রাজশাহী পাটকল ফান্ডে আটকে শ্রমিক-কর্মচারীদের ৪২ কোটি টাকা || পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কষ্টে জীবনযাপন

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৭, ১২:৩৯ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক


শ্রমিক-কর্মচারীদের ৪২ কোটি টাকা আটকে আছে রাজশাহী পাটকলের ফান্ডে। এ টাকা ইতোমধ্যে বিভিন্ন খাতে খরচ করেছে ফেলেছে পাটকল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে প্রভিডেন্ট ফান্ডের (টিএফ) ২৭ এবং গ্রাচুয়িটির ১৫ কোটি টাকা। শ্রমিকরা তাদের এ টাকা দীর্ঘদিন থেকে চাইলেও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। ফলে দুর্দশায় জীবন কাটছে শ্রমিকদের। নিজেদের পাওনা ফেরত পেতে ৬০ জন শ্রমিক-কর্মচারী উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন। মামলাটি চলমান। অর্থাভাবে মামলারও তদবির নেই।
পাটকল শ্রমিকরা জানান, ১৯৮৮ সালে শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রথম পাটকলের হিসাবে চলে যায় পিএফ ফান্ডের অর্থ। ওই বছর বন্যাদুর্গতের সহায়তার জন্য ৮৮ লাখ টাকা ধার নেয় মিল কর্তৃপক্ষ। সেই টাকা এখন পর্যন্ত ফেরত দেয়া হয়নি পিএফ ফান্ডে। বকেয়া পড়েছে সুদও। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা করে এ খাতের টাকা চলে যাচ্ছে পাটকলের হিসাবে। সব মিলিয়ে প্রভিডেন্ট ফান্ডের প্রায় ২৭ কোটি টাকা আছে পাটকলের ফান্ডে। একইভাবে আটকে রয়েছে গ্রাচুয়িটির ১৫ কোটি টাকা।
দীর্ঘদিন রাজশাহী পাটকলে হিসাব কষেছেন আবদুল জব্বার। মজুরি শাখার উচ্চমান সহকারী ছিলেন তিনি। অবসরে যান ২০০৬ সালের জুলাইয়ে। মিল কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রাচুইটি বাবদ তার পাওনা ১১ লাখ টাকা। বারবার ধরনা দিয়েও পাচ্ছেন না ওই টাকা। কবে তা পাবেন, তাও কেউই বলতে পারছেন না। ফলে বড় অনিশ্চয়তায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।
এ পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারী মিলে ৩৫০ জনের মতো অবসরে গেছেন। এর মধ্যে অনেকেই অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারাও গেছেন। পাটকলের সমাপনী বিভাগের সাহায্যকারী মোজাম্মেল হক বলেন, দুইমাস মাস আগে আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) থেকে সহায়তা চেয়েছিলাম চেহলাম আয়োজনের জন্য। কিন্তু তা পাইনি। ফলে ওই আয়োজনও করা হয়নি।
অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে মিলের মোটা তাঁত বিভাগের কর্মী শওকত আলীর। দীর্ঘদিন থেকে তার মেরুদ-ের সমস্যা। চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক দেবাশীষ রায়ের কাছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু অর্থাভাবে হচ্ছে না সেই চিকিৎসা। তিনিও পিএফের অর্থ সহায়তা চেয়ে পান নি।
এ বিষয়ে রাজশাহী পাটকলের কালেকটিভ বার্গেনিং এজেন্ট (সিবিএ) সভাপতি জিল্লুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্রাচুয়িটি নিয়ে জটিলতা। এর ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। বড়ই অসহায়ত্বের মধ্যে জীবনযাপন করছেন তারা। বিষয়টির সমস্যা নিরসনে পাটকল কর্তৃপক্ষ উদাসীন। পিএফ ব্যবস্থাপনায় একটি কমিটি রয়েছে। ওই কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক পদাধিকারবলে পাটকলের প্রকল্প পরিচালক এবং জিএম (হিসাব ও অর্থ)। ওই কমিটিতে তিনজন শ্রমিকও রয়েছেন। কিন্তু কমিটির কার্যকরি ভূমিকা নেই। কমিটির দুই কর্মকর্তা পাটকলের শীর্ষ ব্যক্তি হওয়ায় শ্রমিকরা তাদের সামনে কোনো কথা বলতে পারেন না। এ সুযোগেই পিএফ থেকে টাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে পাটকল খাতে। টাকা পেতে এরই মধ্যে সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে পাঁচশ জনের মতো শ্রমিক আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু অর্থ না থাকায় কাউকে দেয়া যায়নি।
এ বিষয়ে পাটকলের প্রকল্প প্রধান প্রকৌশলী জিয়াউল হক জানান, দীর্ঘদিন পিএফের ওই অর্থ সুদসহ পুঞ্জীভূত হয়েছে। ফান্ড না থাকায় তা ফিরিয়ে দেয়া যায়নি। একই ঘটনা ঘটেছে গ্রাচুয়িটির ক্ষেত্রেও। সর্বশেষ ২০১০-১১ অর্থবছরে এ ফান্ডের অর্থ পেয়েছেন শ্রমিকরা। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে পাবেন। তবে কবে নাগাদ তা পাবেন, এটি নিশ্চিত করে জানাতে পারেন নি তিনি।