শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি:
দিন যতই যাচ্ছে ততই দেশে বজ্রপাতে নিহতের সংখ্যা ক্রমেই আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বজ্রপাত বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে নির্বিচারে তালগাছ কাটাকে অনেকটাই দায়ী করা হচ্ছে। প্রতিদিনই পরিবেশবান্ধব তালগাছের সংখ্যা কমছে। অথচ তালগাছই হচ্ছে একমাত্র বৃক্ষ যা বজ্রপাত নিরোধক হিসেবে কাজ করে।
এক সময় নওগাঁর বিভিন্ন সড়কের পাশে তালগাছের সারি চোখে পড়তো। কিন্তু সড়ক আধুনিকায়ন কাজের অজুহাতে কাটা পড়ছে সেই সব তালগাছগুলো। আবার তালগাছ সম্পর্কে সচেতনতার অভাবে গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা কাটছেন পরিবেশবান্ধব তালগাছ।
যেহেতু তালগাছ খুবই ধীর গতিতে বড় হয় তাই আগামী প্রজন্মকে বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা করতে এবং নিরাপদ বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রতি মৌসুমেই নিজেদের বসতবাড়ির পাশে, গ্রামীণ সড়ক ও মহাসড়কের পাশ দিয়ে নিজ উদ্যোগে কিংবা সরকারি অথবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বেশি বেশি করে তালবীজ কিংবা তালগাছ রোপনের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।
দেশ থেকে আশঙ্কাজনকহারে তালগাছের হারিয়ে যাওয়াকে প্রতিরোধ করতেই বেশ কয়েকবছর যাবত সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দেশজুড়ে তালবীজ-তালগাছ রোপনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় নওগাঁর রাণীনগরে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে রোপন করা হচ্ছে তালগাছ।
সম্প্রতি রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ঝালঘড়িয়া-চকপারইল গ্রামীণ ১কিলোমিটার সড়কের পাশ দিয়ে কৃষি বিভাগের বাস্তবায়নে ৪শত তালগাছ রোপন কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তালগাছ রোপন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: রাহিদ সরদার।
এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীন, কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা হক, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম, পারইল ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা হক বলেন তালগাছকে আমরা অবহেলার চোখে দেখে থাকি। অথচ একটি তালগাছের অনেক গুরুত্বপূর্ণ গুন রয়েছে। উল্লেখযোগ্য গুন হচ্ছে তালগাছ বজ্রপাত নিরোধক। এছাড়া দিন যতই যাচ্ছে ততই তাল শাঁস ও বিভিন্ন মুখরোচক পিঠা খেতে তাল ফলের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে একটি তালগাছ অনেক প্রজন্মকে ফল ও সেবা দিতে পারে।
তালগাছকে অন্যান্য গাছের মতো তেমন একটা যত্নও নিতে হয় না। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা বিভিন্ন ধরণের অধিক লাভজনক ফলদ গাছের দিকে বেশি সুদৃষ্টি প্রদান করছি। কিন্তু ফলদ হিসেবে তালগাছও আমাদের পরিবেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উপজেলার প্রতিটি এলাকার কৃষকদের তালগাছের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করছি।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: রাহিদ সরদার বলেন দেশে তালগাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করতেই সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক প্রতি মৌসুমেই তালগাছ রোপন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। আগামীতেও এই ধরণের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে।
তবে শুধু সরকারের একার পক্ষ থেকেই নয় ব্যক্তি উদ্যোগ কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগেও যদি তালবীজ কিংবা তালগাছ রোপন করা যায় তাহলে দ্রুতই দেশের প্রতিটি সড়ক তালগাছের সাড়িতে যেমন ভরে উঠবে তেমনি ভাবে বজ্রপাতের হাত থেকেও আমরা এবং আগামী প্রজন্ম রক্ষা পাবো। তাই অন্যান্য গাছের পাশাপাশি তালগাছ রোপনের ক্ষেত্রে গ্রামীণ পর্যায়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন।