রাজশাহী বিভাগে ৯ লাখ কিশোরীকে দেয়া হবে এইচপিভি টিকা

আপডেট: অক্টোবর ১৮, ২০২৪, ১০:৫২ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে রাজশাহী বিভাগের প্রায় ৯ লাখ কিশোরীকে হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়া হবে। বিভাগের আটটি জেলা ও একটি সিটি করপোরেশনে আগামী ২৪ অক্টোবর থেকে শুরু হবে। চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত। ইতোমধ্যে এই টিকা দেয়ার সব প্রস্তুতি শেষ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগে ৯ লাখ ১৭৪ জন কিশোরীকে এই টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা আছে বগুড়া জেলায়। এই জেলায় ১ লাখ ৬০ ৮৮৮ জন কিশোরীকে দেওয়া হবে টিকা। এছাড়াও সিরাজগঞ্জ জেলায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭৪ জন, পাবনা জেলায় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৮০ জন, নওগাঁ জেলায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৪৬ জন, রাজশাহী জেলায় ১ লাখ ৪৮৮ জন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ২৩ হাজার ৭০১ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৮৯ হাজার ৭৭৭ জন, নাটোর জেলায় ৭৭ হাজার ৮৫ জন ও জয়পুরহাট জেলায় ৩৯ হাজার ৩৮ জন কিশোরীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

স্কুলের পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং স্কুলের বাইরে থাকা ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীরা এ কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে। আগামী বছর থেকে সরকারিভাবে এ টিকা শুধু পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীরা পাবে। আর স্কুলের বাইরে থাকা সুবিধাবঞ্চিত কিশোরী বা স্কুল থেকে ঝরে পড়া কিশোরীদের মধ্যে ১০ বছর বয়সীরা পাবে এ টিকা।
টিকা নেওয়ার জন্য https://vaxepi.gov.bd/registration ওয়েবসাইটে গিয়ে ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। তবে যাদের অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ নেই, তাদেরও বিশেষভাবে তালিকাভুক্ত করে টিকা দেওয়া হবে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) হালনাগাদ সুপারিশে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে এক ডোজ টিকাই কার্যকর বলে জানানো হয়েছে। এ ক্যানসার প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের ৯০ শতাংশকে টিকা, ৩৫ ও ৪৫ বছর বয়সে অন্তত দুবার স্ক্রিনিং বা পরীক্ষা এবং ৯০ শতাংশকে চিকিৎসার আওতায় আনার লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যানসার গবেষণাবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইএআরসির সবশেষ ২০২০ সালের গ্লোবোক্যান প্রতিবেদন অনুসারে, জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্তের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। দেশে বছরে নতুন করে জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন ৮ হাজার ২৬৮ জন ও মারা যান ৪ হাজার ৯৭১ জন। দেশে নারীরা যত ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হচ্ছে জরায়ুমুখ ক্যানসার।

রাজশাহী ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবা খাতুন বলেন, অল্প বয়সে বিয়ে, বেশি সন্তান জন্ম দেওয়া, ঘন ঘন গর্ভধারণ, একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ানো স্বামীদের কারণেও জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে, ঘন সাদা স্রাব, অতিরিক্ত রক্তস্রাব ও অনিয়মিত রক্তস্রাব। এইচপিভি টিকা নিরাপদ এবং এ টিকার মাধ্যমে ভবিষ্যতে জরায়ুমুখ ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে বলে প্রমাণিত।

স্বাস্থ্যর রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবীর বলেন, আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া প্রায় শেষ। যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তার চেয়ে কমবেশি হতে। তবে এই লক্ষ্যপূরণ করার চেষ্টা থাকবে। প্রতিটি স্কুল ও মাদ্রাসায় প্রচার চালানো হয়েছে এছাড়াও গ্রামাঞ্চলে চালানো হয়েছে। যারা স্কুলের বাইরে আছে তাদেরও এই ক্যাম্পাইনে অন্তর্ভূক্ত করা হবে। এজন্য প্রতিটি মসজিদ ও মন্দিরে প্রচার চালানো হচ্ছে।

ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, আজকের কিশোরী আগামী দিনের মা। তাদের সুস্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য সুরক্ষা। নারীদের জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বাংলাদেশ সরকার সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে এইচপিভি টিকা সংযোজন করেছে। সারা দেশে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধী এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রম একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
হুমায়ূন কবীর বলেন, ক্যানসার প্রতিরোধে শিক্ষক, অভিভাবক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। এ কার্যক্রমকে বাস্তবায়িত করতে সকলকে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ইতোমধ্যে এই টিকার ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে।