রাজশাহী বোর্ডে কমেছে পাসের হার ও জিপিএ-৫

আপডেট: জুলাই ২৪, ২০১৭, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক


ফল প্রকাশের পর রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীদের উল্লাস-সোনার দেশ

গত বছরের চেয়ে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার কিছুটা কমেছে। কমেছে জিপিএ-৫। এ বছর বোর্ডের পাশের হার ৭১ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ২৯৪ জন।
গত বছরে বোর্ডে পাসের হার ছিলো ৭৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। সেবার জিপিএ-৫ পায় ৬ হাজার ৭৩জন পরীক্ষার্থী। এর আগে ২০১৪ সালে পাসের হার ছিলো ৭৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সেবার জিপিএ-৫ পেয়েছিলো ৭ হাজার ৬৪১জন। এরপর থেকেই পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক তরুণ কুমার সরকার গতকাল রোববার বেলা দেড়টায় সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য জানিয়েছেন। রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সভা কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন, বোর্ডের সচিব ড. আনারুল হক প্রামানিক, কলেজ পরিদর্শক আকবর হোসেন, সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ১৮২ জন। পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ১ লাখ ২১হাজার ৮৩৬ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ৬৭ হাজার ৬২ জন ছাত্র এবং ৫৪ হাজার ৭৭৪ জন ছাত্রী।
এ বছর ছাত্রীদের চেয়ে জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে রয়েছে ছাত্ররা। মোট ৫ হাজার ২৯৪জনের মধ্যে ২ হাজার ৯৩৯ জন ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ২৫৫ জন ছাত্রী। তবে পাশে হারে ছাত্রদের পেছনে ফেলেছে ছাত্রীরা। এবছর ছাত্রীদের পাশের হার ৭১ দশমকি ০১ শতাংশ। যেখানে ছাত্রদের পাশের হার ৬৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের পরীক্ষায় এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে ২৭ হাজার ৪৬১ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে ইংরেজি, পদার্থবিদ্যা ও হিসাববিজ্ঞানে। গত বছর এর সংখ্যা ছিলো ১৭ হাজার ১১৩জন।
এ বছর কলেজ সংখ্যা ৭৪২টি। এর মধ্যে শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করেছে মাত্র ২১টি কলেজে। গতবছর শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করেছিলো ১৮টি করেছে। এবছর ৫০ শতাংশ ও তার ঊর্ধ্বে পাশকৃত কলেজের সংখ্যাও বেড়েছে। গেল বারের চেয়ে ৪৯টি বেড়ে ওই তালিকায় রয়েছে ৬৬৯ টি কলেজ। তবে ৬৮টি বেড়ে ৫০ শতাংশের কম পরীক্ষার্থী পাশকৃত কলেজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৯ এ। এ বছর এক জনও পাশ করতে পারেনি এমন কলেজ রয়েছে ১১টি। গতবছর এ সংখ্যা ছিলো ৮।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে মোট ১০জনকে বহিস্কার করা হয়। গতবার এর সংখ্যা ছিল ২১। এবার মোট ১৯৪টি কেন্দ্রে একযোগে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী অংশ নেয় ১৯জন। আর হাজতি পরীক্ষার্থী ছিলো ৪জন।
পাশের হার কমের ব্যাপারে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, পাশের হার খুব সামান্যই কমেছে। যে তিন থেকে চার শতাংশ পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে তারা পড়ালেখায় ততটা মনোযোগী নয়। এনিয়ে বোর্ডের কোন গাফলতি নেই। সার্বিকভাবে ফলাফল ভালো।
এক বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী বাড়ায় ইংরেজি ভীতিকেই দায়ী করেছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। তিনি বলেন, এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে বেশিরভাগ ইংরেজিতে। ইংরেজি ভীীত থেকেই এমনটি হয়েছে। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তর থেকেই ইংরেজি দুর্বলতা নিয়ে উঠে আসছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক ও পড়ালেখায় দুর্বলতা কাটাকে সংশ্লিষ্টরা একযোগে কাজ করছেন।
শূন্যপাশ এবং ৫০ শতাংশের নিচে শিক্ষার্থী পাশ করেছে এমন কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধিতে তাদের কোন দায় নেই দাবি করেছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। তিনি বলেন, এসব কলেজ শুধুমাত্র প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে। ধারাবাহিতভাবে তারা এমন ফলাফল করলে কারণ খুঁজে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেবে বোর্ড। এরপর মন্ত্রণালয়ই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে একই সময় ফলাফল ঘোষণা হয় নগরীর কলেজগুলোতেও। নগরীর সেরা রাজশাহী কলেজ, নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ ও মহিলা কলেজে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। ভালো ফলাফলে খুশি শিক্ষার্থী-শিক্ষক এবং অভিভাবকরাও। সবখানেই বয়ে যাচ্ছে আনন্দের বন্যায়। রয়েছে উল্টো চিত্রও। কাঙ্খিত ফলাফল করতে না পারায় হতাশ হয়েছে অনেকেই।