রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: হলে হলে ছাত্রলীগের রাজত্ব, নিরব প্রশাসন! * হলে গত ৩ মাসে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ৭ অভিযোগ * ১০ বছর ধরে অকার্যকর বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি

আপডেট: মার্চ ২৯, ২০২৩, ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ

রাবি প্রতিবেদক:


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রলীগের সিট দখল, হুমকিধামকি ও মারধরের ঘটনায় ত্রাসে পরিণত হয়েছে। গত তিন মাসে হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এমন সাতটি অভিযোগ ওঠেছে। বিগত সময়েও এমন অনেক অভিযোগের তদন্ত হয়েছে কিন্তু কার্যকরী কোন পদক্ষেপ দেখা যায় নি। ফলে এসব তদন্তের নামে প্রশাসনের কেবল কালক্ষেপণ বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে এসব কর্মকা-ের মূলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির অকার্যকারিতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, হলে সিট কেন্দ্রিক বিশৃঙ্খলার বিষয়ে প্রশাসন অবগত আছে। এসব বিষয়ে আমরা একাধিকবার আলোচনাও করেছি। আমরা এই বিষয়ে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করছি। তাছাড়া প্রশাসন শিক্ষার্থী নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন। খুব শীঘ্রই শৃঙ্খলা কমিটি পুনর্গঠন করা হবে এবং এটার কার্যক্রম শুরু করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সিট দখল ও মারধরের সাতটি অভিযোগ ওঠেছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী হলে সিট দখল নিতে শিরিব তকমা দিয়ে কৃষ্ণ রায়কে মারধরের ঘটনা বৃহৎ আকার ধারণ করে। ফলে ক্যাম্পাসে প্রতীকী অনশন ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা হলে ছাত্রলীগের নির্যাতন বন্ধের দাবি জানান। এ ঘটনায় হলে তদন্ত সাপেক্ষে আনীত অভিযোগের সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি। ফলে অভিযুক্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমানের স্থায়ী ছাত্রত্ব বাতিলের সুপারিশসহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি।

গত ২০ জানুয়ারি শাহ মখদুম হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি অপূর্বের বিরুদ্ধে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীকে হুমকি দিয়ে টাকা ছিনিয়ে নেয়া, ৪ মার্চ বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জেমসের বিরুদ্ধে সিট দখল, ৬ মার্চ শহীদ জিয়াউর রহমান হলে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে সিট দখল ও মানসিক নির্যাতন, ১৭ মার্চ শেরে বাংলা হলে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ না নেয়ায় এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগকর্মীদের মারধর, ২২ মার্চ মাদার বখ্স হলে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত রায়ের বিরুদ্ধে সিট দখল ও শিক্ষার্থীকে হুমকিধামকি, গত ২৬ মার্চ রাতে শহীদ হবিবুর রহমান হলে শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক মনিরুল ইসলাম স্বপনের বিরুদ্ধে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ ওঠে। এভাবে গত ২ বছরে প্রায় শতাধিক অভিযোগ রয়েছে। যারমধ্যে অন্তত অর্ধশত অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। কিন্তু তদন্ত পরবর্তী কোনো ব্যবস্থা হয় নি।

এই ব্যাপারে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক ড. সায়েদা নুসরাত জাহান বলেন, হলে এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা একাধিকবার ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের সাথে বসেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশসানকেও বিভিন্ন পদক্ষেপে নেয়ার বিষয়ে জানিয়েছি। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীও অনেক সময় গায়ের জোরে বিভিন্ন কর্মকা- করছে। তাই হলে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সকলের সহযোগিতা চান তিনি।

এই ব্যাপারে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগেরই যে সত্যতা আছে এমনটা মনে করি না। তবে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত থেকে যারা এমন অপকর্ম করছে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিগত সময়েও আমরা এমন ব্যবস্থা নিয়েছি। এব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ আপসহীন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ অভিযোগগুলো তদন্ত পরবর্তীতে খতিয়ে দেখে শৃঙ্খলা কমিটি। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ সাপেক্ষে এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। পদাধিকার ভিত্তিতে এই কমিটিতে সভাপতির উপাচার্য, সদস্য সচিব প্রক্টর এবং সদস্য থাকেন উপ-উপাচার্য, অনুষদের ডিন ও ছাত্র উপদেষ্টা। তবে সর্বশেষ ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কমিটির সভা হয়েছে। বছরে দুইবার এই কমিটির সভা হওয়াও কথা থাকলেও গত দশ বছরে সেটা হয়নি। ফলে অনেক অভিযোগের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হয় নি।

এই ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আসাদুন্নবী সামাদী বলেন, প্রশাসনের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই পরিবেশ বিঘ্নিত করে এমন কোনো ব্যক্তি, দল, মত কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া অবিলম্বে শৃঙ্খলা কমিটি পুনর্গঠন করা জরুরি। যার মাধ্যমে এসব কর্মকান্ডের সুষ্ঠু সমাধান এবং শিক্ষার্থীদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা যায়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ