নিজস্ব প্রতিবেদক:
আমাদের দেশে সাধারণত ফুলকপি চাষ করা হয় হেমন্ত ও শীতকালে। অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ মাসে দেখা মিলে ফুলকপি ও বাঁধাকপির। কিন্তু এখন চাষ হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন কপি। চাষে খরচ কম হওয়ায় বাড়ছে জনপ্রিয়তাও। রাজশাহী অঞ্চলের বরেন্দ্রভূমিসহ বিভিন্ন এলাকায় এর চাষ হচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন বেশি। ইতোমধ্যে গ্রীষ্মকালীন এই সবজি উৎপাদনের জন্য কৃষকরা বীজ বপনের কাজ শুরু করেছেন। বিশেষ করে জেলার গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলার কৃষকরা বীজ বপন ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
গত বছর রাজশাহী জেলায় কপি চাষ হয়েছিলো ৭১০ হেক্টর জমিতে। খরচের তুলনায় দাম দুই থেকে তিনগুন বেশী পাওয়ায় এই অঞ্চলের কৃষকরা কপির আবাদ বেশী পরিমানে করছেন। এবার জেলায় কপির আবাদ বেড়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নে ফুলবাড়ী, ধামিলা, শেখেরমারি, মধুপুর, গোলাই এলাকায় বেশি গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষ হয়। এই এলাকায় প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে কপি চাষ করা হয়। এছাড়াও মাটিকাটা ইউনিয়নের কপি চাষ হয়।
উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষ করার জন্য বেড তৈরি করে বীজ বপন করছেন। প্রচ- রোদ ও বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সেডের ওপরে বাঁশের ছাউনি তৈরি করা হয়েছে। এই ছাউনির ওপর পলিথিন ও জাল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এই ধরনের সেডকে গ্রীষ্মকালীন কপি চাষের জন্য পলিসেড বলছে কৃষি অফিস।
উপজেলার ধামিলা গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, গেল বছর ১০ কাঠা জমিতে কপি বাঁধাকপি চাষ করেছিলাম। দাম ভালো পাওয়ায় এবার ২ বিঘা জমিতে কপি লাগিয়েছি। আশা করা যায় খরচ বাদে বেশ ভালই লাভ হবে বলে জানান।
গোলাই এলাকার কৃষক মিলন এবার তিনি ১০ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করবেন। এজন্য সেডে বীজ বপন করা হয়েছে। জমিতে কপির চারা লাগানো থেকে ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে কপি উঠতে শুরু করে। বিঘাপ্রতি খরচ হয় সর্বোচ্চ ৪০-৫০ হাজার। এক বিঘা জমিতে ৬ হাজারের মতো কপি লাগানো যায়। মানভেদে একবিঘা কপি দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকায় বিক্রি হয়। এতে করে বিঘা প্রতি তিনি প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম জানান, খুচরা বাজারে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে থেকে ৮০ টাকায়। কয়েক সপ্তাহ আগেও দাম ছিল অনেক বেশি। চলতি মৌসুমে পাঁচ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করা হয়েছে। সেগুলো তুলতে আরও সপ্তাহখানেকের মতো লাগবে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার বলেন, এই কপি চাষের জন্য জুলাইয়ের মাঝামাঝি বীজ বপন করতে হয়। ৬০ থেকে ৬৫ দিন উঠতে সময় লাগে। সেপ্টেম্বর শেষ এবং অক্টোবরের শুরুতে এই সবজি উঠতে শুরু করে। এই সবজি আগাম উঠায় কৃষকরা ভালো দাম পায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, রাজশাহীর জেলায় প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হয়। এর মধ্যে গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলায় গ্রীষ্মকালীয় কপি চাষ করে আসছেন কৃষকরা। এতে করে বেশ লাভবান হচ্ছেন কৃষক। আমরা মাঠ পর্যায়ের কমকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি তারা যেনো চাষীদের সার্বিক সহযোগিতা করে। আশা করা যায় এবারও চাষীরা ভালো দাম পাবেন।