নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর কয়েকটি ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। এই ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের চাহিদা মতো টাকা দিতে পারছে না। আবার টাকা না পেয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাকবিতন্ডাতেও জড়াচ্ছেন গ্রাহকরা। কোনো কোনো ব্যাংক ২০ হাজার টাকার বেশি চেক নগদ উত্তোলনের ক্ষেত্রে গ্রহণ করছে না। এটিএম বুথগুলোতেও চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না নগদ টাকা। ফলে গ্রাহকদের ভোগান্তি বেড়েছে।
ভালো ব্যাংকগুলোতে এক হিসাব থেকে অন্য হিসাবে বা এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না। তবে দুর্বল ব্যাংকগুলো তারল্য সংকট থাকায় এ সমস্যা প্রকট হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রাজশাহী নগরীর বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শাখা ও করপোরেট শাখায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। নগরীর সাহেববাজার এলাকার একটি ব্যাংকে গিয়ে দেখা যায়, গ্রাহকদের চাহিদা মতো টাকা দিতে পারছে না। এক ব্যবসায়ী জরুরী প্রয়োজনে ৫০ হাজার টাকা তুলতে এসেছেন। কিন্তু ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন। তিনি বলেন, আমার খুব প্রয়োজন ছিল ৫০ হাজার টাকার। কিন্তু ব্যাংক ২০ হাজার টাকা দিতে পেরেছে। বাকি ৩০ হাজার টাকা কয়েকদিন পর নিতে বলেছে। এখন ধার করে কারও কাছ থেকে নিতে হবে।
জানা গেছে, আগস্টের শুরু থেকেই ব্যাংকে টাকার সংকট প্রকট হয়। ৫ আগস্ট সরকারের পতন হয়। এর আগে-পরে বেশ কয়েকদিন আন্দোলন ও আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যার কারণে নগদ টাকা স্থানান্তর করা যায়নি। ফলে সংকট আরও বাড়ে। সরকার পতনের আগে ও পরে ব্যাংক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়ে যায়। কিছু গ্রাহক ব্যাংক থেকে মাত্রাতিরিক্ত নগদ টাকা তুলে নিয়ে যান।
নগদ টাকার এই সংকট বেশি দেখা দিয়েছে মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে ১১ ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে সেগুলোতে। এই ব্যাংকগুলো ইসলামী ধারার ব্যাংক হওয়ায় সংকটটি আরও বেশি দেখা দিয়েছে। কারণ ব্যাংকগুলো অন্য সবল ব্যাংকের সঙ্গে কলমানিতে যেতে পারছে না। এ অবস্থায় সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো নিজস্ব পন্থায় ঘুরে দাঁড়ানোর বা সংকট দূর করার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন পন্থায় ঋণ আদায় বৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছে। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ বা নতুন ঋণ দেওয়া কমিয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে ডিপোজিট বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে ব্যাংকে নগদ টাকা কমতে শুরু করেছে। গ্রাহকরা যে টাকা তুলতে চাচ্ছেন তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জুলাই মাসে অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। এরপর থেকে টাকার সংকট দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে সংকটে থাকা এক ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়েছে এখন, সেটি কেন হয়েছে তা সবারই জানা আছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বর্তমানে তারল্য সংকট এতটাই প্রকট হয়েছে যে আমরা নিজেরাও নিজেদের বেতনের টাকাও তুলতে পারছি না। গ্রাহকদের টাকা তো দেওয়াই যাচ্ছে না। তারল্য সংকট দূর করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে অর্থ দিয়েছে তা চাহিদার তুলানায় খুবই কম। দেখা যাচ্ছে আমাদের ব্যাংক এখন দরকার ২ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা, কিন্তু আমরা তারল্য সাপোর্ট পেয়েছি মাত্র ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মতো সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো এখন নিজ উদ্যোগে তারল্য সংকট দূর করতে এবং চলমান সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এ জন্য আমরা নানা কৌশলে ঋণ আদায় বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এ ক্ষেত্রে যারা ঋণখেলাপি তাদের বাড়ির সামনে গিয়ে ব্যানার নিয়ে দাঁড়ানোর পরিকল্পনাও করছি আমরা।