নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর ছয়টি আসনে চলছে জোর প্রচার-প্রচারণা। পিছিয়ে নেই কোনো প্রার্থী। প্রতিটি আসনে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। একটি আসনে নেই স্বতন্ত্র প্রার্থী। বাকি পাঁচটি আসনে আছে। তারাও মাঠে ছাড় দিতে নারাজ। নির্বাচনের এগিয়ে আসছে রাজশাহীতে বাড়ছে সহিংসতা। প্রার্থীর সমর্থকরা জড়িয়ে যাচ্ছে দ্বন্দ্বে। সংঘর্ষে ঝরছে রক্তও। করছে একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। প্রচারণায়ও হামলার ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, অফিসে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, হাতুড়িপেটা করাও হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদাগারও বাড়ছে। যতদিন যাচ্ছে ততই উত্তেজনা বাড়ছে।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত পর্যন্ত রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় ১৫টির মতো সহিংসতার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাগমারা, র্দুগাপুর, বাঘা ও চারঘাটে নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন নেীকার প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। আবার নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীরা হামলা চালাচ্ছে। নির্বাচনী সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে।
তবে সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী-৪ আসনে। এই আসনে সবশেষ রোববার (২৪ ডিসেম্বর) স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে। বাগমারা উপজেলার দ্বীপপুর ইউনিয়নে হামলায় এনামুলের হকের দুই কর্মী আহত হন। থানায় মামলা হলে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করে।
এছাড়াও বাগমারা নরদাশ বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের কাঁচি প্রর্তীকের নির্বাচনি অফিসে হামলা হয়। ওইদিন রাতে উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ বাজারের গোডাউন মোড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি এনামুলের কাঁচি প্রতীকের নির্বাচনি অফিসে হামলার ঘটনা ঘটে। এর আগে বাগমারার মাড়িয়া ইউনিয়নের যাত্রাগাছি গোবিন্দপুর ইউনিয়নের হাটদামনাশ বাজার, তাহেরপুর পৌরসভার অর্জুনপাড়া ও গণিপুর ইউনিয়নের অচিনঘাট এলাকায় কাঁচি প্রতীকের গাড়ি ও প্রচার মাইক ভাংচুর, পোস্টার কেড়ে নিয়ে পুকুরে ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন এনামুল হক।
নৌকা প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, নৌকা হারানোর পর থেকে এনামুল হক মিথ্যা কথা বলছেন। কোথাও তার সমর্থকদের ওপর হামলা করা হয়নি। বরং নৌকা প্রতীকে তিনবার এমপি হয়ে এখন নৌকার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন, দলীয় নেতাকর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন তারপক্ষে থাকতে।
রোববারের ঘটনার পর সোমবার দুই প্রার্থীকে ডেকেছিলেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম আহমেদ। আর কোনো সহিংসতা ঘটবে না বলে অঙ্গীকার করেছেন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান এমপি এনামুল হক। হাতে হাত রেখে দুজন সুষ্ঠু ভোটেরও প্রতিশ্রুতি দেন।
সবশেষ সোমবার রাতে বাঘার গড়গড়ি ইউনিয়নের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) আবদুস সামাদের (নোঙ্গর) নির্বাচনি অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহী-৫ আসনের দুর্গাপুর উপজেলায় নৌকার তিন কর্মীকে হাতুড়িপেটা করায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্বস্তন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমানের পোস্টার কেড়ে নিয়ে তিন কর্মীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় রাতেই দুর্গাপুর থানায় মামলা হলে নৌকা প্রতীকের তিন কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
রাজশাহী-৬ আসনে আসনের শলুয়া ইউনিয়নের বামনদীঘি বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের কাঁচি প্রতীকের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও একই সময়ে মালেকের মোড় এলাকায় কাঁচি প্রতীকের প্রচার গাড়ি ও মাইক ভাঙচুর করেছে নৌকার কর্মীরা বলে অভিযোগ করেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপাকে (মাহিয়া মাহি) নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন মাহাবুর রহমান মাহাম নামের এক যুবক। তিনি নিজেকে জেলা বঙ্গবন্ধু সৈনিকলীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন। তানোর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশীদ ময়নার অনুসারী বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেন চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা।
তবে রাজশাহী সদর আসন ও রাজশাহী-৩ আসনে কোনো অপ্রীতিকর সংবাদ পাওয়া যায়নি। এই আসন দুটিতে প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজশাহী-৩ আসনের বিএনএম প্রার্থী মতিউর রহমান মন্টু বলেন, রাজশাহী-৩ আসনে নির্বাচনী পরিবেশ খুব সুন্দর আছে। এখানে প্রচারণা চালাতেও কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। আমার প্রতিদ্ব›ীদ্ব প্রার্থী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ আসেন। তার সাথে আমার ভোটযুদ্ধ হবে।
রাজশাহী-২ আসনের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী বলেন, রাজশাহীর সব এলাকায় ঘুরে ঘুরে ভোট প্রার্থনা করছি। তবে কোনো বাধা আসেনি। নির্বাচন পরিবেশ খুব সুন্দর আছে। তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাজশাহী-২ আসনে সর্বপ্রথম আমিই প্রচারণা শুরু করি। প্রথমদিনেই আমার কর্মী-সমর্থকরা পোস্টার মেরেছেন বিভিন্ন এলাকায়। কোর্ট স্টেশন ও হড়গ্রাম এলাকার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। ওই এলাকায় ১৪ দলের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা থাকেন। এছাড়াও ভদ্র্রাতে আমার ফেস্টুনের উপরে অন্য প্রার্থী ফেস্টুন মেরেছে।
রাজশাহী রির্টানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, কিছু কিছু ঘটনায় ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটিও দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছেন। পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত উৎসবমুখর আছে।