সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
রাবি প্রতিবেদক:রমজানে ইফতারকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাস্পাসজুড়ে চলছে উৎসবের আমেজ। আসরের আজানের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন খেলার মাঠে খোলা আকাশের নীচে দেখা যায় ইফতার আয়োজনের দৃশ্য। বন্ধু-বান্ধব ও পরিচতজনদের নিয়ে ছোটো-ছোটো দলে বিভক্ত হয়ে বাহারি পদের ইফতারির আয়োজন করে থাকে শিক্ষার্থীরা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই অংশগ্রহণ করে এসব ইফতারে।
রাবিতে খোলা মাঠে সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের সামনে, ক্যাম্পাস সংলগ্ন স্টেশন বাজার, বিনোদপুর বাজার ও কাজলায় ইফতারের অস্থায়ী দোকান বসেছে। সেখানে খেজুরসহ বিভিন্ন ফল, মুড়ি, আলুর চপ, পেয়াজু, ডিমের চপ, বেগুনি, জিলাপি, বুন্দিয়াসহ নানা রকমের মুখরোচক খাবার বিক্রি করা হচ্ছে।
আসরের নামাজের পর থেকেই দোকানগুলোতে ভিড় করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। কেনাকাটা শেষে একত্রিত হন বিভিন্ন উন্মুক্ত খেলার মাঠে। সেখানে চলে ইফতার আয়োজন। ইফতার শেষে মাঠেই নামাজ পড়েন অনেকে।
সবথেকে বেশি জমায়েত হতে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হল মাঠ, শেখ রাসেল মডেল স্কুল মাঠ, শহীদ মিনার চত্বর, ইবলিশ চত্বর ও সাবাস বাংলাদেশ মাঠে। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর ছাদ, টিভিরুমসহ বিভিন্ন বিভাগের কক্ষেও ইফতার আয়োজন করে থাকে শিক্ষার্থীরা।
রাবিতে খোলা মাঠে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ন্যায় এবারও অর্ধেক রমজান পর্যন্ত চালু থাকবে রাবির ক্লাস-পরীক্ষা। ক্লাস-পরীক্ষার কারণে রোজার মধ্যেও শিক্ষার্থীদের থাকতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বা মেসগুলোতে। পরিবারের সঙ্গে থাকলে মায়ের হাতের বাহারি আয়োজনে জমে উঠতো ইফতার।
রাবিতে খোলা মাঠে কিন্তু ক্যাম্পাসে অবস্থান করায় বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গেই ইফতার সারতে হচ্ছে। ছোটো-ছোটো বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে ইফতার করেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে থাকে বিভিন্ন বিভাগ ও ব্যাচের পক্ষ থেকে আয়োজিত ইফতার। থাকে জেলা ভিত্তিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত ইফতার।
বুধবার (২০ মার্চ) সারাদিনই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হওয়ায় খোলা মাঠে ইফতার করতে পারেননি শিক্ষার্থীরা। একাডেমিক ভবনগুলোর কক্ষসহ বিভিন্ন ভবনের কক্ষ ও বারান্দায় ইফতার করতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনের পিছনে ইফতার করতে দেখা যায় বাংলা বিভাগের অনিরুদ্ধ-৬৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের একাংশকে।
তাদের মধ্যে কথা হয় হাসিব হাসান নামে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, সারাদিনটা এভাবেই গেল। ইফতার আয়োজনটা এই আবহাওয়ায় একটু কষ্টকর। স্থান হবিবুর রহমান হলের মাঠে হওয়ার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে কাজী নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়ামের পিছনে করা হলো। যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে উপস্থিতি দেখে একটু অবাকই হলাম। এই আবহাওয়ার মধ্যে এতজন এসেছে, এটা সত্যিই আনন্দের। ধন্যবাদ আয়োজক কমিটির সকলকে।
রাবিতে খোলা মাঠে কথা হয় তাদের মধ্যে থাকা অশীথ বর্মন নামে আরেক শিক্ষার্থীর সঙ্গেও। তিনি বলেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের ব্যাচের অনেকেই আজ এই ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ করেছি। অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। আমি চাই, এভাবে আমাদের সম্প্রীতির বন্ধনটা অটুট থাকুক।
বৃষ্টি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) আবারো খোলা আকাশের নীচে ইফতার করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। শহীদ হবিবুর হল সংলগ্ন মাঠে গোল হয়ে বসে ইফতার করছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে তারিফুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, খোলা আকাশের নিচে ঘাসের উপর বসে আমরা প্রায়ই একসঙ্গে ইফতার করি।
রাবিতে খোলা মাঠে বিভিন্ন হল থেকে ভালোবাসার টানে এক হয়ে এই খোলা মাঠে ইফতারের আয়োজন করে থাকি। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জেলা সমিতি, হলভিত্তিক সিনিয়র-জুনিয়রসহ প্রায় অর্ধশতাধিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল রয়েছে যারা একসঙ্গে ইফতার করে থাকে। একসঙ্গে ইফতার করার ফলে আমাদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের যে বন্ধন, তা আরও সুদৃঢ় হচ্ছে।