সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৯ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁর রাণীনগরের কুজাইল হাটে সরকারি দোতলা পল্লী মার্কেট ভবনের দ্রুত নির্মাণ চান স্থানীয়রা। বছরের পর বছর ধরে জরাজীর্ণ বেহাল হাটে কেনাকাটা করা থেকে মুক্তি চায় হাটুরিসহ ক্রেতারা। হাটে আধুনিক মানের বহুতল ভবন নির্মাণের খবরে উচ্ছ্বসিত সবাই।
ইতোমধ্যেই নোটিশ পাওয়ার পর ভবন নির্মাণের স্থান থেকে অনেকেই তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। অপরদিকে দ্রুতই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীন।
উপজেলা প্রকৌশলী অফিস (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী কুজাইল হাটে চারতলা ভিতের উপর দোতলা পল্লী মার্কেট ভবন নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করা হয়।
নিচতলায় কাঁচা বাজার এবং উপর তলায় ২৪টি দোকান ঘর নির্মাণ হবে। যার প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয় ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ইতোমধ্যেই দরপত্রের মাধ্যমে মেসার্স সাহারা কনস্ট্রাকশন-ইএসবি নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পেয়েছে।
ভবনের নির্মাণ কাজটি চলতি বছরের ১৯মে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের ৩০আগষ্ট শেষ হওয়ার কথা। হাটের দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ অবস্থা থেকে মুক্ত করে আধুনিক ছোঁয়া দিতে এই বহুতল ভবন নির্মাণের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোকলেছুর রহমান বাবু বলেন সরকারের এমন উন্নয়ন মূলক কাজকে বাধাগ্রস্ত করতেই স্থানীয় কিছু কুচক্রী ব্যক্তিরা নানা ষড়যন্ত্র করে আসছেন। ওই ব্যক্তিদের কেউ দীর্ঘদিন ধরে হাটের জায়গা দখলে করে অবৈধ ভাবে স্থায়ী ভাবে গোডাউন করেছেন।
আবার কেউ কেউ সরকারি নিময়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এবং বছরের পর বছর রাজনৈতিক দাপট ও পেশীশক্তির জোরে ইট-সিমেন্ট দিয়ে বড় বড় দোকানঘর নির্মাণ করে রেখেছেন। তারাই তাদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বাধার সৃষ্টি করছেন। যার কারণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ভবন নির্মাণের স্থান বুঝে দিতে কিছুটা কালক্ষেপণ হচ্ছে।
এছাড়া সম্প্রতি সময়ে ওই সকল অবৈধ দখলদাররা ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করার লক্ষ্যে গুটিকয়েক ভাড়াটিয়া বহিরাগতদের নিয়ে মিথ্যে মানববন্ধনও করেছে। তবে প্রশাসনের সহযোগিতায় দ্রুতই আমরা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করবো।
সরকারের জায়গায় সরকারি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে কেউ বাধাগ্রস্ত করার ক্ষমতা রাখে না। সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি করতে এই হাটটির আধুনিকায়ন এবং হাটে দোকান করে জীবিকা নির্বাহকারী শতাধিক মানুষদের জীবন মানের আরো উন্নয়নের জন্য এই বহুতল ভবন নির্মাণের কোন বিকল্প নেই।
আতাইকুলা গ্রামের ফজে সরদার বলেন তিনি প্রায় ২০বছর যাবত কুজাইল হাটে দোকানদারি করে আসছেন। নতুন ভবন নির্মাণের স্থানে থাকা তার দোকান ঘর তিনি ইতোমধ্যেই ভেঙ্গে ফেলেছেন। কিন্তু কিছু কুচক্রী ব্যক্তিরা ভবন নির্মাণ কাজকে বন্ধ করার পায়তারা করছেন। কোন বাধাকেই তোয়াক্কা না করে দ্রুতই নতুন বহুতল ভবনটির পূর্ণাঙ্গ নির্মাণ কাজ শুরু করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ফজে সরদার।
কুজাইল হাটের চা বিক্রেতা সাইফুল প্রামাণিক, দোকানি জাহাঙ্গীর আলমসহ অনেকেই জানান, তারা খরা মৌসুমে রোদে পুরে আর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে ভিজে দোকানদারি করতে চান না। তারা হাটে এসে একটি ছিমছাম, সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চান।
আর হাটের একটি চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি করতে এমন আধুনিক মানের বহুতল ভবনের খুবই প্রয়োজন। এমন একটি ভবন কুজাইল হাটে নির্মাণ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সবার পক্ষ থেকে সরকারকে অনেক ধন্যবাদ।
সহকারি কমিশনার (ভূমি) শেখ নওশাদ হাসান বলেন কুজাইল বাজার কমিটির মতামতের ভিত্তিতে বাজার সংলগ্ন ছোট যমুনা নদীর পারঘাটি যাওয়ার রাস্তা বরাবর পূর্ব-পশ্চিম লম্বায় ভবন নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। নির্ধারিত স্থান থেকে স্থাপনা সরিয়ে নিতে ইতিমধ্যেই একাধিকবার নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। যারা স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেয়নি দ্রুতই তাদের স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাইমেনা শারমীন বলেন, ভবন নির্মাণের জন্য যাদের দোকান ভাঙ্গা হচ্ছে ভবন নির্মাণের পর সেই সব ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নতুন ভবনে দোকান ঘর বরাদ্দ প্রদান করা হবে। তাই ভবন নির্মাণের কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এমনটি ভাবার কোন অবকাশ নেই।
সরকারি উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হবেন না। তাই এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা না দিয়ে সঠিক ভাবে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কিনা সেই বিষয়ে নজরদারি রেখে প্রশাসনকে সঠিক তথ্য দিয়ে ভবনটি নির্মাণে সহযোগিতা করার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।