বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
রাবি প্রতিবেদক:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের নতুন সভাপতি নিয়োগে ১৯৭৩ এর বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্ট লংঘনের অভিযোগ উঠেছে। ওই বিভাগে সভাপতি দায়িত্ব পালনে যোগ্য দুইজন সহযোগী অধ্যাপক থাকা স্বত্ত্বেও অন্য বিভাগের অধ্যাপককে প্রেষণে এনে সভাপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এনিয়ে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে একটা অধ্যাপক পদ। যিনি অধ্যাপক ছিলেন, তিনি দায়িত্ব পালন শেষে নিজ বিভাগে এসেছেন। তাই অন্য বিভাগ থেকে সেখানে একজন অধ্যাপক বদলি করা হয়েছে এবং জ্যেষ্ঠ্যতার ক্রম অনুসারেই একজন অধ্যাপক সভাপতি হয়েছেন। কেননা বিভাগে কোন অধ্যাপক নেই। এতে নিয়মের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বরে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে ৩ বছরের জন্য প্রেষণে নিয়োগ পান জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বনাথ শিকদার। এ বছর ১৬ ডিসেম্বর দায়িত্ব শেষ হয়। ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুসারে একই বিভাগের দুইজন সহযোগী অধ্যাপক ড. অমিত কুমার দত্ত ও ড. ফারুক হাসানকে স্বপদে স্থায়ী নিয়োগ দেয়া হয়।
সভাপতির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ১০ ডিসেম্বর পূর্বাহ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক আদেশে প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ হাসান-কে প্রেষণে স্বপদে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে বদলি এবং তিন বছরের জন্য সভাপতি পদে নিয়োগ দেয়া হয়। একই সঙ্গে ড. শিকদারকে নিজ বিভাগে বদলি করা হয়। ১৭ ডিসেম্বর বিভাগে নতুন সভাপতি পদে যোগদান করেন অধ্যাপক ইমতিয়াজ।
গত ১৩ ডিসেম্বর আদেশের প্রেক্ষিতে বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে দেয়া এক চিঠিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মে কোনো বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ও তদূর্ধ্ব পদে কর্মরত থাকলে সভাপতি নিয়োগে তাঁদের মধ্য থেকেই জ্যেষ্ঠতার ক্রম অনুসারে নিয়োগ দেওয়ার কথা উল্লেখ আছে। বিভাগে বর্তমানে স্থায়ীভাবে দুজন শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত এবং তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করছেন।
বিভাগের সভাপতি নিয়োগে ওই দুই শিক্ষকেরই সভাপতি হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা আছে। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স উপেক্ষা করে অন্য বিভাগের শিক্ষককে সভাপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ চিঠির কোন জবাব দেয়ানি প্রশাসন।
১৯৭৩ সালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্টের ভলিউম-১ এর ১৮ পৃষ্ঠার ২৯ নং ক্রমিকে বিভাগীয় চেয়ারম্যান পদে নিয়োগের বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে, সর্বনিম্ন সহকারী অধ্যাপক বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব নিতে পারবেন। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগে সহযোগী-অধ্যাপক বিভাগের সভাপতি হয়ার নজির আছে।
এ ব্যাপারে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফারুক হাসান জানান, এ্যাক্টে স্পষ্ট বলা আছে, বিভাগে স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক সভাপতি হতে পারবেন। কিন্তু সভাপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। প্রশাসনের অবশ্যই সুনির্দিষ্ট কোন উদ্দেশ্য আছে। কেননা সামনে এ বিভাগে নিয়োগ হবে। আমরা কেউ সভাপতি হলে প্রশাসনের তেমন সুবিধা নাও হতে পারে।
বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক বিশ্বনাথ শিকদারকে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে পুনঃনিয়োগের আবেদন জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আবেদন-নিবেদন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া নিজেও এই বিভাগে থাকার আগ্রহ পোষণ করেছেন ড. শিকদার।
অধ্যাপক বিশ্বনাথ সিকদার বলেন, এ বিভাগে কোন অধ্যাপক পদ নেই৷ নতুন যে অধ্যাপককে প্রেষণে এই বিভাগে বদলি করে সভাপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তিনি ১৭ ডিসেম্বর যোগদান করেছেন। অথচ ওই বিভাগে সভাপতি হিসেবে আমার শেষ কার্যদিবস ছিল ১৬ ডিসেম্বর। জ্যেষ্ঠতার ক্রম অনুসারে তখন পর্যন্ত দু’জন সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। কিন্তু এই নিয়ম প্রশাসন মানে নি। বরং অন্য বিভাগ থেকে একজনকে সভাপতি নিয়োগ দিয়েছে। তাছাড়া বিভাগে নিয়োগ হবে। আমাকে বদলির পেছনে কারণ থাকতেই পারে।
জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, অধ্যাপক বিশ্বনাথ শিকদারকে ওই পুনঃনিয়োগের আবেদনটি বাতিল হয়েছে। একটি বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে অধিকতর দক্ষ ও যোগ্য জনবল প্রয়োজন। তাই অন্য বিভাগ থেকে আগের সভাপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, এখন সেটাই করা হয়েছে। এখানে নিয়মের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি।