মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
রাবি প্রতিবেদক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ¯œাতক প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে রমরমা ব্যবসা শুরু করেছে ক্যাম্পাস সংলগ্ন মেস মালিকরা। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এক রাতের জন্য ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভর্তিচ্ছু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
পাবনা থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা সুজন মাহমুদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাবি ছাড়াও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিচ্ছি তবে এমন ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি। রাজশাহীতে এসে টাকার বিনিময়ে গেস্ট হিসেবে মেসে থাকতে হচ্ছে।
ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নগরীতে আসেন শিক্ষার্থীরা। কেউ এক রাত আবার কেউ দুই-তিনদিন অবস্থান করেন পরিচিতজনের কাছে। অনেকে মাত্র এক বা দুই রাতের জন্য এত বেশি টাকা দিতে না চাইলেও অন্য ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে টাকা দিচ্ছেন। আর বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর নগরীতে আগমন উপলক্ষ্যে মওকা পেয়ে রমরমা ব্যবসায় মেতে উঠেছেন মেস মালিকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিনোদপুর গফুর মঞ্জিল ছাত্রীনিবাস, ওকেডি ছাত্রবাস, সিদ্দীকি মহল, গোল্ডেন শাওয়ার, ছখিনা ছাত্রবাস গুলোতে ২০০টাকা হরে, মির্জাপুরের খান মঞ্জিল ছাত্রীনিবাস ও তালাইমারী নূপুর লেডিস হোস্টেলে মাথাপিছু ১০০টাকা হারে ভর্তিচ্ছুদের কাছে থেকে আদায় করছেন মেস মালিকরা। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ও রাজশাহী শহরের বিভিন্ন মেসে ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসবের প্রতিবাদও করতে পারছেন না মেসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদ করলে মেস থেকে বের করে দেয়ার হুমকিও আছে বলে অভিযোগ মেসে অবস্থানরত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের।
নগরীর বিনোদপুরের দারুস সালাম ছাত্রাবাসের সদস্য হিরা বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষাকে সামনে রেখে মেস মালিক গেস্টদের প্রতি রাত থাকার জন্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে। পরে আবার ১০০ টাকা করে নির্ধারণ করে। আমার কাছে এখন তিনজন পরীক্ষার্থী আছেন। দুই দিনে ইতোমধ্যে আমাকে ৬০০ টাকা মালিককে দিতে হয়েছে। সামনে আরো অনেকেই আসবে। তারা কয়েকটা ইউনিটে পরীক্ষা দিবে। সেজন্য তারা কয়েকদিন থাকবে। এতো টাকা আমার পক্ষে কীভাবে বহন করা সম্ভব?’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে আমি প্রতিবাদ করায় মেস মালিক আমাকে চলে যেতে বলেছেন। খারাপ ব্যবহার করেছেন। আসলে এইভাবে টাকা নেওয়া অমানবিক। শিক্ষার্থীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন মেস মালিকরা।’
দারুসসালাম মেসের মালিক শারমিন বলেন, ‘মেস মালিক সমিতি থেকে আমাদের প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নিতে বলেছে। কিন্তু আমরা শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ৭৫ টাকা করেছি। আর হিরা মেসে থাকতে চাচ্ছে না। তাহলে তাকে তো আর জোর করে রাখা যায় না।’
রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মেসগুলোতে জানানো হয়েছে, ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মেসে অবস্থান করার জন্য জনপ্রতি ২০০ টাকা করে মেস মালিককে দিতে হবে।’
এ বিষয়ে ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসলে মেস মালিকের পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নানা ধরনের খরচ বেড়ে যায়। এসব কথা বিবেচনা করে আমরা এই ফি নির্ধারণ করেছি। তারপরও আমরা মালিকদের মুখে মুখে বলে দিয়েছি যেন এত টাকা না নেয়। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে আমরা এই নির্দেশ প্রত্যাহার করা হবে কি না, সেটা নিয়েও ভাবছি। আমাদের সমিতির বাইরেও অনেক মেস আছে তারাও নিজেদের ইচ্ছা মতো ভাড়া নিচ্ছে।’