রাবিতে জন্ডিস প্রতিরোধে আলোচনা সভা ও সচেতনতামূলক র‌্যালি জন্ডিস শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় এটা রাজশাহীর সমস্যা: ভিসি

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪, ১০:০৭ অপরাহ্ণ


রাবি প্রতিবেদক:রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিতে) হেপাটাইটিস এ বা জন্ডিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসা বিষয়ে এক সচেতনতামূলক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের কনফারেন্স কক্ষে রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০:৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত ফার্মেসী বিভাগ আয়োজিত এ আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর। বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আজিজ আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে এই আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ এবং সেখানে আলোচনা করেন ফার্মেসী বিভাগের অধ্যাপক মামুনুর রশিদ ও ড. শাহনাজ পারভীন।

রাবিতে মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ বলেন, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এক বছরে তার কর্মজীবনে রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি লোক জন্ডিস আক্রান্ত হয়েছে বলে লক্ষ্য করেছেন। আমাদের দেশে জন্ডিসের চিকিৎসার বিষয়ে কিছু মিথ আছে। আধুনিক চিকিৎসা সেবা থেকে দূরে আছে এমন মানুষ ছাড়াও শিক্ষিত মানুষের মধ্যে ও শহুরে শিক্ষক মানুষের মধ্যেও এই মিথের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এ ধরনের মিথ অনুযায়ী চিকিৎসা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব মিথ পরিহার করা একান্ত প্রয়োজন। লক্ষ্য করা যাচ্ছে বর্তমানে হেপাটাইটিস এ ভাইরাস মহামারীর ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।

রাবিতে এখনই আমাদের এই ঝুঁকির বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে। হেপাটাইটিস এ বা জন্ডিস সংক্রমণের অন্যতম কারণ হচ্ছে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার অভাব, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্না ও রান্না করা খাবারে জীবাণুর সংক্রমণ, খাবার পানির মাধ্যমেও এই সংক্রমণ ঘটে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ভালোভাবে হাত ধোয়া, বাসনপত্র পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, মানসম্মত পরিবেশে খাবার রান্না ও তা খাওয়া, বিশুদ্ধ পানি পান করা, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ইত্যাদি।

রাবিতে জন্ডিস সাধারণ তিন চার সপ্তাহেই ভালো হয়। তবে সব জন্ডিসই এভাবে ভালো হয় না। এজন্য প্রয়োজন আরো উন্নততর চিকিৎসা। বর্তমানে সরকারি হাসপাতালগুলোতে জন্ডিসের চিকিৎসা ও হেপাটাইটিস এ রোগীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা আছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

রাবিতে অনুষ্ঠানে অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর বলেন, হেপাটাইটিস এ বা জন্ডিস বর্তমানে যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এতে করে আমরা সকলেই সংক্রমিত হওয়ার ঝুকিতে আছি। এই সংক্রমণ রোধে গণসচেতনতা সৃষ্টি একান্ত প্রয়োজন। আমাদের সুস্থতার জন্য জীবনধারার প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ একটি ভালো উপায়। সুস্থ থাকার জন্য যা যা করণীয় তা সবই আমাদের করতে হবে। এছাড়াও আমাদের নিয়মিতভাবে দৈহিক পরিশ্রম ও শরীর চর্চা করা, হাটার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। চিকিৎসার জন্য ঔষুধ প্রয়োজন কিন্তু ঔষুধ ছাড়াই যেন আমরা সুস্থ থাকতে পারি সেই লক্ষ্যে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

রাবিতে অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, জন্ডিস সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে শুধু ফার্মেসী বিভাগ নয় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জন্ডিস সংক্রমণ সম্পর্কে তিনি বলেন, লক্ষ্য করা গেছে যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থানকারীদের চেয়ে বাইরে অবস্থানকারীদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি। জন্ডিসের সংক্রমণে রাবি প্রশাসন ইতিমধ্যে চকিৎসা কেন্দ্রে আক্রান্তদের চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। তিনি স্বল্পমূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য হেপাটাইটিস এ রোগের ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতিও আহ্বান জানান। তিনি ক্যাম্পাসের সাবমার্সিবল পাম্প থেকে পরিস্কার বোতলে পানি নেওয়া ও তার পান করার পরামর্শ দেন। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার গ্রহণের বিষয়েও তিনি সকলকে সচেতন হতে আহ্বান জানান। প্রসঙ্গেক্রমে অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম জানান যে, ওষুধ ও প্রাসঙ্গিক জিনিসপত্র সুলভ করার জন্য একটি মডেল ফার্মেসী প্রতিষ্ঠার জন্য ইনসেপ্টার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। শীঘ্রই এটি উদ্বোধন করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

রাবিতে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তার বক্তব্যে বলেন, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা গেলে হেপাটাইটিস এ বা জন্ডিস থেকে দূরে থাকা যায়। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করলে ও সঠিক চিকিৎসায় এই রোধ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে মহামারি না হলেও জন্ডিসের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে যে বিশুদ্ধ পানির অভাব ও পানিতে দুষণ থাকার কারণে জন্ডিসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। সঠিক কারণ নির্ণয় ও তা রোধে প্রয়োজনীয় গবেষণার জন্যও তিনি ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জন্ডিসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে।

রাবিতে ইতিমধ্যেই সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জন্ডিস শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় এটা রাজশাহীর সমস্যা। এই বষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে সম্মিলিভাবে কাজ করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যালস সুলভ মূল্যে হেপাটাইটিস এ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে বলে উপাচার্য আশা প্রকাশ করেন। এ ধরনের মহতী উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রসঙ্গক্রমে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে শিল্প প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সহযোগিতা ও অংশদারিত্বমূলক গবেষণাও প্রসারিত করতে আহবান জানান।

রাবিতে উপাচার্য আরও বলেন, মানুষের জীবন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতা মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এ বিষয়ে ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে আহবান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মাঝে ফার্মেসী, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ, ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ, প্রক্টর অধ্যাপক মো. আসাবুল হক, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যালস লি. এর সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার-ভ্যাকসিন মো. মাসুদ রানা ভূইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ