রাজশাহীতে বিএনপি রাজনীতির নয়া মেরুকরণ ।। নগর ও জেলা কমিটি থেকে বাদ পড়লেন মিনু-নাদিম

আপডেট: ডিসেম্বর ২৮, ২০১৬, ১২:০১ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক



দীর্ঘ সাত বছর পর মিজানুর রহমান মিনু ও নাদিম মোস্তফাকে বাদ দিয়ে রাজশাহী মহানগর ও জেলা বিএনপির নতুন কমিটির নাম ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এই দুই শাখার শীর্ষ চারটি পদের তিনটিতে নতুনদের নেতৃত্বে নিয়ে আসা হয়েছে। নেতাকর্মীরা মনে করছেন, এই কমিটির ফলে রাজশাহীতে গুরুত্বহীন হয়ে পড়বেন মিনু ও নাদিম।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাজশাহী নগর ও জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণার তথ্য জানানো হয়। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির নগর শাখায় ২১ ও জেলায় ৩৭ সদস্য রয়েছে।
নগর বিএনপির সভাপতি পদ থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপির উপদেষ্টা ও সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনুকে বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত হওয়া মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জেলায় সাবেক সাংসদ ও জেলা সভাপতি নাদিম মোস্তফাকে বাদ দিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপুকে।
নগর কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক শফিকুল হক মিলনকে। তিনি আগের কমিটিতেও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। জেলায় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সাবেক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুকে।
নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই কমিটির ফলে রাজশাহীতে গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে মিনু ও নাদিম। তবে নেতাকর্মীরা এই নতুন কমিটি নতুন উদ্যমে কাজ করবে বলে জানান। তারা বলেন, মিনু ও নাদিম পদে থাকায় দলের মধ্যে কোনো ধরনের গণতন্ত্র ছিল না। তারা নিজেদের পছন্দের লোক নিয়ে কাজ করতেন। নিজেদের পছন্দমত অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন কমিটিতে কর্মীদের পদায়ন করতেন। এইজন্য আন্দোলনের কর্মসূচিতে এই নেতাদের ভূমিকা ছিল না বললেই চলে। তৃণমূল পর্যায়েও এই নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে তীব্র অসন্তোষ। এছাড়া তারা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের সঙ্গে কোন্দলে লিপ্ত ছিল। এইজন্য মিনু ও বুলবুলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল। দ্বন্দ্ব ছিল নাদিমের সঙ্গেও। নাদিমের তার কমিটির সম্পাদক কামরুল মনিরের সঙ্গে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব ছিল।
দলীয় সূত্র মতে, মিজানুর রহমান মিনুকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০০৯ সালে রাজশাহীর নগর কমিটি গঠিত হয়। এরপর ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত হওয়া মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে নগর যুবদলের আহ্বায়কের পদ থেকে বাদ দিয়ে নগর কমিটিতে সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেইসময় কাউন্সিল ছাড়াই মেয়র বুলবুলকে বাদ দিয়ে যুবদলের নগর কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে কোনো ধরনের গণতন্ত্র মানা হয় নি ও পছন্দের ব্যক্তিদের পদায়ন করা হয়েছেÑএই অভিযোগ তুলে সেইসময় বুলবুলপন্থীদের নেতাকর্মীরা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। তখন থেকে যুবদলের কমিটি স্থগিত রয়েছে। মিনু-বুলবুলের দ্বন্দ্ব তখন থেকে প্রকাশ্যে রূপ নেয়। নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, বুলবুলকে নগর রাজনীতি থেকে বিচ্যুত করতে তাকে সিনিয়র সহসভাপতি করা হয়েছে। এরপর গত ফেব্রুয়ারি মাসে নগরীর চারটি থানা ও ৩৭টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেই কমিটি নিয়েও রয়েছে অভিযোগ। এ কমিটিতেও মিনুর পছন্দের লোকদের পদায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে বুলবুলপন্থীরা।
দলীয় সূত্র মতে, ২০০৯ সালে অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফাকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট কামরুল মনিরকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা বিএনপি গঠিত হয়। কিন্তু কমিটি গঠিত হওয়ার পর পরই ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে দেখা দেয় বিরোধ। যা চরম রূপ নেয় গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কেন্দ্রীয়ভাবে কমিটি পুর্নগঠিত হওয়ার নির্দেশনা আসার পর। জেলার শীর্ষ দুই নেতা কমিটি পুর্নগঠনকে কেন্দ্র করে পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচি পালন করলেও কোনো কমিটি গঠন করা ওই সময় সম্ভব হয়নি।
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনকে ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন ধরেন নি।
জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু বলেন, সবার সম্মতিতে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নাদিম মোস্তফা দীর্ঘদিন কমিটিতে ছিলেন। এছাড়া তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও তাই তাকে রাখেনি কেন্দ্রীয় কমিটি। আর কামরুল মনির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হওয়ায় তাকেও কমিটিতে রাখা হয় নি।
জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা মামুন বলেন, জেলায় ৩১ সদস্যবিশিষ্ট ও নগরে ২১ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বুলবুল

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ