নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম শতাধিক বছরের পুরনো রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগারটি নগরীর মিয়াপাড়ায়। ১৮৮৪ সালে রাজা দীঘাপতিয়ার রাজা প্রমথনাথ এই ভবনটি নির্মাণের জন্য নগরীর মিয়াপাড়ায় ৪৪ শতক জমি দান করেন সে সময় এবং বর্তমান স্থানেই তৈরি করা হয়েছিল দ্বিতল ভবন। এর খরচ বহন করেছিলেন কাশিমপুরের জমিদার কেদার প্রসন্ন লাহিড়ী। তার বাবার নামে ভবনের মিলনায়তনের নাম রাখা হয়েছিল ‘গিরিশ চন্দ্র হল’। ১৮৮৪ সালের ৯ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার। এই গ্রন্থাগারে ১০টি কক্ষ ছিল এবং সেই সময় লাইব্রেরিতে ১৮৭১-৭২ সালে ৩২৪৭ টি বই সংরক্ষণ ছিলো। বর্তমানে বই রয়েছে ৩৬ হাজার। এর মধ্যে ২৯টি বইয়ে স্বহস্তে স্বাক্ষর করে পাঠিয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ভেঙে ফেলা হয় ১৩৭ বছরের পুরনো রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সাধারণ গ্রন্থাগার। এই স্থাপনাটি কেবল গ্রন্থাগারই ছিল না, এ ভবনটিই রাজশাহীতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মূল সূতিকাগারও। বইগুলো রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। অ্যাসোসিয়েশন ভবনের তৃতীয় তলায় বইগুলো রাখা হয়েছে।
ঐতিহ্যাবাহী এই গ্রন্থাগার দেখে অভিভূত হয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী, সরোজিনী নাইডু, মোহিতলাল মজুমদার, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, জলধর সেন, স্যার আজিজুল হক, সজনী কান্ত দাস, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, শরৎচন্দ্র বোসসহ আরও অনেকে। এ গ্রন্থাগার সম্পর্কে তাদের ভূয়সী প্রশংসা এখনো জ্বলজ্বল করছে গ্রন্থাগারটির মন্তব্য খাতায়। রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগারে যাতায়াত ছিল এমন বিখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, রমেশচন্দ্র মজুমদার (১৯২৯), জে জি ড্রমান্ড, রজনীকান্ত দাস, প্রফুল্ল কুমার সরকার, গডফ্রেজ যখমন, শিশির ভাদুড়ী প্রমুখ।
ঐতিহ্যবাহী এই ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজশাহীতে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। অবশ্য তাতে কোনো কাজ হয়নি। তাদের দাবি ছিল শতাব্দী প্রাচীন এই গ্রন্থাগারের সঙ্গে রাজশাহীর ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে। এটি ভেঙে ফেলা হলে সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতির অনেক স্মৃতিই মুছে যাবে।
তবে সিটি করপোরেশন তাদের সিদ্ধান্তেই ছিল অটল। ভারত সরকারের ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা অনুদানে গ্রন্থাগারটির নতুন পাঁচতলা ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। সিটি করপোরেশন দিয়েছিল আরও ৭০ লাখ টাকা। এই টাকায় শুধু করা হয়েছে পাইলিংয়ের কাজ। ৭০ ফুট পর্যন্ত ১১৩টি পাইলিং করতে হয়েছে, যা প্রাক্কলনের পুরোপুরি বাইরে ছিল। এতেই ভারত সরকারের অনুদানের ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। পরবর্তীতে বাজেট বাড়িয়ে শুধু নিচতলা কমপ্লিট করা হয়েছে। এরপর দীর্ঘদিন থেকে পরে আছে এই গ্রন্থাগারটি।
বর্তমানে এর কমিটির সদস্যরাও নেই। পদাধিকার বলে সভাপতি জেলা প্রশাসক। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা আসলাম সরকার। বর্তমানে তিনি এখন পলাতক। তবে সিটি করপোরেশন গ্রন্থাগারটির দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে সেখানকার গ্রিল, থাইসহ বিভিন্ন সামগ্রীও চুরি হচ্ছে। বর্তমানে সেখানে দেখে রাখার মতো মানুষও নেই।
কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ গোলাম মওলা। তিনি বলেন, আমি বেশ কয়েকবার জেলা প্রশাসক অফিসে গিয়েছি। আগের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটির রূপরেখাও দিয়ে এসেছি। এখন পর্যন্ত কিছুই কার্যকর হয়নি। এই গ্রন্থাগারটি অনেক পুরনো। বইগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পোকায় ধরলে আমরা সব বই হারিয়ে ফেলবো।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) টুকটুক তালুকদার বলেন, রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগারটি চালুর প্রক্রিয়ায় আছে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি একটি কমিটি গঠন করবো। এরপর চালু করা হবে।