নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহীতে সহনীয় মাত্রার চেয়েও বহুগুন বেশি দূষণ পাওয়া গেছে শব্দে। আর এ নগরায়ণে কয়েক বছর ধরেই এখানে বাড়ছে শব্দ দূষণ। আবাসিক এলাকায় নির্মাণ এবং সড়কে পরিবহন এ শব্দ দূষণের অন্যতম নিয়ামক। নগরীতে ট্রাফিক এলাকা, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, মিশ্র এলাকা, এমনকি নীরব এলাকাতেও এখন শব্দের মাত্রা উদ্বেগজনক।
বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নামে একটি পরিবেশ বাদী সংগঠন শনিবার নগরীর ছয়টি পয়েন্টে যন্ত্রের সাহায্যে শব্দের দূষণ পরিমাপ করে এই তথ্য জানিয়েছে। তালাইমারি, রেলগেট, সপুরা, লক্ষ¥ীপুর, সাহেববাজার, ভদ্রা এলাকায় শব্দদূষণ পরীক্ষা করে দেখা গেছে আগের তিন বছরের চেয়ে বেশ কয়েকগুণ মাত্রায় শব্দ দূষণ বেড়েছে রাজশাহীতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তীব্র শব্দ মানব শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে এখনই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। প্রশাসন বলছে, এটি নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি নেয়া হচ্ছে আইনি পদক্ষেপ।
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ইউএনইপির প্রকাশ করা গত বছরের এক বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুয়ায়ী শব্দদূষণে বিশে^র চতুর্থ অবস্থানে আছে রাজশাহী। ঢাকা বিশ্বের শব্দ দূষণের শীর্ষ নগরী। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গাইডলাইন বা নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষের জন্য ঘরের ভেতর শব্দের গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৫৫ ডেসিবেল। আর ঘরের বাইরে বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ৭০ ডেসিবেল। অথচ রাজশাহীতে ১০৩ ডেসিবেল।
বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সহযোগী অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন খান বলেন, ধারাবাহিক ভাবে তিন বছর ধরে নগরীর শুধু রেলগেট এলাকায় শব্দের মাত্রা পাওয়া গিয়েছিলো ৯০ ডেসিবল, এবার সেখানে পাওয়া গেছে ৯০ দশমিক ৬ ডেসিবেল। অথচ সরকারের আইন অনুযায়ী বাণিজ্যিক এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রা হওয়া উচিৎ ৭০ ডেসিবেল।
তিনি জানান, নীরব এলাকায় দিনে ও রাতে সর্বোচ্চ শব্দের ঘনমাত্রা থাকতে হবে ৫০ ও ৪০ ডেসিবেল। কিন্তু রাজশাহীর ঘোষিত নীরব এলাকায় দিনে শব্দের ঘনমাত্রা পাওয়া গেছে ৮৪ ডেসিবেল। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ও রাতে সর্বোচ্চ শব্দের ঘনমাত্রা থাকতে হবে ৭০ ও ৬০ ডেসিবেল। তবে রাজশাহীর বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে শব্দের ঘনমাত্রা পাওয়া যায় ৮৮ থেকে ৯০ ডেসিবেলের মধ্যে। এভাবে সব ক্যাটাগরিতেই শব্দের মাত্রা বেশি পাওয়া গেছে।
শুধু শিল্প এলাকায় শব্দের স্বাভাবিক মাত্রা পাওয়া গেছে। শিল্প এলাকায় দিনে ও রাতে সর্বোচ্চ শব্দের ঘনমাত্রা থাকতে হবে ৭৫ ও ৭০ ডেসিবেল। রাজশাহীর শিল্প এলাকায় শব্দের ঘনমাত্রা পাওয়া যায় ৭৪ ডেসিবেল। প্রাপ্ত মানগুলো থেকে দেখা যায়, শিল্প এলাকা ছাড়া অন্যসব জায়গায় শব্দের নির্ধারিত মানমাত্রা অতিক্রম করেছে। যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর।
এর কারণ হিসেবে অবশ্য তিনি দায়ী করেছেন অটোরিকশার উচ্চ মাত্রার হর্ন, বাস ট্রাকের অযথা হর্ণ বাজানোসহ ক্রমাগত বড় বড় গাছ কেটে ফেলাকে। পরিবেশ সহনীয় করতে প্রশাসনের প্রতি তিনি অনুরোধ জানান, অটোরিক্সার উচ্চ মাত্রার হর্নের পরিবর্তে ভেঁপু হর্ন লাগানো এবং প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগানোর। এছাড়া নগরীতে যানজট শব্দ দূষণের একটি বড় কারণ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শব্দের মানমাত্রা নির্ণয়ের সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) অধ্যাপক ইকবাল মতিন। পরীক্ষায় নেতৃত্ব দেন, প্রকৌশলী জাকির হোসেন খান। তাকে সহযোগিতা করেন পিএইচডি গবেষক অলি আহমেদ, শেখ ফয়সাল আহমেদ, মো. ওবায়দুল্লাহ, শামসুর রাহমান, তারেক আজিজ প্রমুখ।