নগরীতে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, পুলিশ বক্স ও আ’লীগ অফিস ভাঙচুর, পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত

আপডেট: আগস্ট ৩, ২০২৪, ১০:০৩ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহীতে নয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছে আন্দোলনকারী। রাজশাহী নগরীর রেলগেট এলাকায় অবস্থিত পুলিশ বক্স এছাড়াও স্টেশন, ভদ্রা পুলিশ বক্স ভাঙচুর চালিয়েছে। এছাড়াও তারা দেবীশিংপাড়ায় অবস্থিত একটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয়েও হামলা চালিয়েছে। রেলগেটে রেলওয়ের গার্ড রুমেও তারা ভাঙচুর চালায়।

‘সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ গণমিছিলে হামলা ও খুনের প্রতিবাদ এবং ৯ দফা’ দাবিতে শনিবার (৩ আগস্ট) সকাল থেকে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। আন্দোলন চলাকালে শনিবার (৩ আগস্ট) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রধান ফটকের সামনে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা সদস্য (সিটিএসবি) সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে আন্দোলনকারীরা। এছাড়া, নগরীর রেলগেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের রাজশাহীর সাবেক সমন্বয়ক রাকিন আবসার অর্ণবকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। আহতরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এসব ঘটনায় রাজশাহীজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

শনিবার (৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি তালাইমারী ও কাজলা ঘুরে রাবির প্রধান ফটকের সামনে এসে সমাবেশ শুরু করে। এই কর্মসূচিতে রাবি, রুয়েট ও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এছাড়া, রাবি ও রুয়েটের শিক্ষকরাও একাত্মতা পোষণ করে যোগ দেন।

এসময় রাবির প্রধান ফটকের সামনে সাদা পোশাকে থাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা সদস্য (সিটিএসবি) সাইফুল ইসলাম আন্দোলনের অবস্থা দেখছিলেন। হঠাৎ করে আন্দোলনকারীদের কয়েকজন তাকে ঘিরে ধরে মারধর করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে তার মাথা ফেটে গেলে কয়েকজন সাংবাদিক তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর আগে, আন্দোলনকারীরা সাইফুল ইসলামের মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভাঙচুর করেন। এ সময় পুলিশের অন্য সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছিলেন না।

আন্দোলনরত রাবি শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদ বলেন, ন্যায্য অধিকারের আন্দোলনে জীবন দেওয়া আমাদের ভাইগুলোর রক্তের দাগ বাংলার জমিনে এখনো শুকায়নি। কী দোষ ছিল তাদের? তারা সংবিধান অনুযায়ী তাদের অধিকারের কথা বলেছিল। আজ আমাদের আন্দোলনের দাবি একটা, স্বৈরাচার সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। সেক্ষেত্রে আবু সাঈদের মতো জীবন দিতে আজকে মাঠে নেমেছি। হয় জীবন দিবো না হয় স্বৈরাচার সরকারের পদত্যাগ করে মাঠ ছাড়বো।

রুয়েট শিক্ষার্থী তানভির হাসান বলেন, সারাদেশের সঙ্গে সমন্বয় করে আজ আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছি। এখানে আমাদের একটাই দাবি স্বৈরাচার সরকারের পদত্যাগ। সরকারের পদত্যাগ ছাড়া শিক্ষার্থী সমাজ আর ঘরে ফিরবে না। এ আন্দোলন আর কোটা আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাই। পুলিশ প্রশাসন আমাদের ভাইদের ওপর গুলিয়ে চালিয়েছে, তাদেরকে বলবো এখন সাবধান হোন। আপনাদেরও ছেলে-মেয়ে আছে, তাদের দিকে তাকান।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে অংশ নেওয়া রাবির কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. ফজলুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আমরা তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছি। আর কত ঘরে বসে আমার ছেলেদের রক্ত দেখবো। শিক্ষার্থীদের গায়ে গুলি করতে স্বৈরাচার সরকারের কি একটুও বুক কাঁপেনি? আজ থেকে এ আন্দোলনে গুলি চালালে সেই গুলি আগে শিক্ষকদের গায়ে লাগবে, তারপর আমাদের ছাত্রদের। শিক্ষার্থীদের আর কোনো ভয় পাওয়ার কারণ নেই, তাদের পিতৃতুল্য শিক্ষকরা আজ থেকে তাদের সামনে থাকবেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে আমরা একাত্মতা পোষণ করছি এবং তাদেরকে সুরক্ষা দিতে সবসময় তাদের সঙ্গেই আমরা আছি।

এ বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্র-জনতা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমীরুল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক হাসানাত আলী, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, উর্দু বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আতাউর রহমান প্রমুখ সংহতি প্রকাশ করে বিক্ষোভে অংশ নেন।

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিকে ঘিরে শনিবার সকাল থেকেই নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও। সতর্ক অবস্থানে আছেন পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব।

রাজশাহীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোবারক পারভেজ জানান, আন্দোলনরতরা সকাল থেকে বিক্ষোভ করলেও পরিস্থিতি এখনও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। তালাইমারিতে অবরোধ করলেও বিভিন্ন যানবাহন পাশের বিকল্প সড়ক ব্যবহার করছে। রাবি ও রুয়েটসহ আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কেউ জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির চেষ্টা করলে পুলিশ তা প্রতিরোধ করবে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জামিরুল ইসলাম বলেন, সাইফুল ইসলাম নামের সিটিএসবির একজন সদস্য আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও কয়েকটি পুলিশ বক্সে হামলা চালানো হয়েছে। তবে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণেই আছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version