রাজশাহীতে গ্রামীণ ব্যাংকের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের দুই মামলা

আপডেট: নভেম্বর ১৩, ২০২৪, ৮:০৩ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক


রাজশাহীতে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দুটি করা হয়। দুটি মামলারই বাদী দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন।



মামলার তিন আসামি হলেন, মহেরাব হোসেন রিপন (৩৫), মো. জুলহাস (৪০) ও কে এম মাসুদ রানা (৪৬)। তিনজনই গ্রামীণ ব্যাংকের রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া শাখায় কর্মরত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে রিপন ও জুলহাস ছিলেন জ্যেষ্ঠ কেন্দ্র ব্যবস্থাপক। আর মাসুদ রানা ছিলেন শাখা ব্যবস্থাপক (প্রিন্সিপাল অফিসার)। তিনজনই এখন বরখাস্ত অবস্থায় রয়েছেন।

অভিযুক্ত রিপনের বাড়ি পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিশিপাড়া গ্রামে। আর জুলহাসের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার নামুদরখালী গ্রামে। মাসুদ রানা পাবনার ফরিদপুর উপজেলার বিলবকরী গ্রামের বাসিন্দা। একটি মামলায় শুধু রিপনকে আসামি করা হয়েছে। অপর মামলায় মাসুদ রানা ও জুলহাসকে আসামি করা হয়েছে।

রিপনের বিরুদ্ধে করা দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১১ সালের ১৭ আগস্ট তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের চাকরিতে যোগ দেন। ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত নিমপাড়া শাখায় কর্মরত ছিলেন। তিনি সাতজন সদস্যের পাস বইয়ে এন্ট্রি দিয়ে এককালীন ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৮৭ টাকা; একজন সদস্যের পাস বইয়ে এন্ট্রি দিয়ে সবুজ জিপিএস হিসাবের মাসিক কিস্তি বাবদ ১২ হাজার ১৬০ টাকা, তিনজন সদস্যের পাস বইয়ে এন্ট্রি দিয়ে ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের ৭১ হাজার টাকা আদায় করে কোনো টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া আরেকজন সদস্যের পাস বইয়ে এন্ট্রি দিয়ে সহজ বা বিশেষ বিনিয়োগ ঋণের কিস্তির ৭৫০ টাকা কম জমা দিয়ে চারটি খাতে ১২ জন সদস্যের ২ লাখ ১৮ হাজার ৫৯৭ টাকা আত্মসাৎ করেন।

অন্যদিকে মাসুদ রানা ও জুলহাসের মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি চাকরিতে যোগ দেন। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি চারঘাটের নিমপাড়া শাখায় কর্মরত ছিলেন। তিনি ২৫ জন সদস্যের পাশ বইয়ে এন্ট্রি দিয়ে ঋণের এককালীন ১০ লাখ ২৭ হাজার ৫৪৩ টাকা; ১৩ জন সদস্যের পাস বইয়ে এন্ট্রি দিয়ে সবুজ জিপিএস হিসাবের মাসিক কিস্তি বাবদ ৪৩ হাজার ৮৮৬ টাকা; পাঁচজন সদস্যের পাস বইয়ে এন্ট্রি দিয়ে ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের ৯০ হাজার ৪০০ টাকা আদায় করে ব্যাংকে জমা করেননি। এ ছাড়া অপর সদস্যের পাস বইয়ে এন্ট্রি দিয়ে সহজ বা বিশেষ বিনিয়োগ ঋণের কিস্তির ৬ হাজার ৪৬৮ টাকা কম জমা দিয়ে মোট চারটি খাতে ৪৪ জন সদস্যের ১১ লাখ ৬৮ হাজার ২৯৭ টাকা আত্মসাৎ করেন।

আর মাসুদ রানা ২০০৫ সালের ৩১ জুলাই চাকরিতে যোগ দেন। তিনি ২০১৬ সালের ৭ আগস্ট থেকে ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিমপাড়া শাখায় ছিলেন। আসামি জুলহাস তার সহযোগিতায় তিনজন সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে ঋণপ্রস্তাব তৈরি করে এরিয়া অফিস থেকে অনুমোদন নেন। তারপর ঋণ বিতরণ না করে ৮২ হাজার ২৬৪ টাকা আত্মসাৎ করেন।

মামলার বাদী দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, আসামি জুলহাস এককভাবে ১১ লাখ ৬৮ হাজার ২৯৭ টাকা এবং অপর আসামি মাসুদ রানার সহায়তায় পরস্পর যোগসাজশে ৮২ হাজার ২৬৪ টাকাসহ মোট ১২ লাখ ৫০ হাজার ৫৬১ টাকা আত্মসাৎ করেন। সাবেক এই তিন কর্মকর্তার অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিত হয়ে মামলা দুটি করা হয়।