নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর ঢাকায় চালানো সহিংসতায় রাজশাহীতে থেকে বেশ কিছু জঙ্গি অংশ নিয়েছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র তারা নাশকতা চালিয়েছে বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের প্রতি শুক্রবার থানায় হাজিরা দেওয়ার কথা থাকলেও দুই সপ্তাহে অনেকে থানায় আসেননি। আবারও অনেকে ঢাকা থেকে ফেরার পথে গ্রেফতারও হয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা ঢাকা ও নরসিংদীতে অংশ নিতে পারেন। কোটা আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে তারা সহিংসতাও চালিয়েছে। নরসিংদী কারাগার থেকে কৌশলে জঙ্গিদের বের করে এনেছে বলে ধারণা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ফেরার বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত জঙ্গিরাও সহিংসতার সময় এলাকায় ছিলেন না। এসব বিষয়ে চলছে তদন্ত।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা এক সময়ে ছিল জঙ্গিদের আতুঁর ঘর। এখানকার থানাতে তালিকাভুক্ত ৪২ জন জঙ্গি সদস্য আছে। প্রতি শুক্রবার থানায় তাদের হাজিরা দিতে যেতে হয়। এদের মধ্যে ৪০ জনের বাড়ি বাগমারা উপজেলায়। বাকি দু’জন নওগাঁ জেলার বাসিন্দা। গেল দুই শুক্রবার বেশিরভাগ জঙ্গি সদস্য থানায় হাজিরা দিতে যাননি। তারা কোথায় আছেন তা বলতে পারছে না পুলিশ।
বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, ৪২ জন জঙ্গির মধ্যে সাত থেকে আটজন হাজিরা দিতে এসেছিল। বাকিরা কেউ আসেনি। যারা আসেনি তাদের বিষয়ে খোঁজখবর চলছে। তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথেও কথাবার্তা হচ্ছে।
রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন থানায় ১১১ জন তালিকাভুক্ত জঙ্গি আছেন। এর মধ্যে জেএমবির ৮৬ জন, হিযবুত তাহরীরের ১৫ জন, আনসার আল ইসলামের ৮ জন, শাহাদৎ আল হিকমার ১ জন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ১ জন। তারা প্রতি শুক্রবার মতিহার, বোয়ালিয়া, রাজপাড়া, চন্দ্রিমা, বেলপুকুর ও পবা থানায় নিয়মিত হাজিরা দিয়ে থাকেন।
প্রতি শুক্রবার বিকেলে বেলপুকুর থানায় হাজিরা দেন ৩৪ জন জঙ্গি। এদের মধ্যে তিন জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন। ৩১ জনের মামলা বিচারাধীন। তারাও জামিনে আছেন। শুক্রবার সবাই থানায় হাজিরা দেননি বলে জানিয়েছেন বেলপুকুর থানার ওসি মামুনুর রশীদ। তবে কতজন হাজিরা দিতে আসেননি তা বলতে চাননি ওসি। তিনি বলেন তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জামিরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা থেকে ফেরার সময় বেশ কিছু জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজশাহীর জঙ্গিরা ঢাকায় সহিংসতা চালাতে গিয়েছিল এমন তথ্য আমাদের কাছে আছে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা কেন হাজিরা দেননি, কোথায় গিয়েছিলেন, কী করেছেন, কে কোন সংগঠনের সদস্য সেসব নিয়ে এখন তদন্ত চলছে।
পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক বিজয় বসাক বলেন, আমরা বিভিন্ন থানা থেকে তথ্য পেয়েছি, কোটা আন্দোলন চলার সময় আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিরা থানায় তাদের নিয়মিত হাজিরা দেয়নি। তারা রাজধানীতে সহিংসতা চালাতে গিয়েছিলেন বলেও খবর পাচ্ছি। এ বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। আমরা সবকিছু তদন্ত করে দেখছি।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ভর করে রাজধানীতে ব্যাপক সহিংসতা ও জ্বালাও-পোড়াও, তা-ব চালায় জামায়াত-শিবির এবং জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। গত ১৯ ও ২০ জুলাইয়ের নাশকতায় জঙ্গি সংগঠন জেএমবির রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁর অন্তত ১৫০ সদস্য অংশ নেয়। ঢাকা ও তার আশেপাশের জেলাগুলো বিচ্ছিন্ন করতে সুপরিকল্পিতভাবে আগেই তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়। কারফিউ শিথিল হলে ঢাকা থেকে ফেরার পথে অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন।
র্যাব-৫ এর রাজশাহীর অধিনায়ক ফিরোজ কবির বলেন, কোনো নাশকতা ঘটানোর উদ্দেশ্যে রাজশাহীর জঙ্গিরা ঢাকা কিংবা এর আশেপাশে গিয়েছেন কি না তা খুব সহজেই আমরা বের করতে পারব। ঠিক নাশকতার আগে কারা গিয়েছেন, আন্দোলনের দিনগুলোতে তারা কোথায় কোথায় অবস্থান করছিলেন এবং কবে ফেরত এসেছেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে যাদের নাম পাওয়া যাবে তাদের আবার আইনের আওতায় আনা হবে।