মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
রাজশাহীর জেলার গোদাগাড়ী উপজেলাসহ এই অঞ্চলের বহু কৃষক বিকল্প শস্য হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করে গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করছে।
তারা কদমশোহার, বিজয়নগর, কাদিপুর ও আমানতপুর এলাকার প্রায় ৩০ ডেসিমেল জমিতে গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) এর দ্বিতীয় শস্য বহুমুখী করণ প্রকল্পের আওতায় কৃষদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ করছে।
কাদিপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘‘আমি গ্লাডিওলাস, গোলাপ ও রজনীগন্ধা ফুল চাষ করে দারিদ্র্যতা থেকে পরিত্রান পেয়েছি।’’
ফুল চাষ ও বিপণন প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, তার সাফল্য এসেছে মূলত গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করে।
এ বছর তিনি এক বিঘা জমিতে ২০ হাজার টাকা খরচ করে ফুল চাষ করেছেন। তার বিক্রয় লব্ধ অর্থ এক লাখ ৫০ হাজারের ও বেশি হবে বলে তিনি আশা করছেন।
তিনি বলেন, আগামী বছরে তিনি গ্লাডিওলাসের পাশাপাশি অন্যান্য ফুলেরও চাষ করবেন।
বিজয়নগরের অন্য আরেকজন ফুল চাষী শফিকুল ইসলাম পাঁচ ডেসিমেল জমিতে ফুল চাষ করে ২০ হাজার টাকা লাভ করেছেন বলে জানান।
যদিও ক্ষুদ্র পরিসরে শুস্ক এলাকায় শস্য বহুমুখীকরণে নতুন মাত্রা শুরু করেছে তবুও ফুল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করবে। তিনি বলেন, প্রচলিত ফসল চাষে ঝুঁকি থাকলেও ফুল চাষ ঝুঁকিমুক্ত।
ডিএই-এর উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি ফুলের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে দেশে ফুলের বড় বাজার রয়েছে। ‘‘এসব অঞ্চলসহ উপযুক্ত স্থানে বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষের মাধ্যমে বাজার রক্ষা ও বাজার বৃদ্ধি করা যেতে পারে।’’
ফুল চাষীরা বলেন, গ্লাডিওলাস স্টিক সাদা, লাল, হলুদ, গোলাপী, বেগুনি, নীল ও লিপস্টিক রংয়ের মত বিভিন্ন রংয়ের হয়। কৃষকরা বলেন, ফুল চাষ করার ৭০ দিনের মধ্যে তোলার উপযোগী হয় এবং সারা বছর ধরে ফুল বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকে।
ফুল ব্যবসায়ী ও কৃষিবিদগণ ফুলের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ফুলের চাহিদা মেটাতে ফুল চাষ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি ও গাছপালার পরিবর্তনশীলতার কারণে এসব অঞ্চলে শোভাবর্ধক উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক চাষাবাদের মাধ্যমে রফতানি করণে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন বলেন রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স আ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি আবু বক্কর আলী ।
তিনি বলেন, ফুলকে রফতানিমুখী শিল্পে পরিণত করতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র দাশ বলেন, ফুল প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর উপহার এবং সব বয়সের মানুষই ফুল ভালবাসে। তাই কৃষকদের ফুল চাষে উৎসাহিত করতে হবে। এখানে ফুল রিসোর্স কেন্দ্র থাকা প্রয়োজন যেখান থেকে কৃষকেরা সহজে ফুল সংগ্রহ ও বিক্রয় করতে পারে।
এদিকে ফুল ব্যবসায়ীরা সারা দেশ থেকে ফুল সংগ্রহ করে সংরক্ষনের জন্য নগরীতে ফুল স্টোরেজ সুবিধা দাবি করেন। তারা বলেন, এই ধরনের সুবিধা থাকলে ফুল চাষীরা উপকৃত হবেন এবং ফুলভিত্তিক শিল্পের সূত্রপাত হবে।-বাসস