নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাসিকের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সাবেক পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারাসহ ৬৪১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলা দুটি মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া ও জেলার দুর্গাপুর থানায় এই মামলা দুটি দায়ের করা হয়েছে। দুর্গাপুর থানার মামলায় সাবেক এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ ২০০ জন আওয়ামীলীগ নেতাকে আসামী করে মামলা দায়ের হয়েছে।
এই মামলা করেন দুর্গাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন উপজেলার চক জয়কৃঞ্চপুর গ্রামের শাহাদত হোসেন। এ ঘটনায় রাতেই তিনজনকে গ্রেফতার করছে জেলা ডিবি ও থানার পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক প্রদ্যুৎ কুমার সরকার (৫০), দুর্গাপুর উপজেলার দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল গফুর (৫২) ও ঝালুকা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ইমরান আলী (৪০)।
দুর্গাপুর থানায় দায়েরকৃত মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহযোগিতাকারীদের হত্যার উদ্দ্যেশ্যে দুর্গাপুর উপজেলা মেডিকেল মোড়ে আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে বোমাবাজি করে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন।
এামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন, সাবেক সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুজ্জামান শরিফ, নজরুল ইসলাম, আবদুল মজিদ সরদার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল মান্নান ফিরোজ, আওয়ামীলীগের সভাপতি আজাহার আলী, সাবেক পৌর মেয়র সাজেদুর রহমান মিঠু, ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সম্রাট, আবুল কালাম আজাদ, মিজানুর রহমান, আকতার আলী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, নওপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক আক্কাছ আলী, কিশমত গণকৈড় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ, পানানগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আদম আলী, দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নজুম, ঝালুকা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আকবর আলী, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম মিঠু, সাধারণ সম্পাদক ছালিমুদ্দিন, পৌরসভা যুবলীগ সভাপতি বেলাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল খান, সাধারণ সম্পাদক রিপনসহ এজাহার নামীয় ৭০ জন ও অজ্ঞাত ১৫০/২০০ জন।
দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এবিএম মাসুদ পারভেজ মাসুদ মামলা এবং গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, হত্যাচেষ্টা ও নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে নামীয় ও অজ্ঞাতনামা ১৫০-২০০ জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। এ ঘটনা থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। আর জেলা আ.লীগের দফতর সম্পাদক প্রদ্যুৎ কুমার সরকার বর্তমানে তিনি রাজশাহী জেলা ডিবি কার্যালয়ের হেফাজতে রয়েছে।
মহানগরীর বোয়ালিয়া থানায় রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ ৪৪১ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মামলায় সাবেক সিটি মেয়র লিটনসহ ১৪১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে নগরের বোয়ালিয়া থানায় এ মামলা করেন দেলোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তার বাড়ি নগরের তেরখাদিয়া মহল্লায়।
এই মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, ১৩ নম্বন ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মোমিন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন, সাবেক যুবলীগ নেতা অশোক কুমার, জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হক দুখু, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহির উদ্দিন সুজাসহ ১৪১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে।
বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওসি জানান, গত ৫ আগস্ট নগরের রাণীবাজারে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
ওসি জানান, মামলার আসামিরা পলাতক আছেন। তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দলের প্রভাবশালী নেতা খায়রুজ্জামান লিটনের নামে রাজশাহীতে এ পর্যন্ত ৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। লিটন এখন আত্মগোপনে আছেন।