বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁর রাণীনগরে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির অন্যতম সদস্য ও পদধারী আ’লীগের অন্যতম দোসর ও প্রতারকরা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও আটক করছে না পুলিশ। অথচ যারা তৎকালীন চাপে পড়ে নিজেকে বাঁচানোর লক্ষ্যে আ’লীগের নাম ধারণ করেছিলো- সেই সব মানুষকে আটক করা হচ্ছে। পুলিশের এমন দ্বিমুখি আচরণে উপজেলাবাসীর মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির অন্যতম সদস্য ও জেএমবি কর্তৃক ছাত্রলীগ নেতা খেজুর হত্যা মামলার অন্যতম আসামী কাজী বেলাল হোসাইন। ২০০৪ সালে হঠাৎ করেই জেএমবি নামক জঙ্গি দলের আর্বিভাব ঘটলে উপজেলার আল-আমিন দাখিল মাদ্রাসায় পড়ুয়া কাজী বেলাল হোসাইন নিজেকে জেএমবির সঙ্গে যুক্ত করে নেন।
এরপর জেএমবির দলের হয়ে কাজী বেলাল এলাকায় প্রকাশ্যে হত্যা, লুটপাটসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। ২০০৪ সালের ১৮ মে সকাল ১০টার দিকে বাংলাভাইয়ের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী তৎকালীন উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা ইদ্রিস আলী খেজুরকে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রকাশ্যে হত্যা করে ধানের জমির মধ্যে পুঁতে রাখে।
পরবর্তিতে খেজুরের বোন লিলিমা বাদী হয়ে রাণীনগর থানায় মামলা দায়ের করলে ২০১১ সালে সিআইডি তদন্ত করে যে চার্জশিট প্রদান করে সেখানে মো. কাজী বেলাল হোসেন ওরফে মুন্সিকে ২৪ নং পলাতক আসামি হিসেবে দেখানো হয়।
এরপর ২০০৯ সালে আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে নিজের ভোল পাল্টিয়ে উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়নের গহেলাপুর গ্রামের বড়িয়াপাড়ার নাজিম উদ্দীনের ছেলে কাজী বেলাল হোসাইন তৎকালীন এমপি ইসরাফিল আলমের ছত্রছায়ায় এসে নিজের তথ্য গোপন করে নিজেকে ২নং কাশিমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা বানিয়ে তৎকালীন উপজেলা বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও ২নং কাশিমপুর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী মোজাফ্ফর হোসেনকে অন্যায়ভাবে সরিয়ে নিজেকে নিকাহ রেজিস্ট্রার বানিয়ে নেয়।
পরবর্তিতে কাজী বেলাল ইসরাফিল আলম ও তৎকালীন আ’লীগের নেতাদের ম্যানেজ করে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদকের পদটি বাগিয়ে নেন। আ’লীগের পদ পাওয়ার পর শুধু কাশিমপুর ইউনিয়নেই নয় পুরো নওগাঁ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে অর্থের বিনিময়ে বাল্য বিয়ে নিবন্ধন, অবৈধভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ ও বিয়ে সম্পর্কিত নানা বিষয়ে প্রতারণা করাসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আয় করে কাজী বেলাল হোসাইন।
গত ৫ আগস্টের পর আ’লীগের অধিকাংশ নেতা নিজেকে আড়াল করে রাখলেও কাজী বেলাল হোসাইন নতুন করে উজ্জীবিত হওয়া দলের প্রধানদের মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বীরদর্পে তার অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। তার দ্বারা শত শত মানুষ প্রতারিত হয়েছে এবং হচ্ছে।
সম্প্রতি কাজী বেলালের মাধ্যমে প্রতারিত হওয়া ভুক্তভোগীদের করা লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে নতুন করে আলোচনায় আসে আ’লীগের অন্যতম দোসর ও জেএমবির অন্যতম সদস্য এই কাজী বেলাল হোসাইনের নানা অপকর্ম। সম্প্রতি জেলা রেজিস্ট্রার সাইফুল ইসলাম রাণীনগর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস পর্যবেক্ষণে আসলে কাজী বেলালের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
সেই শুনানি শেষে কাজী বেলাল রেলগেইট এলাকায় এলে বিক্ষুদ্ধ জনতার রোষানলে পড়ে। আলোচিত ব্যক্তি কাজী বেলালের এমন গণপিটুনির ঘটনা বর্তমানে উপজেলায় টপ অব দ্য নিউজে পরিণত হয়েছে। তবে পুলিশ কেন কাজী বেলালের মতো পদধারী আ’লীগের নেতা ও দুষ্কৃতিকারীকে আটক করছে না- এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে উপজেলার সর্বত্র।
সম্প্রতি উপজেলার চকমনু গ্রামের মৃত-ইব্রাহিম আলীর ছেলে রেজাউল ইসলাম কাজী মো. বেলাল হোসাইনের নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন যে, ২নং কাশিমপুর ইউনিয়ন নিকাহ রেজিস্ট্রার মো. বেলাল হোসাইন নিয়োগ পাওয়ার পর হতে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বাল্যবিবাহ নিবন্ধন, নিবন্ধনকালীন এক পক্ষের নিকট হতে অর্থের বিনিময়ে মোহরানা বৃদ্ধি করেন।
এসব বিষয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হলে সে টাকার বিনিময়ে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে। সে বিগত সময় নিজেকে আ’লীগের দোসর সাজিয়ে বহাল তবিয়তে এমন অবৈধ কাজ করে, অনলাইন জুয়া ও অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে মানুষকে প্রতারিত করে লাখ লাখ টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ আছে। তার এমন অনৈতিক কাজে এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত একাধিক ফৌজদারি মামলা চলমান রয়েছে। অথচ পুলিশ কেন এমন দুষ্কুতিকারী ও আ’লীগের নেতাকে আটক করছে না তা রহস্যজনক।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাফিজ মো. রায়হান মুঠোফোনে জানান, উপর মহলের নির্দেশক্রমে তালিকাভুক্ত পদধারী ডেভিলদের আটক করার অভিযান চলমান রয়েছে। তিনি এই থানায় যোগদানের পর রেকর্ড সংখ্যক ডেভিলদের আটক করেছেন এবং অভিযান চলমান রয়েছে। তবে পদধারী আ’লীগের নেতা কাজী বেলাল হোসাইন প্রকাশ্যে বহাল তবিয়তে থাকলেও তাকে কেন আটক করা হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি ওসি।