রাণীনগরে নিজ উদ্দ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে প্রদর্শনী খামার || উপকৃত হচ্ছেন এলাকার মানুষ

আপডেট: জানুয়ারি ২১, ২০১৭, ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ

রাণীনগর প্রতিনিধি


নওগাঁর রাণীনগরে ব্যক্তি উদ্দ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে ‘পল্লী শ্রী নিকেতন’ নামের একটি প্রদর্শনী খামার। এই প্রদর্শনী খামারের বিভিন্ন প্রকল্প দেখে উপজেলার অনেক বেকার যুবক এখানকার সার্বিক সহায়তায় গড়ে তুলছেন ছোট ছোট খামার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
উপজেলার ২নম্বর কাশিমপুর ইউপি’র কাশিমপুর গ্রামে প্রায় ৩০ বিঘা জমির উপড় গড়ে তোলা হয়েছে এই প্রদর্শনী খামারটি। ওই এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের মাঝে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দেয়াই এই খামারের মুল লক্ষ্য। এতে কৃষকরা অতি কম সময়ে কম পরিশ্রমে এই প্রযুক্তি ও পদ্ধতিগুলোকে ব্যবহার করে আরো অধিক লাভবান হবে বলে মনে করেন খামার কর্তৃপক্ষ।
খামার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫’র  মে মাসে এই খামার তৈরির কাজ শুরু করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলম। এই জনপদের অবহেলিত কৃষকদের মাঝে আধুনিক ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্যই মূলত তিনি নিজ উদ্দ্যোগে এই প্রদর্শনী খামারটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এই খামারে দেশি-বিদেশি ব্রাহ্মা, ফিজিয়ান, সিন্ধুসহ বিভিন্ন প্রজাতির গরু পালন ও কম সময়ে মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। এখানে অতি অল্প সময়ে উৎপাদিত হচ্ছে গরুর মাংস ও দুধ। গরুর সেডের টিনের উপর প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে পানির ঝরণা তৈরি করা হয়েছে। এতে করে গরু-ছাগলকে গরমের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অতিরিক্ত কোন বৈদ্যুতিক ফ্যানের প্রয়োজন হয় না। ঝরনার পানি একবার প্রবাহিত করলে ২-৩ ঘন্টা সেড ঠান্ডা থাকে। এতে করে সাশ্রয় হচ্ছে অর্থ ও বিদ্যুৎ।
এখানে এলাকার কৃষকদের মাটি পরীক্ষার জন্য স্থাপন করা হয়েছে সয়েল টেস্ট ল্যাবরেটরি যেখানে কৃষকরা বিনামূল্যে তাদের জমির মাটি পরীক্ষা করাতে পারবেন। এখানে দেশি-বিদেশি মেশ, ভেড়া ও গাড়ল পালন করা হচ্ছে। টার্কি পাখি, চিনা মুরগি ও দেশি-বিদেশি কবুতর পালন করা হচ্ছে।
গোবর থেকে তৈরি করা হচ্ছে বায়োগ্যাস আর গোবরগুলোকে জৈব সার হিসেবে বিক্রি ও ব্যবহার করা হচ্ছে। খামারে থাইলান্ডের কেঁচো দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে কম্পোস্ট সার। এই সারগুলো বিক্রয় হচ্ছে ২০-২৩ হাজার টাকা টন হিসাবে। এখান থেকে বিদেশি কেঁচোগুলো সরবরাহও করা হচ্ছে বাইরে।
খামারে চাষ করা হচ্ছে মাশরুম। অতি অল্প সময়ে এই মাশরুম চাষ করে অধিক লাভ করা সম্ভব। পুষ্টিতে ভরপুর এই মাশরুম নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাইরে বিক্রি করা হচ্ছে। মাশরুম চাষ করে আমরা চাপ কমাতে পারি অন্যান্য সবজির প্রতি। খামারে রয়েছে হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন দেশি-বিদেশি মাছের হ্যাচারি। যেখানে বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন করাসহ এখানে চাষ করা হচ্ছে এবং বাইরে সরবরাহও করা হচ্ছে। রয়েছে দেশি-বিদেশি মুরগির খামার। খামারের পুকুরের পাশ দিয়ে চাষ করা হয়েছে বিভিন্ন ঔষুধি ও ফলদ গাছ এবং সবজি। খামারে সব কিছুই তৈরি করা হয় কোন প্রকারের রাসায়নিক  কেমিক্যাল ও সার ছাড়াই। এখানে আধুনিক পদ্ধতিতে পালন করা হচ্ছে কোয়েল পাখি। এই পাখির ডিম ও মাংস এই খামার থেকে কম মূল্যে সরবরাহ করা হয়।
খামারে বর্তমানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ১শ ২২টি গরু, বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল ৮০টি, পাঁঠা ৫টি ও টার্কি পাখিসহ বিভিন্ন জাতের পাখি রয়েছে প্রায় ৮হাজার। বর্তমানে এই খামারে ওই এলাকার প্রায় ৫০ জন বেকার মানুষের স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা আসেন এই খামার পরিদর্শন করার জন্য। সম্প্রতি এই খামার পরিদর্শন করেছেন উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন কর্মকর্তারা।
খামারের মালিক  সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলমের সঙ্গে পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবু তালেব, উপজেলা সহকারি মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান, রাণীনগর মহিলা অনার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ চন্দন কুমার মহন্ত, আত্রাই এমএম ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো. জুলফিকার আলী প্রমুখ।
জেলার আত্রাই উপজেলা থেকে খামার পরিদর্শন করতে আসা মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমি উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করে বেকার বসে আছি। তাই এই খামারটি পরিদর্শন করতে এসেছি। এই খামারের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেছি । আমার খুব ভালো লেগেছে। এখানকার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে বেকার বসে না থেকে আমিও একটি খামার গড়ে তুলবো বলে ভাবছি।
উপজেলার আবাদপুকুর এলাকা থেকে খামার পরিদর্শন করতে আসা মো. হাফিজার রহমান জানান, আমি অনেকবার এই খামারের কথা শুনেছি। তাই খামারটি পরিদর্শন করতে এসেছি। আমার অনেক দিনের ইচ্ছে একটি উন্নত জাতের বিদেশি গরুর ফার্ম গড়ে তোলার। এই খামারের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে আমি অচিরেই একটি বিদেশি গরুর ফার্ম তৈরি করবো।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবু তালেব জানান, আমরা যারা পশু ও পাখি পালনের সঙ্গে জড়িত আছি আমাদের সবার উচিত একবার এই খামারটি পরিদর্শন করা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, এই খামারে চাষাবাদ করা হয় আধুনিক ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে। তাই আমরা যারা চাষাবাদের সঙ্গে জড়িত আছি অনন্ত একবার এই খামারটি আমাদের পরিদর্শন করা একান্ত কর্তব্য যদি আমরা আধুনিক ও উন্নত মানের কৃষি প্রযুক্তিকে জানতে চাই।
খামারের মালিক স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলম বলেন, আমার নির্বাচনি এলাকা আত্রাই ও রাণীনগর উপজেলার মানুষ খুবই অবহেলিত। তাই এই এলাকার বেকার যুবকদের মাঝে উৎসাহ আর কৃষকদের মাঝে আধুনিক ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তিগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষে আমার এই খামার গড়ে তোলা। আমার আশা এলাকার কৃষকরা এই খামারটি পরিদর্শন করলে অবশ্যই আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির কিছু না কিছু শিখবে আর বেকার যুবকরা অনুপ্রাণিত হয়ে গড়ে তুলবে ছোট ছোট খামার। এতে এক সময় এই এলাকা উন্নতির শিখরে পৌঁছে যাবে বলে আমার প্রত্যাশা।