বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ
এলজিইডির উদাসীনতার কারণে মাসের পর মাস পার হলেও নওগাঁর রাণীনগরের কুজাইল হাটে সরকারি দোতলা পল্লী মার্কেট ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে না। ভবন নির্মাণের চুড়ান্ত জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা নিয়ে কাটছে না ধোঁয়াশা। সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে এলজিইডির কেন এমন উদাসীনতা এমন প্রশ্নই স্থানীয়দের।
জানা গেছে, হাতে গোনা কয়েকজন ব্যক্তি ভবন নির্মাণের বিরোধীতা করছেন। তবে হাটের অধিকাংশ দোকানীরা ভবন নির্মাণের পক্ষে। তবুও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন প্রশাসন। ফলে কালক্ষেপন দীর্ঘ হলে প্রকল্পটি ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
উপজেলা প্রকৌশলী অফিস (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, দেশব্যাপি গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী কুজাইল হাটে চারতলা ভিতের উপর দোতলা পল্লী মার্কেট ভবন নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করা হয়। নিচতলায় কাঁচা বাজার এবং উপর তলায় ২৪টি দোকান ঘর নির্মাণ হবে। যার প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ইতিমধ্যেই দরপত্রের মাধ্যমে মেসার্স সাহারা কনস্ট্রাকশন-ইএসবি নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্মাণ কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ভবনের নির্মাণ কাজটি চলতি বছরের ১৯ মে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের ৩০ আগষ্ট শেষ হওয়ার কথা। হাটের দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ অবস্থা থেকে মুক্ত করে আধুনিক ছোঁয়া দিতে এই বহুতল ভবন নির্মাণের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোকলেছুর রহমান বাবু বলেন, সরকারের এমন উন্নয়নমূলক কাজকে দ্রুত বাস্তবায়নে এলজিইডি ও প্রশাসনের কেন এমন উদাসীনতা তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট দপ্তর দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে হাটের যে স্থানে ভবন নির্মাণের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন সেখানেই নির্মাণ কাজ শুরু করবেন। কতিপয় স্থানীয় কিছু কুচক্রী ব্যক্তিদের করা নানা ষড়যন্ত্রের কাছে এমন সরকারি উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ হতে পারে না। কেউ অযৌক্তিক অভিযোগ দিবেন আর কর্তৃপক্ষরা সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে শত মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবেন না এটি কাম্য নয়। আমি এই ভবন নির্মাণের কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য কর্তৃপক্ষদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
আতাইকুলা গ্রামের ফজে সরদার বলেন তিনি প্রায় ২০বছর যাবত কুজাইল হাটে দোকানদারী করে আসছেন। তিনিসহ হাটের নব্বই ভাগ দোকানীরা চান নতুন ভবন নির্মাণ করা হোক। কিন্তু প্রশাসন কেন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করতে গড়িমরসি করছেন তা সত্যিই রহস্যজনক।
কুজাইল হাটের চা বিক্রেতা সাইফুল প্রামাণিক, দোকানী জাহাঙ্গীর আলমসহ অনেকেই জানান তারা খরা মৌসুমে রোদে পুরে আর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে ভিজে দোকানদারী করতে চান না। তারা হাটে এসে একটি ছিমছাম, সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চান। আর হাটের একটি চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি করতে এমন আধুনিক মানের বহুতল ভবনের খুবই প্রয়োজন। সাজানো ষড়যন্ত্রের কাছে নত না হয়ে এই অঞ্চলের শত শত মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য দ্রুতই ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করতে উপরের স্যারদের দৃষ্টি কামনা করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাইমেনা শারমীন বলেন, ইতিমধ্যই হাটের উত্তর পাশে নয় হাটের মাঝখানে ভবন নির্মাণের জন্য অনেকগুলো লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থান নির্ধারনের বিষয়ে সাধারণ মানুষদের ধোঁয়াশা দূর করার জন্য সম্প্রতি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মহোদয়কে নিয়ে হাটে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। কিন্তু এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মহোদয় সাধারণ মানুষদের মাঝে নির্মাণ কৌশলের নানা বিষয় তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিশেষ করে একাধিক স্থানে মাটি পরীক্ষার বিষয়টি তিনি পরিস্কার করতে পারেননি। এছাড়া স্থান চ’ড়ান্ত করে স্থাপনা উচ্ছেদ না করেই দরপত্র প্রদান করা ঠিক হয়নি বলেও মনে করছি। এমন জটিলতার কারণে দিনের পর দিন ভবন নির্মাণ করা নিয়ে নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের স্যারের পরামর্শক্রমে দ্রুতই একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
এলজিইডি নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ জানান, কুজাইল হাটে ভবন নির্মাণ করা নিয়ে জটিলতা কাটছে না। একাধিকবার মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে স্থান চ’ড়ান্ত হওয়ার পরই বরাদ্দ এসেছে। নির্মাণ কাজ শুরুর জন্য ইতিমধ্যেই সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এখানে নির্মাণ বিষয়ে স্থানীয়দের হাতে কলমে বোঝানোর কিছু নেই। যদি স্থানীয়রা বাধা প্রদান অব্যাহত রাখেন তাহলে প্রকল্পটি অন্যস্থানে স্থানান্তর করা হবে।