করে।
রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ভোটাররা বাধাহীনভাবে ভোট দিচ্ছেন। নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার তারিকুল আলম সকালেই শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান ডিগ্রি কলেজে ভোট দিতে আসেন। ভোটের পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আগের তুলনায় ভোটের পরিবেশ খুবই চমৎকার ছিল। ভোটকেন্দ্রের পরিবেশও সুন্দর ছিল। কোনো বাধা বা হুমকি ছিল না। সুন্দরভাবে ভোট দিয়ে আসলাম।
রাজশাহী নগরীর শিরোইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছেন ফারিয়া ইসলাম। তিনি বলেন, এই প্রথম ভোট দিতে এসেছি। তাই আমি খুবই উচ্ছ্বসিত। ভোট দিতে পেরে ভালো লাগছে। পছন্দের প্রার্থী যদি জিতে যায় তাহলে আমি আরও খুশি হবো।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, কোনো কোনো আসনে দুই-একটি কেন্দ্রের ফলাফল এখনো আমরা পাইনি। সেটি বাদে এখন পর্যন্ত রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে ৪৬ শতাংশ, রাজশাহী-০২ (সদর) আসনে ২০ শতাংশ, রাজশাহী-০৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে ৪০ দশমিক ১৩ শতাংশ, রাজশাহী-০৪ (বাগমারা) আসনে ৫৩ শতাংশ, রাজশাহী-০৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে ৪৬ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং রাজশাহী-০৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ব্যতিত রাজশাহীর ৬টি সংসদীয় আসনেই কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এজন্য প্রার্থী-ভোটার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
জেলাজুড়ে যত বিচ্ছিন্ন ঘটনা
রাজশাহী-১ আসনে দুটি কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আয়েশা আক্তার জাহান ডালিয়া। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এরপর সেখানে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এছাড়াও পুঠিয়া উপজেলার একটি কেন্দ্রে ঈগল সমর্থকদের তোপের মুখে পড়েন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ দারা। তিনি পুলিশি পাহারায় কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যান। এছাড়াও দুর্গাপুরের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছেন একদল যুবক বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে সেখানে কোনো অপ্রীতিকর খবর পাওয়া যায়নি।
বাঘায় নৌকার সমর্থক রেজাউল করিম ও মিশন সরকার নামে দুজনকে মারধর করা হয়েছে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়নের নওটিকা-আরিফপুর কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বাউসা ইউনিয়নের দিঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০০ গজ পশ্চিমে একটি ককটেল বিস্ফারণের ঘটনা ঘটেছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সেখানে ভোটগ্রহণ হয়েছে।
অন্যের ভোট দিতে গিয়ে বাঘায় এক যুবক আটক হয়েছেন। ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। রোববার দুপুরে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খাগড়বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অন্যের ভোট দিতে যান তিনি। আটক যুবকের নাম মহিবুল (৩০)। তিনি রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহরিয়ার আলমের সমর্থক। মহিবুল নৌকা প্রতীকে জাল ভোট দিতে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগÑ এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের।
বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, সারাদিন তিনি থানার বাইরে আছেন। এই যুবককে থানায় নেয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। থানায় ফিরে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
১০০ বছরের বৃদ্ধ এলাহী বক্স দিলেন ভোট
বাঘায় ১০০ বছরের বৃদ্ধ এলাহী বক্স ভোট প্রদান করেন। রোববার (৭ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় দিঘা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তার নাতী রনোর সাথে এসে ভোট দেন। দিঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার ৩ হাজার ২৪৯। বৃদ্ধ এলাহী বক্স বাউসা ইউনিয়নের দাবিয়াতলা গ্রামের বাসিন্দা।
এ সময় এলাহী বক্স বলেন, জীবনে অনেক ভোট দিয়েছি। এ বয়সে এসে ভোট দিতে পেরে নিজে ভাল লাগছে।
এ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শরিফুজ্জামান বলেন, কোন অসুস্থ্য ব্যক্তি ভোট কেন্দ্রে এসে সহযোগিতা চাওয়ায় তা করা হয়েছে। তবে প্রায় শত বছর বয়সের এক বৃদ্ধ এ কেন্দ্রে তার নাতীর সাথে এসে ভোট দিয়েছেন।
এ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই আতাউর রহমান বলেন, এক বৃদ্ধ লাঠিতে ভর করে তার নাতীর সাথে এসে ভোট দেওয়ার জন্য সহযোগিতা চাই, আমরা তাকে সার্বিক সহযোগিতা করে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
রাজশাহী জেলায় মোট ভোটার ছিল ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৭১৪। ভোটকেন্দ্র ৭৭০টি। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩০ জন। নারী ভোটার ১০ লাখ ৯২ হাজার ২৯৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১৮ জন। ভোটকক্ষ ছিল চার হাজার ৯৬৩টি। রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে ৯টি উপজেলা, ১৪টি পৌরসভা ও ৭২টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে রাজশাহী-২ আসনটি সিটি করপোরেশনের মধ্যে।