সোমবার, ২০ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৬ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
বহু প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও রাজশাহীতে বিনিয়োগের পালে এখন বইছে সুবাতাস। বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত রাজশাহী অঞ্চলের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক। এতোদিন এখানে ছোট-ছোট কল-কারখানা গড়ে উঠলেও এখন বড় পরিসরে হচ্ছে। ফলে রাজশাহীর অর্থনীতি যেমন চাঙা হচ্ছে, তেমনি কর্মসংস্থান বাড়ছে মানুষের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজশাহীতে বিনিয়োগের জন্য এখনো রয়েছে নানান প্রতিবন্ধকতা। বিশেষ করে দীর্ঘদিনেও মিলছেনা গ্যাস সংযোগ। কিন্তু এ অঞ্চল বিনিয়োগের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় কারখানা স্থাপনে এগিয়ে এসেছে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা। ফলে ধীরে ধীরে গতি পাচ্ছে এ অঞ্চলের অর্থনীতি।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি সূত্র জানায়, রাজশাহীতে এরই মধ্যে ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানি বিনিয়োগ করছে। ভারতীয় টাটা গ্রুপ দেশীয় নিলয় গ্রুপর সঙ্গে যৌথভাবে চালু করেছে মোটরযান তৈরির কারখানা। গত বছরের মার্চে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এ কারখানাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। মিতা কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় রাজশাহী বিসিকের সাত বিঘা জমিতে গড়ে উঠেছে এ কারখানা। বছরে ৪০ হাজার হিউম্যান হলারের বডি তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া কোরিয়াভিত্তিক আরো কয়েকটি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডস্ট্রির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি বলেন, সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি মোটরযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল রাজশাহী ঘুরে গেছেন। রাজশাহীতে অটোকার তৈরির কারখানা স্থাপনে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো। রাজশাহী বিসিক শিল্প এলাকায় ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে ওই তিন প্রতিষ্ঠান। বিএমজি, কেআরডব্লিউ, জিনওয়া কোম্পানি লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাটারিচালিত অটোকার তৈরি করবে।
সেসব অটোকার বাংলাদেশের বাজার ছাড়াও উঠবে ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে। রাজশাহীর বাগমারা আসনের সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের মালিকানাধীন এনা গ্রুপর জমিতে ওই তিন কোম্পানির কারখানা হবে। এছাড়া আরেকটি চিনা কোম্পানি রাজশাহীতে বিনিয়োগের কথা ভাবছে। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনাও চলছে।
এনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি শীর্ষ মোটরযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত বছরের ২৬ মার্চ এনা গ্রুপের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী তারা ৩০ কোটি ডলার ব্যয়ে রাজশাহীতে অটোকার তৈরির কারখানা স্থাপন করবে। কারখানার জন্য কিছু যন্ত্রাংশ কোরিয়া থেকে আসবে এবং কিছু বাংলাদেশে তৈরি হবে। এখানে তৈরি অটোকার ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশে রফতানিতে মংলা বন্দর ব্যবহার করা হবে।
এদিকে নগরীর উপকণ্ঠ দামকুড়ায় ১৫২ কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে তোলা হয়েছে ফিস ফিড কারখানা। এখানে আরো ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের অপেক্ষায়। দেশীয় প্রতিষ্ঠান এসিআই’র সাথে ভারতের গোদরেজ এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছে।
এছাড়া নগরীর সপুরায় নাহার অটো মোবাইল কারখানায় বিনিয়োগ হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। এখন উৎপাদনে এসেছে কারখানাটি। দেশিয় হাশেম গ্রুপ ও আব্দুল মোনেম লিমিটেডসহ আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রাজশাহীতে বৃহৎ শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী। এরই মধ্যে রাজশাহী চেম্বারের সাথে প্রাথমিক আলোচনা সেরে নিয়েছে তারা।
এসব কারখানা পুরোপুরি উৎপাদনে গেলে বহু লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী চেম্বারের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি। তিনি বলেন, কৃষি প্রধান এ অঞ্চল দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় ব্যবসা-বাণিজ্যে পিছিয়ে। অর্থনৈতিকভাবেও অনগ্রসর। তবে অচিরেই এ বৈষম্য কমে আসবে। এখন রাজশাহীতে বিনিয়োগের পালে সুবাতাস বইছে।
এদিকে রাজশাহী বিসিক জানিয়েছে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের কথা মাথায় রেখে শিল্পনগরী সমপ্রসারণ হচ্ছে। এরই একটি প্রস্তাব সংবলিত ডিপিপি একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। ৩০ একরের বদলে ৫০ একর জমির ওপরে ১৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে শিল্পনগরী সম্প্রসারণের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ৩০৮টি নতুন শিল্পপ্লট তৈরি হবে।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় উদ্যোক্তারা এ অঞ্চলে শিল্পকারখানা স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ২০১৩ সালে রাজশাহী নগরীতে গ্যাস সংযোগ চালু হওয়ার পর অনেকেই শিল্প স্থাপনের জন্য জমি কিনেছিলেন। কিন্তু এই খাতে গ্যাস সংযোগ শিল্প-কারখানায় দেয়া হচ্ছে না।
জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও রাজশাহী চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, শুধু গ্যাস সংযোগ মিললেই রাজশাহীতে বিনিয়োগ আরও বাড়বে। এরপরও বিনিয়োগ কম হচ্ছে না। বিনিয়োগ আরও বাড়াতে রাজশাহীবাসীকে সঙ্গে নিয়ে শিল্প-কারখানায় গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়া হবে।