সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
রাণীনগর প্রতিনিধি
নওগাঁর রাণীনগরে পৌষ মাসের শেষের দিকে ঘনকুয়াশা, শৈতপ্রবাহ আর কনকনে শীত নিয়ে গ্রামীণ জনপদে হানা দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ শীত জেঁকে বসায় লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে পাড়া-মহল্লাই লেপ-তোষক তৈরির কারিগররা হাক-ডাক করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ৬ ঋতুর এই দেশে শীতের আগমনী বার্তা শীত কালে হওয়ার কথা থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতুর সাথে তাল মিলছে না। গ্রাম-বাংলার প্রবাদ আছে আশ্বিন মাস এলেই শীতের কারণে মানুষের গাঁ শিনশিন করে। কিন্তু প্রকৃতির খেয়ালে পৌষ মাসের শেষ ভাগে সকাল হলেই ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন আর শীতের দাপটে গত দুই দিন ধরে দুপুর গড়ালেও সূর্যের দেখা মিলছে না। ঘন্টা দুই রোদের তাপের একটু অনুভূতি হলেও শীতের কাঁপুনী আর কুয়াশা দূর হচ্ছে না। সন্ধ্যা নামার পরপরই প্রায় সারা রাত ধরেই ভারি ও মাঝারী ধরণের শৈতপ্রবাহের কারণে অনেক বাসা-বাড়িতে শীত নিবারণের জন্য লেপ- তোষক তৈরির ধুম পড়েছে। পাশাপাশি লেপ-তোষক তৈরি ও ব্যবসার সাথে জড়িতরা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের শীত প্রবণ ও বিশেষ করে উত্তর জেলাগুলোতে পাইকারি ভাবে এখানকার লেপ-তোষক সরবারহ করছেন।
সরেজমিন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কনকনে শীত জেঁকে বসেছে তা মোকাবেলা করার জন্য অধিকাংশ মানুষ বাড়িতে বাড়িতে লেপ-তোষক তৈরি করছে। দিন যতই গড়াচ্ছে শীত তত বেশি পড়ার আশংকায় উপজেলা সদর সহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষেরা নতুন নতুন লেপ তৈরি করছে। লেপ তৈরির কারিগররা শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে অর্ডার নিলেও যথা সময়ে সরবারহ করতে হিমশিম খাচ্ছে। লেপ-তোষক অর্ডার দিতে আশা মানুষের তারাহুড়ার কারণে উপজেলা কোবরাতলী, বিএনপি’র মোড়, স্টেশন রোড, বেতগাড়ী বাজার ও আবাদপুকুর হাটের শোরুমের পার্শে¦ ফাকা জায়গায় ক্রেতাদের উপস্থিতি আর কারিগরদের ধুনুক দিয়ে তুলা ফাটানোর শব্দেই যেন বলে দিচ্ছে লেপ-তোষক তৈরির ধুম পড়েছে। শীতের কারণে তুলার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ত্রিমোহনী-কুবরাতলী এলাকায় ৭ টি তুলার মিলে উৎপাদিত মানসম্পন্ন তুলা দোকানীদের কাছে সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রতি কেজি শিমল তুলা ২শ’ ৮০টাকা থেকে ২শ’ ৯০টাকা, মিলের তুলা ভাল মানের ৪০ টাকা, কারপাস তুলা ১শ’ ৬০টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রেণি ভেদে তুলার দাম মিল মালিকরা বেশি নেওয়ার অভিযোগ উঠছে।
কুড়িগ্রাম জেলা থেকে আসা লেপ-তোষকের পাইকারি ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন জানান, শীত আসলে আমি কুবরাতলী থেকে তৈরি নানান মাপের লেপ-তোষক বিভিন্ন দামে কিনে নিয়ে আমার এলাকায় গ্রামে গ্রামে গিয়ে বিক্রি করি। এতে করে সব খরচ বাদ দিয়ে শীতের দুই মাস আমার ভালই ব্যবসা হয়।
উপজেলার বেলবাড়ি গ্রাম থেকে লেপ তৈরি করতে কোবরাতলী মোড়ে আসা আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, গত বছর শীতে আমি যে লেপ বানিয়ে ছিলাম তার চেয়ে এবারে বেশি দাম চাচ্ছে। প্রয়োজনের তাগিদে একটু চড়া দাম দিয়েই বানাতে হচ্ছে। লেপ-তোষক তৈরির সাথে জড়িত রাণীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকার মোজাফ্ফর হোসেন জানান, এখানে তুলার মিল স্থাপনের পর থেকে আমিসহ পরিবারের সদস্যরা মিলে ২৯ বছর ধরে এই কাজ করে আসছি। তুলা, কাপড়, সুতা ও অন্যান্য উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ৬/৭ ফিট মাপের মিলের তুলা দিয়ে তৈরি তোষক ১৮শ’ টাকা এবং একটু কম মানের তুলা দিয়ে তৈরি করলে ১৫শ’ টাকার মত খরচ পড়ে। আমাদের তেমন লাভ না হলেও পেশার তাগিদে এই কাজ করে আসছি।