বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৬ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বাড়তি মানুষ ও যানবাহনের চাপে নগরজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সড়কের যানজট- আশপাশের প্রধান সড়ক ও সংযোগ সড়ক পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়। তবে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার (২৯ মে) সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। চার শিফটের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৪টায়। সি ইউনিটে বিজ্ঞান, কৃষি, প্রকৌশল, জীববিজ্ঞান ও ভূবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ২৬টি বিভাগ রয়েছে। এই পরীক্ষা অংশ নেয় ৭৫ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী। পরীক্ষার মধ্যদিয়ে তিন দিনব্যাপী এ ভর্তিযুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু প্রথমদিনেই তীব্র যানজটের কবলে পড়েছে রাজশাহী নগরী।
জানা গেছে, এবারের ভর্তি পরীক্ষায় কোটাসহ চার হাজার ৪৮৭টি আসনের বিপরীতে এক লাখ ৭৬ হাজার ৩০০ পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে গড়ে আরও দুজন করে অভিভাবক আছেন। এতে সব মিলিয়ে বাড়তি অন্তত চার লাখ মানুষ ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত জনবল নিয়েও রাজশাহী মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ যানজট সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
যানজটের বিষয়টি মাথায় রেখে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠুভাবে চলাচলসহ ভর্তি পরীক্ষা সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসে সব ধরনের ভারী যানবাহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, ব্যক্তিগত ও অন্যান্য যানবাহন কাজলা ও বিনোদপুর গেট দিয়ে প্রবেশ করে মেইন গেট দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া, কৃষি ও চারুকলা অনুষদে যাওয়ার ক্ষেত্রে মন্নুজান হল-বেগম খালেদা জিয়া হল-স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু অ্যাকাডেমিক ভবন-তুঁত বাগান সংলগ্ন রাস্তাটি চলাচলের জন্য ব্যবহার, দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলার বাসগুলোর ক্ষেত্রে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক এড়িয়ে বিমান চত্বর ও ফল গবেষণার সামনের সড়ক ব্যবহার করাসহ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাটাখালী সড়ক, বিনোদপুর, কাজলা গেইট, অক্ট্রয় মোড়, রুয়েট গেইট, তালাইমারী, ভদ্রা, স্টেশন, শিরোইল বাসস্ট্যান্ড, রেলগেট, সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, সোনাদীঘির মোড় সড়কে যানজট সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে পরীক্ষা চলাকালীন এ সড়কগুলোতে প্রায় সময়ই যানবাহন চলাচল ১৫-২০ মিনিট করে বন্ধ হয়ে পড়ছে। এতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
যানজটের কথা মাথায় রেখে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা পরীক্ষার এক-দেড় ঘণ্টা আগেই নিজ নিজ এলাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওয়ানা দিচ্ছেন। এরপরও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে।
মেয়ের পরীক্ষার জন্য ঢাকা থেকে এসেছেন আহমেদ আলী। মেয়েকে নিয়ে নওদাপাড়া এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলেন, দুপুর ১টায় মেয়ের পরীক্ষা। এক আত্মীয় বললেন- ক্যাম্পাসে যেতে ২৫-৩০ মিনিট লাগে। আমি মেয়েকে নিয়ে দেড় ঘণ্টা আগে বের হয়েছি। বর্তমানে তালাইমারীতে অবস্থান করছি। তবুও পৌঁছাতে পারিনি। পরীক্ষায় সময় মতো মেয়ে বসতে পারবে কিনা ভেবে দুশ্চিন্তায় আছি।
বেলা ১১টায় কাটাখালি এলাকা থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে রওয়ানা দেন শাহরিয়ার সায়েম। বেলা সাড়ে ১১টায় বিনোদপুর পৌঁছান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশের ইচ্ছে থাকলেও সেখানেই নেমে হেঁটেই গন্তব্যে রওয়ানা হন তিনি। তিনি বলেন, কাটাখালী থেকে আসতেই অনেক যানজট ছিল। পরীক্ষার প্রায় দুই ঘণ্টা আগে রওয়ানা হয়েছি। তাও মনে হচ্ছে পরীক্ষা নাও দেয়া হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিনোদপুর বাজারে খুব একটা অটোরিকশা ভিড় নেয়। তবে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট থেকে শুরু করে কাজলা মোড় হয়ে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট। যানগুলোকে সামাল দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের।
অটোরিকশা চালক রাজিব বলেন, কাটখালী থেকে সাহেববাজারের ২৫ টাকা ভাড়া। আর বিনোদপুর থেকে ২০ টাকা ভাড়া।’ এমন ভাড়া সর্বশেষ কবে থেকে বেড়েছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘অনেকই দিন বেড়েছে। আমরা এভাবে ভাড়া নিয়ে থাকি।’ কারা কার্যকর করেছেন তিনি বলতে পারেননি।
তবে চালকরা বলছেন, তালাইমারী থেকে বিনোদপুর বাজারে যেতে সময় লাগে ১০ মিনিট। কিন্তু আজ সময় লাগছে ১ ঘন্টার বেশি। একবার যাওয়া আসা করতে গেলে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। একটু বেশি ভাড়া না নিলে আমাদের পোষাবে না। আর যাত্রীরা ভাড়া মিটিয়ে উঠেছেন অটোতে। তাদের না পোষালে উঠতেন না।
অটোরিকশা যাত্রী রাকিবুল ইসলাম বলেন, বিনোদপুর থেকে শিরোইল বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ভাড়া ১২ টাকা করে। সড়কে অটোরিকশা কম। বেশি ভাড়া চাইলেও অনেকেই উঠে পড়ছেন। ফলে বেশি ভাড়া দিয়ে না যাওয়া ছাড়া উপাই নাই। সাধারণত বৃষ্টি হলেও রাজশাহীতে অটোরিক্সা চালকরা ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। তারা ১২ টাকার ভাড়া ২০ টাকা নেয়।
এ বিষয়ে রাজশাহী অটো ও অটোরিক্সা মালিক সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম সাগর বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার কোন ভাড়া নির্ধারণ করা নেই। তবে অটোরিকশাগুলোর ভাড়া নির্ধারণ রয়েছে। ভাড়া নিয়ে আমরাও বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার মিটিংয়ে ভাড়ার বিষয়ে কথা হয়েছে। রাসিক নির্ধারণ ভাড়ায় সবাই যানবাহন চালাবে। যাত্রীরা যেনো ভাড়া মিটিয়ে যানবাহনে উঠে। তার পরেও কেউ যদি বেশি ভাড়া নেয় অটোরিকশার নম্বরসহ আমাদের জানালে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রফিকুল আলম জানান, পরীক্ষা চলাকালে যানজট এড়াতে ট্রাফিক বিভাগ সচেষ্ট রয়েছে। তবে পরীক্ষা উপলক্ষে বাইরে থেকে সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রচুর যানবাহন ঢুকে গেছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের সড়কগুলোতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এরপরও ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসনের সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন।
তিনি বলেন, বাইরের গাড়িগুলো বাইপাসে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিছু গাড়ি আগে থেকে অনুমতি নিয়েছে। তাদের আমরা ভেতরে ঢুকতে দিয়েছি। আর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো রয়েছে। এখন পর্যন্ত পরীক্ষার আগে ও পরীক্ষা চালাকালীন কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।