রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
আবদুর রউফ রিপন, রাণীনগর
রাণীনগরের বাজাগুলোতে মাছ ধরার খলশানি বিক্রির ধুম পড়েছে-সোনার দেশ
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই বিভিন্ন হাট বাজারে গ্রাম বাংলার সহজলভ্য প্রাচীনতম উপকরণ বাঁশের তৈরি চাঁই বা খলশানি বিক্রির ধুম পড়েছে। দেশি প্রজাতির ছোট জাতের মাছ ধরার এ খলশানি উপজেলার হাটবাজারগুলোতে প্রতিদিন শত শত বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে খলশানি বিক্রির চিত্র। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ত্রিমোহণী হাটের খলশানি পট্টিতে বেচা কেনার জন্য জনসাধারণের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। উপজেলার মিরাটসহ পাশের নিজামপুর, ঝিনা, খট্টেশ্বর, কৃষ্ণপুর-মালঞ্চিসহ বিভিন্ন গ্রামের ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষজন এটা তৈরি করেন। স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সকল সদস্যরা মিলে অবসর মৌসুমে তাদের নিপুণ হাতে এ খলশানি তৈরি করে থাকেন। এগুলো বাড়ি থেকে নিয়ে এসে উপজেলার ত্রিমোহণী, আবাদপুকুর, বেতগাড়ী, বান্ধাইখাড়া, মির্জাপুর-ভবানিপুরসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রির জন্য পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন কারিগররা।
খলশানি তৈরির কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাঁশ কটের সুতা এবং তাল গাছের আঁশ দিয়ে তৈরি এসব খলসানি মানের দিক দিয়ে ভালো হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অঞ্চল ভেদে বিশেষ করে হাওর অঞ্চলে মাছ শিকারীরা এসব হাট-বাজার থেকে পাইকারি মূল্যে নিয়ে যায়। ফলে এ পেশায় জড়িত পরিবারগুলো বর্ষা মৌসুমে এর কদর বেশি ও যথাযথ মূল্য পাওয়া যায়। মাত্র দুই-তিন মাসেই খলসানি বিক্রি করে তারা প্রায় বছরের খোরাক ঘরে তুলে নেয়।
লাভ খুব বেশি না হলেও বর্ষা মৌসুমে এর চাহিদা থাকায় রাত দিন পরিশ্রমের মাধ্যমে খলশানি তৈরি করে তারাও খুশি। একদিকে যেমন সময় কাটে অন্যদিকে লাভের আশায় বাড়ির সকল সদস্যরা মিলে খলশানি তৈরি কাজ করে অভাব অনঠনের কবল থেকে একটু সুখের নিশ্বাস ফেলে।
এসব খলশানি তৈরিতে প্রকার ভেদে খরচ হয় ৭০ থেকে ২শ টাকা এবং বিক্রি হয় ১শ থেকে ৩শ টাকা পর্যন্ত। এতে করে খুব বেশি লাভ না হলেও পৈত্রিক এ পেশা ছাড়তে নারাজ এর কারিগররা। আধুনিকতার উৎকর্ষের তৈরি ছোট জাতের মাছ ধরার সুতি, ভাদায় ও কারেন্ট জালের দাপটের কারণে দেশি প্রযুক্তির বাঁশের তৈরি খলসানি সামগ্রী এমনিতেই টিকে থাকতে পারছে না। কিন্তু জীবনের তাগিদে তারা একেবারে কর্মহীন থাকতেও চায় না। তবে সরকারি বেসরকারি পৃষ্টপোষকতা ও সহযোগিতা পেলে মৌসুমের আগে বেশি পরিমান খলশানি মজুত করতে পারলে ভরা মৌসুমে বেশি দামে বিক্রি হলে লাভ ভালো হয়।
উপজেলার কয়েকজন খলশান বিক্রেতা জানান, খলশানি তৈরির সামগ্রীর দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তাই আগের মতো আর লাভ হয় না। দীর্ঘদিন থেকে এ ব্যবসায় জড়িত তাই ছাড়তেও পাড়ছি না। বর্ষা এবার আগাম শুরু হওয়ায় খলসানির কদরও বেড়েছে। হাট বাজারগুলোতে খলশানি বিক্রির ধুম পড়েছে।