রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
রাবি প্রতিবেদক
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে। চার হাজারের অধিক নবীন শিক্ষার্থীর পদচারণায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এছাড়া র্যাগিঙের বিষয় প্রমাণিত হলে অভিযুক্তকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের মত ক্যাম্পাসে আসতে থাকেন ১ম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীরা। তাদের চেহারায় দেখা যায় কৌতুহল। অনেকেই দলবেধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ক্যাম্পাসে। আবার অনেকের সঙ্গে এসেছেন অভিভাবকরাও। বিভাগগুলোর পক্ষ থেকে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়। সেখানে শিক্ষকদের সঙ্গে পরিচিত হতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। শিক্ষকরাও তাদের দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ দেন।
অনুভূতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের হোসেন বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ যেন এক আকাশ সমান আবেগের নাম। কিন্তু সেই কাঙ্ক্ষিত চূড়া ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে’র আঙিনায় ক’জনই বা পা রাখতে পারে। আলহামদুলিল্লাহ আমি পেরেছি, তবে পাওয়ার পর থেকেই যেন ক্লাসে যাওয়ার আগ্রহ দ্বিগুণ হয়ে গেয়েছে। আজকে ক্লাস শুরুর মাধ্যমে অসম্ভব ভালো ও আবেগঘন অনুভূতি নিয়ে পূর্ণতা পেল।
সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মোছা. নুসরাত জাহান (নুরী) বলেন, আমার শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, যারা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন এবং অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। আমি আমার কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের কারণে আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি বিদ্যাপীঠে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। আজ আসলেই একজন ‘রাবিয়ান’ হিসেবে পরিচয় দিতে ভালো লাগছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্থ পরিবেশ এবং শিক্ষাব্যবস্থা প্রথমত আমাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে এবং আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নগুলোকে পূরণ করতে সাহায্য করবে।
নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, আমাদের নতুন ছাত্রছাত্রীরা এসেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। অনেকেই হয়তো জীবনে প্রথমবারের মত ঘরছাড়া। এদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। আবাসন একটা বড় সমস্যা। আমরা শুধুমাত্র মোট ছাত্রছাত্রীদের তিনজনে একজনের আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারি। এই অবস্থার উন্নতি হতে কিছুটা সময় লাগবে। এছাড়া আছে নতুন পরিবেশে অভ্যস্ত হওয়ার বিষয়টি। সকল নবীন ছাত্রছাত্রীদের এই প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলাতে হয়।
তিনি আরও বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সকল ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর কাছে আমার একান্ত প্রত্যাশা, আমরা সবাই মিলে নবীন ছাত্রছাত্রীদের পথচলা সুন্দর করব, আনন্দদায়ক এবং ফলপ্রসূ করব, সহজ করব। নতুন এবং পুরাতন, এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলের প্রতি শুভকামনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কেটেছে :
গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ১ম বর্ষ ছাড়া অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়েছে। এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া হয়। উপাচার্য, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, প্রাধ্যক্ষসহ অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ ফাঁকা পদে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে, অচলাবস্থা থেকে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কাও নেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে। নবীন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় আরও মুখর হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।
এ বিষয়ে ইসলামি স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তারিফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন অধিকাংশ কর্মকর্তা পদত্যাগ করায় আগে আমাদের মধ্যে যে নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা ছিলো, সেটা এখন আর নেই। কারণ সেসব অধিকাংশ পদেই নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। এখন স্বাভাবিকভাবেই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম।
সেশনজটের চিন্তায় শিক্ষার্থীরা :
করোনা মহামারীর কারণে আগে থেকেই সেশনজট লেগে আছে। আন্দোলনের আগে ও পরে প্রায় দুই মাসের অচলাবস্থার কারণে আরও বেড়েছে সেশন জট। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকলেও বর্তমান প্রশাসনের কার্যক্রমে আশাবাদী শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে কথা হয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারা বলছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আগেই ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাবির নতুন প্রশাসন। তারা সেশন জট কমানোর বিষয়েও চিন্তা করবেন বলে আমরা মনে করি।
এ বিষয়ে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হুদা বলেন, এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস শুরু হয়নি। কিন্তু রাবিতে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে অন্য বর্ষের এবং আজ থেকে ১ম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে। দ্রুত ক্লাস শুরু করা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। সেশনজটসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সমস্যা সমাধানে প্রশাসন এমন ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিবেন বলে আমরা আশা করি। আমরা সবক্ষেত্রে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুসরণ করতে চাই না। নিজেদের স্বাতন্ত্র্যতা বজায় রাখতে চাই।#