নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগোষ্ঠী, ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ব্র্যাকের কমিউনিটি ভিত্তিক পর্যটন প্রকল্প ‘অতিথি’। এর অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে দেশের পর্যটনশিল্পে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসা, যেখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষিত হবে সেইসাথে অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে তারা সরাসরি উপকৃত হবেন।
রোববার (৩ নভেম্বর) বরেন্দ্রভূমি রাজশাহীতে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ‘অতিথি’। স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্, ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামারা হাসান আবেদ, ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা ড. জাফর উদ্দীন এবং ‘অতিথি’ প্রকল্পের পরামর্শক মৌটুসী বিশ্বাস।
এ ছাড়াও রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং উপ-গ্রন্থাগারিক মো. আসলাম রেজা এবং রাজশাহী ও ঢাকা থেকে আমন্ত্রিত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
‘অতিথি’ প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে পর্যটনশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে এই খাত থেকে আসা অর্থনৈতিক সুবিধার লভ্যাংশ যেন তাদের কাছে পৌঁছায়, বিশেষত পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠী যেন এই সুবিধা পায় সেটি নিশ্চিত করা। বৈচিত্রময় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে শহুরে প্রজন্মকে শিকড়ের সাথে যুক্ত করা ‘অতিথি’ প্রকল্পের আরেকটি প্রধান লক্ষ্য।
‘অতিথির’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, আমরা যারা ব্র্যাকে কাজ করি তারা সারা দেশে ছুটে বেড়াই এবং আমরা জানি বাংলাদেশের আনাচে কানাচে কত কিছু দেখার আছে। যদি সুন্দরভাবে এগুলো পরিবেশন করা যেতো, তাহলে আমাদের পর্যটনকে নিয়ে ভিন্নভাবে ভাবতে পারতাম। সেই ভাবনা থেকে ‘অতিথি’র জন্ম। রাজশাহী দিয়ে যাত্রাটা শুরু হলো। এর পাশাপাশি এমন অন্য শহরগুলো যেখানে অনেক পর্যটন আকর্ষণ লুকিয়ে আছে, সেগুলোকে আমরা ‘অতিথির’ মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং বিশ্বের সামনে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে চাই, যার ফলে স্থানীয় অধিবাসীরা উপকৃত হবেন।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, বাংলাদেশের পর্যটনের জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। ২০৪০ সালে এই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন শেষ হবে। কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এই খাত থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিতে ব্র্যাকের সঙ্গে একসাথে কাজ করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘অতিথি’র আনুষ্ঠানিক ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয় যেখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সালেহ্ হাসান নকীব, রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী মো. মোস্তাফিজুর রহমান, রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সরকার অসীম কুমার এবং রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়েছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের ব্যান্ড ‘কারসা’ সঙ্গীত পরিবেশন করে। এ সময় রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা এবং নৃত্য পরিবেশন করা হয়। ‘অতিথি’ পর্যটন প্রকল্পের মাধ্যমে রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে হাজার বছরের পুরনো পুরাকীর্তিগুলো ঘুরে দেখা, সাঁওতাল গ্রাম পরিদর্শন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখা এবং স্থানীয় মৃৎশিল্পীদের নান্দনিক কর্মকা- উপভোগ করতে পারবেন।
এছাড়া অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে থাকছে পদ্মার তীরে ভ্রমণ, রেশম কারখানা পরিদর্শন, স্থানীয় সঙ্গীত উপভোগ এবং সুস্বাদু খাবার আস্বাদন। ‘অতিথি’ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে ভিজিট করুন: https://linktr.ee/BeOurOtithi.