নিজস্ব প্রতিবেদক:
মে মাস শুরু হতেই রাজশাহীতে যেন আগুন নেমে এসেছে। বেলা বাড়তেই সূর্যের তীব্রতা অনুভব হচ্ছে, আর দুপুরের আগেই গলতে শুরু করছে রাজপথের পিচ। কয়েকদিনের মৃদু ও মাঝারি তাপপ্রবাহ শেষে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এতে নাকাল হয়ে পড়েছেন মানুষসহ গবাদিপশু এবং পাখপাখালি।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া সহকারী আনোয়ারা খাতুন বলেন, ‘রাজশাহীতে বর্তমানে তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে। বৃষ্টি না হলে এই অবস্থা থেকে মুক্তি নেই। রোববার (১১ মে) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী বিভাগের দু-এক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।’
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, টানা কয়েকদিন ধরে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছিল। গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ ডিগ্রি। আর শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা তীব্র তাপপ্রবাহ।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে সর্বশেষ ৬ মে ৪৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। ওই সময় তাপমাত্রা কমে যায়। এরপর ৭ মে তাপমাত্রা বেড়ে হয় ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৮ মে এই তাপমাত্রা বেড়ে হয় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৯ মে তাপমাত্রা আরও ২ ডিগ্রি বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। শনিবার বেলা ৩টার দিকে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এই প্রখর রোদ ও গরমে দুপুর ১২টার পর রাস্তায় নামা একপ্রকার দুঃসাহসিক কাজ হয়ে উঠেছে। তাই বেলা বাড়তেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। মানুষজন বাইরে বেরোচ্ছেন শুধু জরুরি প্রয়োজনে। সবচেয়ে কষ্টে রয়েছেন রিকশাচালক, দিনমজুর ও কৃষিশ্রমিকেরা। প্রচন্ড রোদের মধ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা, শরীরজুড়ে থাকছে ক্লান্তি আর ঘাম।আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সাধারণত ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। এছাড়া ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর উঠলেই তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
নগরীর সাহেববাজার আরডিএ মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী সুলতান আহমেদ জানান, দুপুর গড়ালেই দোকানে ক্রেতা পাওয়া যায় না। বিক্রি কমে গেছে অনেকটা। মানুষ গরমের হাত থেকে বাঁচতেই ঘরে থাকতে চাইছে। তবে শহরের বিভিন্ন মোড়ে ঠান্ডা শরবত ও আখের রসের দোকানগুলোতে ভিড় বেড়েছে। তীব্র দাবদাহে কিছুটা প্রশান্তি পেতে ঠা-া পানীয়ই এখন ভরসা।
নগরীর উপশহরের বাসিন্দা সাবিয়ার রহমান বলেন, ‘এখন আমাদের সবচেয়ে দরকার একটু বৃষ্টি। কিন্তু আকাশে নেই কোনো মেঘ, নেই বাতাসও। প্রকৃতি যেন থেমে গেছে এই গরমে। এর মধ্যে কিছুক্ষণের জন্যও বিদ্যুৎ চলে গেলে জীবন হয়ে উঠছে অসহনীয়।’
তাপপ্রবাহের ফলে রাস্তা ঘাটে লোকজনের সংখ্যা খুব কম দেখা যাচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা বের হচ্ছেন না মানুষ। বাইরে বের হওয়ার সময় অনেকেই ছাতা নিয়ে বের হচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর, রিকশাচালক ও পথচারীরা। তারা বলছেন, তাপদাহের কারণে সাধারণ মানুষের আনাগোনা কম। তাই ঠিক মতো কাজ পাচ্ছেন না তারা। অন্যদিকে এ গরমে বৃদ্ধ ও শিশুরাও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস জানান, আবহাওয়াজনিত কারণে রোগী বর্হিবিভাগ ও জরুরি বিভাগে আসছেন। তবে যেসব রোগীদের ভর্তি করা প্রয়োজন। সেসব রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। তবে এই গরম থেকে বাঁচতে রাস্তার পাশে ফুটপাতে শরবত ও আখের রস খেয়ে থাকেন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।