বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁর রাণীনগরে বিক্রিত গভীর নলকূপ জোবরদখল করায় চলতি আমন মৌসুমে জমিতে সেচ কাজ চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার লোহাচুড়া গ্রামে। এদিকে দখলকারীদের হুমকি-ধামকিতে দীর্ঘ ১৩ বছর নিজের দখলে থাকা নলকূপ ও বসবাড়িতে যেতে পারছেন না ভুক্তভোগী নাছিমা আরেফিন (লতা) ও তার পরিবার।
এমতাবস্থায় থানাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেও কোন সুরাহা মিলছে না। তাই যে কোন মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। যদি দ্রুত বিষয়টি সমাধান করা না যায় তাহলে শত শত বিঘা জমির ধান সেচের অভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার এবং উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষেরও আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৮-৮৯ সালে উপজেলার লোহাচুড়া গ্রামের খোন্দকার আমজাদ হোসেনের বৈঠকখানায় এক অধিবেশনের মাধ্যমে সাতজনের মালিকানায় ঋণের মাধ্যমে লোহাচুড়া মাঠে জমিতে সেচ দিতে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়।
পরবর্তিতে ২০১০ সালে সাতজন মালিকের মধ্যে আমজাদ হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেন তার অংশটি আরেক অংশীদার খন্দকার আমজাদ হোসেনের ছেলে সুলতানুল আরেফিনের স্ত্রী নাসিমা আরেফিনের (লতা) কাছে বিক্রি করে। আরেক অংশীদার মৃত-আমজাদ রহমান খন্দকারের ছেলে মিজানুর রহমান খন্দকার ২০১১ সালে তার অংশটি লতার কাছে বিক্রি করে।
একই বছর আরো চারজন অংশীদার খন্দকার আমজাদ হোসেনের ছেলে দেলোয়ার ও সুলতান আরেফিন, মৃত-চয়েন উদ্দিন খন্দকারের ছেলে আব্দুর রউফ খন্দকার ও খন্দকার শামসুল ইসলামের স্ত্রী মোছা: মনোয়ারা তাদের অংশ লতার কাছে বিক্রি করে। এরপর থেকে গভীর নলকূপটি লতা ও তার পরিবার ভোগদখল করে আসছে।
নলকূপের মালিক সুলতানুল আরেফিনের স্ত্রী নাসিমা আরেফিন (লতা) বলেন গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের সুযোগে সাবেক অংশীদার মৃত-মিজানুর রহমানের ছেলে খন্দকার মাহবুবুল আলম, খন্দকার মাকসুদুল কতিপয় সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ফিল্মি স্টাইলে নলকূপটি দখল করে নিয়ে নলকূপের ঘরে তালা দিয়ে আবদ্ধ করে রাখে।
আমার ছেলে সন্তান নেই বলে আমার ভাগিরা আমার সবকিছু জোরপূর্বক জোবরদখল করার পায়তারা করছে। প্রতিনিয়তই আমাদের প্রাণনাশের হুমকি-ধামকি প্রদান করে আসছে। নিরুপায় হয়ে আমার ছোট মেয়ে নুসরাত আরেফিন ডটি আগস্ট মাসে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেও এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ কোন সমাধান আমরা পাইনি।
তিনি আরো বলেন সন্ত্রাসীদের ভয়ভীতিতে নিজের বাড়িতেও আমরা যেতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমরা নিজ ভূমিতেই সন্ত্রাসীদের ভয়ে গৃহ ছাড়া হয়ে আছি। এমন সমস্যার দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে সোমবার আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্যান্য দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
বর্তমানে আমরা খুবই অসহায় ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই কোন প্রকারের সংঘর্ষ হওয়ার আগেই কর্তৃপক্ষরা দ্রুত সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টির একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান পূর্বক আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন এমনটাই আশা করছি।
নলকূপ দখলকারী দলের প্রধান মৃত-মিজানুর রহমানের ছেলে খন্দকার মাহবুবুল আলম লিংকন মোবাইল ফোনে বলেন আমাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগটি পুরোপুরি মিথ্যে ও বানোয়াট। বরং আমিসহ আমার পুরো পরিবার লতার স্বামী সাবেক পুলিশ সদস্য সুলতানুল আরেফিনের দ্বারা বছরের পর বছর নির্যাতিত হয়ে আসছি।
আজ আমি তাদের মিথ্যে মামলার শিকার হয়ে গ্রাম ছাড়া হয়েছি। তারা সকল কিছু জাল করে নলকূপটি তাদের নামে করে নিয়েছে। আমরা আদালতের মাধ্যমে নলকূপের মালিকানার সঠিক সমাধান চাই।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মেহেদী মাসুদ বলেন এই বিষয়ে দুই পক্ষের কাছ থেকেই লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুতই দুই পক্ষকে ডেকে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান করে দিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি মোহাইমেনা শারমীন বলেন এমন বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুতই তদন্ত সাপেক্ষে সমস্যাটি সমাধান করার পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।