নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রতিবারের মতো এবারও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জমে উঠেছিল বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা। এর মধ্যে আবাসন, পরিবহন ও খাবারের ব্যবসা আছে। তবে জমজমাট ছিল খাবারের ব্যবসা। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার।
এই তিনদিন ছিল রাজশাহীজুড়ে সারাদেশের মানুষের কোলাহল ও আনাগোনা। দেখা গেছে দল বেধে নগরীর অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে। সবাই ঘুরেও ছিল ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশায়। বিনোদন কেন্দ্রগুলোও ছিল মানুষে ঠাসা।
জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার ৬৮০। এর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী। যা ছিল মোট ১ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী। আর শিক্ষার্থীদের সাথে এসেছিলেন অন্তত একজন করে অভিভাবক। বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিজনে রাজশাহী নগরীতে খরচ হয়েছে ২ হাজার টাকা। এর মধ্যে আবাসন, খাবার ও পরিবহন খরচ আছে। তিনদিনে রাজশাহীতে এসেছিলেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ। হিসাব করে দেখা যায় সব মিলিয়ে ৩৬ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে।
অভিভাবকরা ছিলেন বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে। যদিওবা এসব হোটেলের রুম আগে থেকেই বুক করা ছিল। আবার কেউ কেউ ছিলেন আত্মীয়দের বাড়িতে। হোটেলে থাকার কারণে বড় একটি অংক ব্যয় হয়েছে শিক্ষার্থীদের। আবার কেউ কেউ রাতে এসে পরীক্ষা দিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন। অনেক শিক্ষার্থী রাবির বিভিন্ন হলে অবস্থান করেছিলেন। সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন রিকশা ও অটোরিকশা চালকরা।
রাজশাহীতে কোনো হোটেল না পেয়ে বানেশ্বরের একটি হোটেল ছিলেন ফাওজিয়া করিম নামের এক অভিভাবক। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগে থেকে কোনো হোটেল পাইনি। আর রাজশাহীতে কোনো আত্মীয়ও থাকে না। তাই বাধ্য হয়ে ২০ কিলোমিটার দূরে থাকতে হয়েছে। সেখানেও রুম ভাড়া নিয়েছে অনেক বেশি। একটি রুমের ভাড়া নিয়েছে ২ হাজার টাকা। আবার খাবারের দামও অতিরিক্ত নিয়েছে দোকানদাররা।
এই তিনদিন রাবি ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায় দূর-দূরান্ত থেকে এসেছে পরীক্ষা দিতে। ক্যাম্পাসে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন রকমের খাবার। কিছু যায়গায় খাবারের দাম অতিরিক্তও নেওয়া হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বিক্রি করতে দেখা গেছে খিচুরি, তেহেরি ও ভাত।
রাবির একই বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে নিজেরা খাবারের হোটেল খুলেছিলেন। তাদের কাছে দেখা যায় খাবারের বিভিন্ন প্যাকেজ। এই হোটেলের উদ্যোক্তা জাকির হোসেন বলেন, রাবির ভর্তি পরীক্ষা সারাদেশ থেকে মানুষ আসছে। হোটেলগুলোও অতিরিক্তি দাম নিচ্ছে। এর আগেরবার হয়েছে। তাই এবার আমরা কয়েকজন মিলে উদ্যোগ নিয়েছি। কম টাকায় ভালো খাবার সরবরাহ করেছি। তিনদিনে আমাদের টোটাল বিক্রি হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকার। এতে লাভও হয়েছে ভালো।
নগরীর তালাইমারী এলাকা চায়ের জন্য বিখ্যাত। রাবি ও রুয়েটের শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যার পর থেকে আনাগোনা বেশি থাকে। এই তিনদিনে বিক্রেতারা চা সরবরাহ করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে। আগে সারা দিনে ২০০-৩০০ কাপ চা বিক্রি হতো। তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০০-১২০০ কাপে। ফলে চিনি, চা পাতা এবং দুধ বেশি করে কিনতে হচ্ছে।
চা বিক্রেতা রেজা জানান, তিনদিনে অনেক রাত পর্যন্ত সরগরম থেকেছে দোকান। শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের আনাগোনাও ছিল চোখে পড়ার মতো। ভালোই বেচা-বিক্রি হয়েছে। প্রতিদিন হাজার টাকা লাভ হলেও এই তিনদিনে পাঁচ হাজারের বেশি লাভ হয়েছে।
রাজশাহী নগরীর একটি আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থাপক কাউসার আহমেদ বলেন, আমাদের হোটেলের রুমগুলো প্রায় এক মাস আগে থেকে বুক হয়েছিল। আমাদের যে রুম ভাড়া সেটাই নেওয়া হয়েছে। বেশি নেওয়া হয়নি। সিঙ্গেল রুম ভাড়া ৮০০, ডাবল ১৫০০, এসি ২০০০ হাজার। আমাদের হোটেলে সবমিলিয়ে রুম আছে ৬০টির মতো। তাই এই কয়েকদিনে ভালো ব্যবসা হয়েছে।
পিছিয়ে ছিল না রাজশাহীর ঐতিহ্য খাবারের দোকানগুলো। নগরীর উপশহর এলাকায় কালাইবাড়ির সত্ত্বাধিকারী আবদুস সাত্তার বলেন, এই কয়েকদিনে দম ফেলার সুযোগ ছিল না। অন্য দিনের তুলনায় ভালো বিক্রি হয়েছে। সাধারণ দিনে আমাদের ৫০০ কালাই রুটি বিক্রি হয়। তবে এই তিনদিন ১২০০ থেকে ১৫০০ পিস কালাই রুটি বিক্রি হয়েছে। আবার বেগুন ভর্তা ও মাংস বিক্রিও বেড়ে গিয়েছিল। যারা খেয়েছে তারা তৃপ্তি পেয়েছে।
তবে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা। তারা প্রতিবারের মতো এবারও ভাড়া কয়েকগুন বেশি নিয়েছে। রাজশাহী রেলস্টেশন থেকে রাবি ক্যাম্পাস পর্যন্ত এক ভর্তিচ্ছুর কাছে ভাড়া চাওয়া হয়েছিল ৩০০ টাকা। তিনি দিতে তা অস্বীকৃতি জানান। পরে ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে আরেকটি অটোরিকশায় তিনি গেছেন। এই শিক্ষার্থী বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সময় ভাড়া বেড়ে যায় এটা এর আগেও দেখেছি। তাই দামাদামি করে একটা অটোতে উঠতে হয়েছে। রাজশাহীতে সেভাবে কিছু চিনি না বলে এখানকার চালকরা সুযোগ নিচ্ছেন ।
রমজান আলী নামের এক অটোচালক বলেন, সারা শহরে ছিল জ্যামে ভর্তি। এ জন্য বেশি ভাড়া চাওয়া হয়েছে। যার ইচ্ছা হয়েছে গেছে, না হলে নেয়নি। তবে সাধারণ দিনের চেয়ে এসময়ে বেশি টাকা আয় করা হয়েছে। এই তিনদিনে পাঁচ হাজার টাকা বেশি আয় হয়েছে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, রাবির ভর্তি পরীক্ষার সময় সবকিছুর ব্যবসা ভালো জমে উঠে। এবারও তাই হয়েছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীও ছিল। এই নগরীতে ব্যবসা মূলত শিক্ষার্থীদের নিয়ে। রাজশাহী নগরীও ছিল মুখরিত।