মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীতে নিজ দলের নেতার্কমীদেও বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন বিএনপির এক নেতা। তিনি যুবদল ও কৃষকদলের পাঁচ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। গোদাগাড়ী থানায় স্থানীয় এক বিএনপি নেতার মামলায় নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে শুরু হয়েছে তোলপাড়।আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন থানায় দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা বাদী হয়ে এসব মামলা করছেন। রাজশাহীতেও বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এবার ঘটলো ব্যতিক্রম ঘটনা।
গত ৫ আগস্ট গোদাগাড়ী উপজেলা সদরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে স্থানীয় বিএনপি নেতা ও জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল হামিদ বাবলু বাদী হয়ে ২৫ আগস্ট থানায় মামলাটি করেন। মামলার প্রধান আসামি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। মামলায় আসামি হিসেবে মোট ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারনামীয় ৪৫ জনের মধ্যে অন্তত পাঁচজন বিএনপির নেতাকর্মী।
মামলায় বিএনপির নেতারা হলেন, কৃষকদল নেতার মামলায় ২৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে গোগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলামকে। ২৫ নম্বর আসামি হয়েছেন ইউনিয়ন যুবদল নেতা বকুল হোসেন। ১৯ নম্বর আসামি করা হয়েছে ইউনিয়ন যুবদল নেতা আব্দুল বারীকে। মামলায় ২০ নম্বর আসামি হয়েছেন যুবদল নেতা শাহীন ও ৩৯ নম্বর আসামি করা হয়েছে ইউনিয়ন যুবদল নেতা সুমনকে। ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের প্রধান গেইটের সামনে।
দলটির নেতাকর্মীরা এখন এজাহার থেকে দলীয় ৫ নেতাকর্মীর নাম বাদ দিতে পুলিশের ওপর চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু পুলিশ বলছে, মামলা রেকর্ড হয়ে যাওয়ার পর এজাহার সংশোধনের আর কোন সুযোগ নেই। মামলাটির অধিকাংশ ধারা জামিন অযোগ্য। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। বাদী ভুল করে থাকলে বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এজাহারে কারো নাম দিলে তার দায় পুলিশের নয়।
গত ৩০ আগস্ট এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা জানতে পারেন আবদুল হামিদ বাবলু তার মামলায় নিজ দলেরই পাঁচজন নেতাকর্মীকেও আসামি করেছেন। এ নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়। ফলে গত শনিবার গোগ্রাম এলাকায় স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মামলার বাদী বাবলুকে দল থেকে বহিস্কার ও আসামি হওয়া পাঁচ বিএনপি নেতাকর্মীর নাম বাদ দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সামনে শনিবার দুপুরের এই মানববন্ধনে শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে মামলার আসামি গোগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম অভিযোগে বলেন, গত ৩ আগস্ট সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বাদী কৃষকদল নেতা আবদুল হামিদ বাবলুর সঙ্গে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়েছিল। ফলে বাদী এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষে আমাদের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে মামলায়। বাদী মামলা বাণিজ্য করতেই এই কাজটি করেছেন। আমরা দল থেকে তার বহিস্কার দাবি করছি।
নিজের দলের নেতাকর্মীদের মামলায় জড়ানোর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী উপজেলা কৃষকদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুল হামিদ বাবলু বলেন, যারা নিজেদের এখন বিএনপি নেতাকর্মী দাবি করছেন তারা দিনে বিএনপি করে আর রাতে আওয়ামী লীগ করে। তবে তাড়াহুড়া করে এজাহার দিতে গিয়ে হয়তো তাদের নামও মামলার আসামি হিসেবে চলে এসেছে। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে তদন্তে তাদের নাম বাদ দেওয়া যেতে পারে।
গোগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আনসার আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক বজলুর রশিদ অভিযোগে বলেন, কৃষক দল নেতা আবদুল হামিদ বাবলু মামলা বাণিজ্য শুরু করেছেন। গত ২৫ আগস্ট তিনি বাদী হয়ে যে মামলা করেছেন তাতে বিএনপিরই পাঁচজন নেতাকর্মীর নাম দিয়েছেন। এটা ব্যক্তি আক্রোশ থেকে তিনি করেছেন। এর ফলে ছাত্র জনতার ওপর হামলার এসব মামলার বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এই দুই বিএনপি নেতা আরও বলেন, আমরা বাদী আবদুল হামিদ বাবলুকে দল থেকে বহিস্কারসহ তার মামলার আসামি হওয়া পাঁচ বিএনপি নেতাকর্মীর নাম বাদ দেওয়ার জন্য মানববন্ধন করেছি। প্রয়োজনে আরও বড় আন্দোলন করা হবে।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বাবলু ব্যক্তিগত আক্রোশে এমন মামলা করেছেন। এই মামলা করার আগে তিনি উপজেলা বিএনপির সঙ্গে কোন আলোচনা করেননি। এমন বিষয় প্রত্যাশিত না। বিষয়টা নিয়ে আজ আমরা পার্টি অফিসে আলোচনা করেছি। এখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাতে এসেছি। এরপরে আমরা থানায় যাব। বাবলু যে কাজ করেছেন এর জন্য তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গোদাগাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, বাবলুর করা মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এই মামলা থেকে কারও নাম বাদ দেওয়া সম্ভব না। তদন্তে যদি তারা দোষী প্রমাণিত না হন তাহলে নাম বাদ যাবে।