রাজশাহীতে ১ হাজার ৩১৬ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার ২৫টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

আপডেট: জানুয়ারি ২৮, ২০২৩, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


রোববার (২৯ জানুয়ারি) হযরত শাহমখদুমর (রহ.) পন্যভূমি জাতীয় নেতা শহিদ কামরুজ্জামানের মাটি পদ্মা বিধৌত রাজশাহীতে পা দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও অওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহীর আগমন ঘিরে একমাস ধরে নানা প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন চলছে ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠের সাজসজ্জা, মঞ্চ তৈরি। দীর্ঘ ৫ বছর পর রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীকে সাদরে বরণ করতে প্রস্তুত এখন রাজশাহী।

বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে রাজশাহী সাজানো হয়েছে বর্ণিলরূপে। সর্বত্র শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ব্যানার ফেস্টুন। অবশ্য এসব ব্যানারে সরকারের উন্নয়ন চিত্র বেশি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহী জনসভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে সবদিক থেকে সমানে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। টানা একমাস ধরে রাজশাহী নগরী ছাড়াও রাজশাহী বিভাগের সকল জেলা-উপজেলা, গ্রাম ও ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর আগমনী বার্তা পৌছানো হয়েছে। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নেতারা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন জনসভা সফলের লক্ষ্যে। জাতীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, রাজশাহীতে এবারের জনসভা হবে সর্বকালের মহাজনসমুদ্র।

জানা গেছে, রোববার প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে জনসভায় ভাষণ দেয়ার আগে দিনভর ব্যস্ত সময় কাটাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৯ জানুয়ারি রোববার রাজশাহীতে দিনব্যাপী সফরে প্রায় ১ হাজার ৩১৬ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার ২৫টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী আনুমানিক ৩৭৬কোটি ২৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আরো ৬টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন।
সরকারি সূত্র জানায়, বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো হলো: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন প্রায় ৫ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর সিএন্ডবি ক্রসিঙে ম্যুরালটি নির্মাণ করেছে।

এছাড়া সিটি করপোরেশন আরো যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সেগুলো হচ্ছে- শেখ রাসেল শিশু পার্ক, মোহনপুর রেল ক্রসিঙের ওপর ফ্লাইওভার, চার লেনের সড়ক এবং ভদ্রা রেলক্রসিং থেকে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ধীরগতির যানবহনের জন্য একটি পৃথক লেনসহ রোড ডিভাইডার, চার লেনের সড়ক এবং রোড ডিভাইডার। বিলসিমলা রেলক্রসিং থেকে সিটির হাট পর্যন্ত ধীরগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেন এবং সড়ক প্রশস্তকরণ, কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী ক্রসিং এবং কার্পেটিং সড়কের উন্নয়ন, হাই-টেক পার্ক হয়ে রেন্টুর খড়ির আড়ত থেকে ধলুর মোড় পর্যন্ত নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ এবং কার্পেটিং। কোর্ট থেকে শাহারতলী ক্লাব পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ।

রাজশাহী নগরীর সিএন্ডবি ক্রসিং সংলগ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে বড় ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছে।
আরসিসি ‘রাজশাহী সিটিতে সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক’ ২ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকার প্রকল্পের অংশ হিসেবে প্রায় ৫ কোটি ২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে দেশের বৃহত্তম ম্যুরাল নির্মাণ করেছে।

ম্যুরালটির উচ্চতা ৫৮ ফুট এবং ম্যুরালের মূল অংশে ৫০ ফুট উচ্চতা এবং ৪০ ফুট চওড়া বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে।
সীমানা প্রাচীরের উভয় পাশে ৭শো ফুট জায়গায় টেরাকোটার কাজ করা হয়েছে। গ্যালারি এবং ল্যান্ডস্কেপিং সুপার গ্রানাইট দিয়ে সুসজ্জিত। ম্যুরালে নাইট ভিশনসহ সুসজ্জিত বৈদ্যুতিক বাতি রয়েছে।

রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ম্যুরালটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ তাঁর জীবন, কর্ম এবং দেশের স্বাধীনতায় প্রশংসনীয় অবদান ও ত্যাগ সম্পর্কে জানতে অনুপ্রাণিত করে।

বিশেষ করে শিশুদের বিনোদনের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষে রাজশাহী নগরীতে শেখ রাসেল শিশু পার্কের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। আরসিসির উদ্যোগে ছোট বনগ্রাম এলাকায় ২.১৪ একর জমির উপর পার্কটি নির্মাণকরা হয়, যার আনুমানিক ব্যয় প্রায় ৪ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা। সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রায় ১১৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে পুঠিয়া থেকে বাগমারা পর্যন্ত একটি মহাসড়ক নির্মাণ করেছে। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) প্রায় ১০ কোটি ২১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে প্রধান কার্যালয়ের ষষ্ঠ তলা থেকে দশম তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করেছে। প্রায় ২০ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সদর দপ্তর ভবন নির্মাণ করেছে। লক্ষ্মীপুর এলাকায় প্রায় ১৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। মোহনপুর উপজেলায় ২২ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ২২ কোটি ৯০ লক্ষ টাকায় রাজশাহী শিশু হাসপাতালও নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ১২ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রাজশাহীতে একটি বহুতল সমাজসেবা ভবন নির্মিত হয়েছে। রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে প্রায় ৫ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ছয় তলার ওপর দুই তলা বিশিষ্ট নারী হোস্টেল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। চারঘাট উপজেলায় ১৭ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাঁচতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। রাজশাহী সিভিল সার্জনের অফিস নির্মাণ করা হয়েছে ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মার ভাঙ্গন থেকে বাম তীর রক্ষায় ৬৯৪ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) গ্রামীণ সংযোগ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৪৩ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে দুটি সড়ক নির্মাণ করছে। রাজশাহী পিটিআইতে প্রায় ৮ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগরীতে প্রায় ২ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন।

অন্যদিকে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ২৪ কোটি টাকায় তথ্য কমপ্লেক্স ভবন, ৮ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা আঞ্চলিক জনপ্রশাসন অফিস ভবন, ৬২ কোটি টাকায় শহিদ জননী জাহানারা ইমাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান বালক উচ্চ বিদ্যালয়। ১৬২ কোটি টাকায় বিকেএসপি’র আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী ওয়াসা ভবন নির্মাণ প্রকল্প।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ