রাজশাহী কলেজে দেশের প্রথম শহীদ মিনার স্বীকৃতির অপেক্ষার প্রহর আর কত?

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪, ১০:৪৫ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:মায়ের ভাষার জন্য রাজপথে নেমেছে যুবারা। রক্ত ঝরেছে। তখনও উত্তপ্ত সারাদেশ। সে উত্তপ্ত পরিবেশের মধ্যেই রাতের আঁধারে পাকিস্তানি জান্তার রক্তচক্ষু মাড়িয়ে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী কলেজের মুসলিম হোস্টেলে ইট-সুরকি ও কাঁদা-মাটি দিয়ে তৈরি হয় শহিদ মিনার। ভাষা সৈনিকদের দাবি, এটাই দেশের প্রথম শহীদ মিনার। যার স্বপক্ষে প্রমাণাদিও সংরক্ষিত আছে। কিন্তু আজও এর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলে নি। যা নিয়ে বরাবরের মতোই উষ্ণা প্রকাশ করেছেন রাজশাহীর ভাষা সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সংশ্লিষ্টরা।
ভাষা সৈনিকদের ভাষ্যমতে, এই শহিদ মিনারের স্থায়িত্ব হয়েছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টা। রাতভর নির্মাণের পরদিন সকালেই শাসকগোষ্ঠীর জান্তা বাহিনী পুলিশ সে শহিদ মিনার গুঁড়িয়ে দেয়।

ভাষাসৈনিকরা জানান, রাজশাহী কলেজের মুসলিম হোস্টেলে ইট-সুরকি ও কাঁদা-মাটি দিয়ে শহিদ মিনারটি দেশের প্রথম। এরপর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক শহিদ মিনার গড়ে উঠলেও প্রথম এই শহিদ মিনারটি ইতিহাসে উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি উঠলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয় নি। অপেক্ষার প্রহরও শেষ হয় নি।

জানা যায়, ভাষা আন্দোলনে রাজশাহীতে সক্রিয় নেতৃত্ব দিয়েছেন ভাষা সৈনিক সাঈদ উদ্দিন আহমদ। ৮৪ বছর বয়সে ২০১৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মারা যান আক্ষেপ নিয়েই। পরের বছরের ১৯ জুলাই ৭৭ বছর বয়সে ভাষাসৈনিক আবদুর রাজ্জাকও শেষনিশ^াস ত্যাগ করেন। ভাষা আন্দোলনের সময় তাদের অন্যতম আরও একজন রাজশাহীর ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি। বয়সের ভারে তিনিও ন্যুব্জ ও অসুস্থ। তার কণ্ঠেও স্বীকৃতি না মেলার আক্ষেপ।

তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জানতে পারি ঢাকায় ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতদের ওপর পুলিশ গুলি চালিয়ে কয়েকজনকে হত্যা করেছে। খবর শুনেই ছাত্ররা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাৎক্ষণিককভাবে রাজশাহী কলেজ থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। সন্ধ্যায় কলেজে ছাত্ররা জরুরি সভায় মিলিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকায় মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের স্মৃতি রক্ষার জন্য রাজশাহী কলেজে একটি শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার। সে রাতেই আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা বিভিন্ন স্থান থেকে ইট সংগ্রহ করে ইট ও কাঁদা-মাটি দিয়ে শহিদ মিনার নির্মাণ করে নাম দেয়া হয় ‘শহিদ ম্মৃতিস্তম্ভ’।

রাজশাহী স্মৃতিস্তম্ভের গায়ে লিখে দেয়া হয় ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’ এই কাজে কলেজের কয়েকজন কর্মচারীও সহায়তা করেন। স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শেষে ছাত্ররা তার ছবি তুলেও রেখেছিলেন। আক্ষেপ ভরা কণ্ঠে আবারও এই শহিদ মিনারের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি।

রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল খালেক বলেন, শহিদ মিনারটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আমরা সরব রয়েছি। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এ শহিদ মিনারটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।
এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. হবিবুর রহমান বলেন, শহীদ মিনারটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না মেলার বিষয়টি আমি মনে করি আমাদের রাজশাহীবাসীর ব্যর্থতা। এই শহিদ মিনারটি কেন্দ্রের (ঢাকা) বাইরে হওয়ায় স্বীকৃতি না পাওয়ার অন্যতম একটি কারণ। শহিদ মিনারটি ঢাকায় হলে দেখা যেত যে বিষয়টি নিয়ে একটি কমিটি গঠন হতো। এটির সঠিকতা যাচাই করা হতো। আমরা অযৌক্তিক দাবি করছি না। এটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হোক, এটা আমাদের প্রাণের দাবি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ