রাজশাহীতে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক কতটি?

আপডেট: জানুয়ারি ২৩, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


সম্প্রতি ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে অপচিকিৎসায় এক শিশু মৃত্যুর ঘটনার পর আবারও অনুমোদনহীন হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এরপরপরই রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিসে যোগাযোগ করে অনুমোদনহীন বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য জানতে চাওয়া হয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো রাজশাহীতে কতটি বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে? অনুমোদনহীন কতটি? অনুমোদিত কতটি? এর কোনো তথ্যই নেই রাজশাহী সিভিল সার্জন দপ্তরে।

আর রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর নগরীর তথ্য দিলেও জেলার তথ্য দিতে পারে নি। নজরদারিসহ সার্বিকভাবেই হ-য-ব-র-ল সিস্টেমে চলছে রাজশাহীর বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যার বিপরীতে জনবল সংকটসহ নানা অজুহাত তুলে ধরছেন কর্তারা।

বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক, হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখার তথ্য মতে, রাজশাহী নগরীতে মোট ১২০ টি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন আছে। এর বাইরে ১৮ টি প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে। এসব কোনো তথ্যই সংরক্ষণে নেই নজরদারির দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান রাজশাহী সিভিল সার্জন দপ্তরে।

রাজশাহী সিভিল সার্জন দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্তা বলছেন, এসব কোনো তথ্য তাদের দপ্তর সংরক্ষণ করে না। এসব তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েব সাইটে আছে। সেখানকার তথ্যই তারা ব্যবহার করেন। গত ১০ থেকে ১২ দিন যাবত ওই ওয়েব সাইট বন্ধ। একারণে তারা তথ্য দিতে পারছেন না। এছাড়া ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে না পারায় অভ্যন্তরীণ অন্য কাজগুলোও করতে পারছেন না।

এদিকে, বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক, হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখার সভাপতি ডা. আব্দুল মান্নানের অভিযোগ, অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের তথ্য শুধু নয়; অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ন্যূনতম নজরদারিও করা হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠান নবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠান মালিকরা কখনো ধর্ণা দিয়ে হাত-পা ধরে কর্তাদের প্রতিষ্ঠানে আনেন। অনেকে অবৈধ পন্থাও অবলম্বন করেন।

ডা. আব্দুল মান্নান বলেন, বেসরকারি এ প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্য সেবায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকার ভ্যাট-ট্যাক্স থেকে সরকার রাজস্ব আহরণ করছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো দেখভাল হয় না। প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনেই আসেন না নজরদারির দায়িত্বে থাকা কর্তা ব্যক্তিরা। অনেক সময় পরিদর্শনে না এসেই নবায়ন করে দেয়া হচ্ছে। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণ হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় যারা সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহীতে অনুমোদন পেলেও অনুমোদনের শর্ত মানছেন না অনেক প্রতিষ্ঠান। যারা রামেক হাসপাতালসহ উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা রোগীদের দালালের মাধ্যমে মিথ্যা আশ্বাসে বাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এসব হাসপাতালে ভুল অস্ত্রপচারসহ নানা ধরনের অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। এর ফলে রোগী মৃত্যুর মুখোমুখি হলে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।

এদিকে, ২০২০ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহা-পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন রাজশাহী বিভাগে ১ হাজার ৪৩৮টি হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন এবং যথাযথ সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সে সময় এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু আদৌ কয়টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিলো তা বড় প্রশ্ন। আর এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য দিতে পারে নি বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর।

রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) আনোয়ারুল কবীর বলেন, ২০২০ সালেও ১ হাজার ৪৩৮টি হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকার কথা না। কারণ রুটিন দায়িত্বে প্রায়শই অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়। মাঝে মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এবারও বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে ডাটাবেজড তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নজরদারির ঘাটতির কথা স্বীকার করে রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. আনোয়ারুল কবীর বলেন, নজরদারির জন্য যে জনবল প্রয়োজন, তা নেই। একারণে নিয়মিত নজরদারি করা সম্ভব হয় না। তবে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। আর অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়।

রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, রাজশাহীতে কোনো অবৈধ বা অনুমোদনহীন হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তথ্য নেই।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ