রাবিতে নির্ধারিত দামের থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে খাবার, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২৫, ৯:৪১ অপরাহ্ণ

রাবি প্রতিবেদক


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসের খাবারের দোকানগুলোতে খাবারের দাম নির্ধারিত মূল্যতালিকার থেকে বেশি রাখা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি তদারকি করতে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরের দোকানগুলোতে সিঙ্গারার দাম পাঁচ টাকা রাখা হলেও ক্যাম্পাসের ভিতরের টুকিটাকি চত্বরের দোকানগুলোতে দাম ৭ টাকা। যদিও বিগত প্রশাসন ৬ টাকা করে বিক্রির নির্দেশ দিয়েছিলেন। চপের দাম বাইরে পাঁচ টাকা হলেও ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বর ও সিলসিলাতে ৭ থেকে ৮ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। এমন চিত্র শুধু টুকিটাকি বা সিলসিলাতেই নয় ক্যাম্পাসের সব দোকানেই দাম বেশি রাখছেন বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বরে পেয়াজুর দাম ৬ টাকা রাখলেও সাইজ অনেক ছোটো। এছাড়া প্রায় প্রতিটি চায়ের দোকানে চা এর দাম এক টাকা বাড়িয়ে ছয় টাকায় বিক্রি করছেন দোকানদাররা। এছাড়া সকালের নাস্তা, পরোটা ও ভাজিতেও দাম বাড়ানো হয়েছে। বিগত প্রশাসন পরোটার দাম ৮ টাকা থেকে কমিয়ে ৬ টাকা করলেও ডাল ও ভাজির দাম নির্দিষ্ট করেননি। যার ফলে প্রথম দিকে ডাল ও ভাজির দাম ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা করে নিচ্ছিল দোকানীরা। দুইটি পরোটা আর ডাল ভাজি ২২ টাকা দিয়ে ক্রয় করতে হচ্ছিল। বর্তমানে আবারও দাম বৃদ্ধি করেছে দোকানীরা। বর্তমানে ২৫ টাকা দিয়ে দুটি পরোটা ও ডাল ভাজি কিনে খেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। আগের থেকে সাইজ অনেক ছোট করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ সংলগ্ন হোটেলগুলোতে অধিক দামে বিক্রি হচ্ছে খাবার। দেড় প্লেট ভাত খেতে লাগছে ৩৫ টাকা যা বাইরে ২০-২৫ টাকায় পাওয়া যায়। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব রকমের তরকারিতেও দাম বাড়িয়ে রাখা হচ্ছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনগুলোতেও রাখা হচ্ছে চড়া দাম। প্রতি পিস ডিমের দাম ১১ টাকা হলেও ডিমভাজি করে ২০ টাকা বিক্রি করছেন দোকানিরা।

রাবি প্রশাসনের অবহেলার কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, প্রশাসন যদি নিয়মিত ক্যাম্পাসের দোকানগুলো তদারকি করতো, তাহলে দোকানীরা বেশি দাম রাখতে পারতো না। দোকানের ভাড়া বেশি দিয়ে বাইরের দোকানিরা যদি কম দামে খাবার বিক্রি করতে পারে, তাহলে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ভাড়া ছাড়া কেন তারা পারবে না? তারা যার কাছ থেকে যেভাবে পারে, সেই ভাবেই দাম নিচ্ছে।

খাবারের দাম বৃদ্ধি ও মান কমার বিষয়ে ইসলামিক স্টাডিজের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাকিয়া জান্নাত বলেন, প্রশাসনের অবহেলার কারণেই দোকানিরা বেশি দাম রাখে। সঠিক তদারকি থাকলে দোকানীরা এমন করার সাহস পেতোনা। আর দোকানগুলোর পরিবেশ খুবই খারাপ এবং নোংরা।
তবে খাবারের দাম বেশি রাখার বিষয়ে দোকানীরাও অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন।

টুকিটাকি চত্বরের মনির নামের এক দোকানী বলেন, আমরা চাইলেও দাম কম রাখতে পারছি না। কারণ এখানে আমরা কোনো ধরণের সুবিধা পাচ্ছি না। প্রশাসন আমাদের বিদ্যুৎ বা পানি কিছুই দিচ্ছে না। ক্যাম্পাসে এতো বাতি জ্বলে, কিন্তু আমরা বিল দিতে চাইলেও আমাদের ২ ঘণ্টা বাতি জ্বালাতে প্রশাসন দেয় না। আমাদের চার্জার লাইট ব্যাবহার করতে হয়। শুধু পানির জন্যই আমাদের ১৬০০ টাকা দিয়ে ২জন লোক রাখতে হয়। প্রশাসন যদি আমাদের একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে দেয়, তাহলে আমাদের লোকও কম লাগবে, কম দামেও খাবার বিক্রি করতে পারব।

সবুজ আলী নামের আরেক দোকানী জানান, আসলে আমরা যার কাছ থেকে যেভাবে পারি সে ভাবেই নেই। কেউ যদি এক প্লেট ভাত খেয়ে ১২ টাকা দিতে চায়, তাহলে ১২ টাকাই নেই। কেউ কম দেয় আবার কেউ বেশি এভাবেই আমাদের চলছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাহবুবর রহমান বলেন, কোনো দোকানে চা ৬ টাকা করে রাখে? আমরা তো ৫ টাকা করেই রং চা খাই। যদি বেশি দাম রাখে তাহলে আমরা দেখব বিষয়টি।
দোকানীদের পরিবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা তো চাচ্ছি না এতো দোকান। তাদের থাকতে বলছে কে? তবে আমরা নতুন করে একটা মূল্যতালিকা দেওয়ার চিন্তা করছি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version