বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
রাজশাহীতে নানা আয়োজনে এবং নানা কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্লাবফুট দিবস পালিত হয়। দিবস উপলক্ষে সকাল ১০টায় ওয়াক ফর লাইফ এর আয়োজনে এবং সানক্রেড ওয়েল ফাউডেশন, মিরাকেল ফিট,ও একশন অন প্রোভারটির সহযোগিতায় র্যালি করা হয়। নগরীর কাজিহাটায় অবস্থিত ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন জেনারেল হাসপাতাল হতে র্যালি বের করা হয়। র্যালি নিয়ে নগরীর বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে পুণরায় অত্র হাসপাতালে এসে শেষ হয়। পরে হাসপাতাল’র সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন জেনারেল হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর এম এ হাফিজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. ওবায়দুলহক, সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক বিভাগ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মামুনুর রহমান।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে ফিজিওথেরাপিস্ট ও ক্লিনিক ম্যানেজার মেহেদি হাসান বলেন, রাজশাহী জেলায় বর্তমানে ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন জেনারেল হাসপাতাল এ এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ক্লাবফুট যদি সঠিক ভাবে এবং সময়ের মধ্যে যদি চিকিৎসা করা না হয়, এটি মারাত্বক বিকৃতির দিকে অগ্রসর হতে পারে। যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আজীবন বিকলাঙ্গতা নিয়ে জীবন যাপন করতে হয়। শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের শরীরের ভর পায়ের একপাশে পরে ফলে ত্বকের পৃষ্ঠের উপর ক্ষতের সৃষ্টি ও ব্যথার কারণ হয় এবং ব্যক্তিটি সাধারণ জুতা পরতে সক্ষম হয় না। এছাড়াও এরূপ দৃশ্যমান বিকৃতির জন্য লোকজন বিভিন্ন ভাবে বৈষম্য বা কুটক্তি করে।
তিনি বলেন, চিকিৎসায় অবহেলিত ক্লাবফুট নিয়ে জীবন যাপনকারী ব্যক্তিরা জীবনের সব ক্ষেত্রে বাধার মুখোমুখি হয় যেমন- শিক্ষা হতে বঞ্চিত, কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমাবদ্ধ করে, সামাজিক অংশগ্রহন, দারিদ্রতা এবং সর্বোপরি সমাজ ও জাতির জন্য এরা একটা বোঝা হয়ে যায় । তিনি আরো বলেন, জন্মগত ত্রুটি সমূহের মধ্যে ক্লাবফুট অন্যতম। অনেকে একে মুগুর পা বলে থাকে। এটি জন্মগত শারীরিক বিকৃতি যেখানে শিশুর পায়ের পাতার আকৃতি বা অবস্থান ভিতরের দিকে মোচড়ানো থাকে। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪০০০ হাজার শিশু এই জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। ক্লাবফুট এর সঠিক কারণ এখনো অজানা, তবে জিনগত এবং পরিবেশ গত কারন বা মাল্টি ফ্যাক্টোরিয়ালের সংমিশ্রণে এ বিকৃতি হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কিছু কিছু স্থানে ক্লাবফুট নিয়ে কোন শিশুর জন্মের কারণ কী তা সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার রয়েছে যেমন- আধ্যাত্মিক প্রভাব, মন্ত্র, অভিশাপ বা সৃষ্টি কর্তা প্রদত্ত শাস্তি, সূর্য গ্রহন বা চন্দ্র গ্রহন ইত্যাদি। কখনও কখনও মা বাবাদেরকে এর জন্য দোষারোপ করা হয়, যা একেবারেই সঠিক নয়। ক্লাবফুটের চিকিৎসা নিয়েও আমাদের সমাজে অনেক ভুল ধারনা রয়েছে। কিছু মানুষের ধারনা তেল বা ঘি দিয়ে ম্যাসেজ করলে, ভূমিকম্পের সময় শিশুর পা সোজা করে ধরলে এমনকি কোন চিকিৎসা বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই পা ভাল হয়ে যেতে পারে। এই সকল কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারনা দূর করতে এবং বাঁকা পা ছোট বেলায় চিকিৎসাতে যে ভাল হয়, সে বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতাবৃদ্ধি করার লক্ষে রোববার বিশ্বব্যাপি ক্লাবফুট দিবস পালিত হয়।
উল্লেখ্য রাজশাহী জেলায় বর্তমানে ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন জেনারেল হাসপাতালএ এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রাজশাহী জেলার ক্লিনিকটির ওয়াক ফর লাইফ ক্লাবফুট ক্লিনিকটি তত্বাবধান ও সার্বিক দিকনির্দেশনায় রয়েছেন- ডা. ওবায়দুলহক, সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক বিভাগ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ডা. দীন মোহাম্মদ সোহেল, আবাসিক সার্জন, অর্থোপেডিক, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এখানে ফিজিওথেরাপিস্ট ও ক্লিনিক ম্যানাজারের দায়িত্ব পালন করছেন মেহেদী হাসান। ক্লিনিকটিতে এ পর্যন্ত প্রায় ১৯০০ জন শিশুর ক্লাবফুট বা মুগুর পা চিকিৎসার আওতাভুক্ত করেছে। সপ্তাহে প্রতি রোববার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিরার এ ক্লিনিকটিতে এ চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি।