সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
বুলবুল হাবিব
রাজশাহী জেলায় প্রাথমিক স্কুলে প্রধান শিক্ষকসহ মোট শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৫১৬টি। প্রধান শিক্ষককের পদ শূন্য থাকায় সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব দিয়ে বিদ্যালয়গুলো পরিচালনা করা হচ্ছে। এর ফলে অফিসের কাজ ও বিদ্যালয়ে পাঠদান দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এছাড়া শিক্ষক স্বল্পতার কারণে বাধাগ্রস্তও হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম।
শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিষয়ের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, অতিরিক্ত ক্লাশের চাপ ও শ্রেণিতে শিক্ষার্থী বেশি হওয়ার কারণে শিক্ষকরা চাইলেও ক্লাসে সবার প্রতি মনোযোগ দিতে পারেন না। ফলে শিক্ষার্থীরাও ভালো শিখতে পারে না। এছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত নগর ও গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তানরাই পড়ালেখা করায় অভিভাবকরাও নজরে রাখতে পারেন না। একদিকে প্রয়োজনের তুলনায় কম শিক্ষক ও অন্যদিকে ক্লাশে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী থাকায় দেখা যায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা কিছুই শিখছে না। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কোনোমতে পাশ করছে। এই জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাসরুম ও শিক্ষক পর্যাপ্ত বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তারা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার দশটি থানায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৪৪টি। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ২৬৬টি। সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ২৫০টি। নগরীর বোয়ালিয়া থানায় অবস্থিত সরকারি ৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষক দুইটি ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ছয়টি, গোদাগাড়ীতে ১৬২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ২৪টি ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ২৫টি, চারঘাটের ৭৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৩২টি ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৫টি, তানোরে ১২৭টির মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য ৪৭টি ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ৩২টি, দুর্গাপুরে ৮১টির মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য ১৬টি ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ৩০টি, পুঠিয়ায় ৮৯টির মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য ২৫টি ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ১৬টি, পবায় ৮১টির মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য ২৪টি ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ৩৪টি, বাগমারায় ২১৬টি বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য ৫২টি ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ৬৮টি, বাঘায় ৭৪টির মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য ২০টি ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ২০টি এবং মোহনপুরে ৮১টি বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য ২৪টি ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ১৪টি।
নগরীর বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালিয়ার সরকারি স্কুলগুলোতে শিক্ষকের সংকট তেমন নেই। তবে শিক্ষার্থীর সংকট রয়েছে। কারণ নগরীতে সরকারি স্কুলের বাইরেও প্রাইমারি পর্যায়ে শিক্ষাপ্রদান করা হয় এমন বেসরকারি স্কুলের সংখ্যা ২৬৬টি। এইজন্য বেশিরভাগ অভিভাবক তাদের সন্তানদের বেসরকারি স্কুলগুলোতে পড়ান।
নগরীর দরগাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুমোদিত শিক্ষকের পদ সংখ্যা ৬ জন। সেখানে শিক্ষক আছেন পাঁচ জন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০৪ জন। ওই বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন শামীমা আক্তার। তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুমোদিত শিক্ষকের পদ সংখ্যা ১১ জন। বর্তমানে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন ১২ জন শিক্ষক। এর সঙ্গে আর একজন শিক্ষক ডেপুটেশনে কর্মরত আছেন। ওই বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০০ জন। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মাসুদুন্নবী বলেন, শিক্ষকের সংকট না থাকলেও রুম সংকট প্রকট। একই রুমে অল্টারনেটিভ করে ক্লাস নিতে হয়।
রাজশাহীর একজন থানা শিক্ষা অফিসার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সহকারী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে গেলে পাঠদানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ প্রধান শিক্ষকের সব দায়িত্ব তখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে পালন করতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে পদোন্নতি ও সরাসরি শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ৬৫ শতাংশ পদোন্নতির জন্য সংরক্ষিত থাকে। বাকি ৩৫ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু ২০১০ সালের পর থেকে আইনগত জটিলতার কারণে সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে থেকে পদোন্নতি দেয়া হয় নি। শুধু সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য ফোন দেওয় ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূর আক্তার জান্নাতুল ফেরদৌসকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেন তিনি।