সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার
ভর্তি পরীক্ষা শুক্রবার (১ মার্চ) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। এসময় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক হুমায়ুন কবির, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, এবছর বিশেষ কোটাসহ মোট আসন সংখ্যা ৪ হাজার ৪৩৮টি এবং কোটা বাদে আসন সংখ্যা ৩ হাজার ৯০৪টি। এই আসনের বিপরীতে মোট ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৬৮০টি চূড়ান্ত আবেদন জমা হয়েছে। ‘এ’ ইউনিটে ৭৪ হাজার ৭৮৫টি, ‘বি’ ইউনিটে ৩৪ হাজার ৫৪১টি এবং ‘সি’ ইউনিটে ৭৬ হাজার ৩৫৪টি চূড়ান্ত আবেদন সম্পন্ন হয়েছে। এবার একক আবেদনকারীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৯৭৭ টি। এর মধ্যে পুরুষ আবেদনকারীর সংখ্যা ৯০ হাজার ৪৫৬টি এবং নারী আবেদনকারীর সংখ্যা ৬৪ হাজার ৫২১টি। তবে কোটা বাদে আবেদনকারীর সংখ্যা ‘এ’ ইউনিটে ৬৯ হাজার ৫২৭টি, ‘বি’ ইউনিটে ৩২ হাজার ৬১৪টি এবং ‘সি’ ইউনিটে ৭০ হাজার ৯৭৬টি।
গৃহীত ২৫টি পদক্ষেপের বিষয়ে উপাচার্য বলেন,
১. পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে ১১টি অভিভাবক টেন্টের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিটি টেন্টে অভিভাবকদের বসার জন্য ২০০টি করে চেয়ার থাকবে।
২. পরীক্ষা চলাকালে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে রাবি চিকিৎসাকেন্দ্রের ৪টি অ্যাম্বুলেন্স ও ১টি মেডিকেল টিম কাজ করবে। এছাড়া কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ২ সদস্যের ১টি মেডিকেল টিম ও ১টি অ্যাম্বুলেন্স চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করবে। সিটি কর্পোরেশনের ১টি অ্যাম্বুলেন্স ও ২সদস্যের মেডিকেল টিম কাজ করবে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণভাবে ব্যবহারের জন্য ১১টি স্থানে ওয়াশরুমের ব্যবস্থা থাকছে। বিষয়টি প্রচারের জন্য ক্যাম্পাসের ১০টি স্থানে সহজে দৃশ্যমান ব্যানার ও নির্দেশিকা থাকবে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
৪. বিএনসিসি/রোভার স্কাউট/রেঞ্জারগণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ১২টি হেল্পডেস্কের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সহযোগিতা প্রদান করবে। এসব হেল্পডেস্কে খাবারপানির ব্যবস্থা থাকবে।
৫. পরীক্ষা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সব ধরনের প্রচার-মূলক লিফলেট বিতরণ নিষিদ্ধ থাকবে।
৬. বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা না ফেলে বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ডাস্টবিনে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
৭. অসাধুচক্রের সদস্যদের তাৎক্ষণিক শান্তি বিধানে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে।
৮. প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে প্রবেশপত্রের কয়েকটি করে কপি সঙ্গে আনতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
৯. বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য ক্লাব, সমিতি ও সংগঠনগুলো পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবে। তবে তারা কোনো প্রকার হেল্প ডেস্ক বা বুথ স্থাপন করতে পারবে না।
১০. ক্যাম্পাসের পরিষ্কার-পরিছন্নতা রক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিছন্নতাকর্মী এবং কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ১৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবে।
১১. পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন আবাসিক হলে ও বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেসিয়ামে সীমিত আকারে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নারী অভিভাবকদের অবস্থানের জন্য রাবির মহিলা জিমনেসিয়াম ও পশ্চিম ৯০ নম্বর বাসায় সীমিত ব্যবস্থা
করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্রের ফটোকপি ও নিজেদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমাদান সাপেক্ষে পরীক্ষার্থীর অভিভাবক সীমিত আকারে ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে পারবে।
১২. বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনোরূপ হয়রানি ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড এবং দোকানগুলোতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও খাদ্যের অতিরিক্ত মূল্য আদায় করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া খাবারের মান বজায় রাখার স্বার্থে ভোক্তা অধিদপ্তরের ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি টিম সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত থাকবে।
১৩. পরীক্ষা সংক্রান্ত যেকোনো রকমের গুজবের (সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হলেও) বিষয়ে আইন-শৃংখলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
১৪. পরীক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সরঞ্জামাদি নিজ দায়িত্বে রাখতে হবে। এ ব্যাপারে কোন সহায়তাকারী বলে প্রচারিত ব্যক্তি/সংগঠনের খল্পর পরিহার করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
১৫. ক্যাম্পাসে ট্রাফিক ও অন্যান্য নিরাপত্তার বিষয়ে প্রচারের ব্যবস্থা থাকবে।
১৬. ভর্তি-পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কর্মকর্তাসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করে আহ্বানপত্র প্রচার করা হয়েছে।
১৭. বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশ প্রশাসনসহ প্রক্টরিয়াল বডি/বিভিন্ন সংস্থা ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয়সহ তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
১৮. প্রক্টর অফিস মেস-মালিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করেছে। সংগঠন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন।
১৯. প্রক্টর কর্তৃক ক্যাম্পাসে ও সংলগ্ন এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু থাকবে।
২০. ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর তাদের করণীয় নির্ধারণসহ প্রয়োজনীয় তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
২১. জনসংযোগ দপ্তর আপনাদের মাধ্যমে ভর্তি-পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
২২. ৫ থেকে ৭ মার্চ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ তাদের ব্যক্তিগত গাড়িসমূহ পার্কিং এর জন্য সাবাস। বাংলাদেশ-এর মাঠ ব্যবহার করবেন। তবে তাদেরকে অবশ্যই সাড়ে সাতটার মধ্যে গাড়িসমূহ পার্কিং করতে হবে।
২৩. একাডেমিক পর্যায়ে সভার বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে পরীক্ষা পূর্ববর্তী সময় থেকে পরীক্ষাচলাকালীন নিরাপত্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ সভা সম্পন্ন করেছে।
২৪. সিটি মেয়রের নেতৃত্বে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নেসকো, ওয়াসা, রাজশাহীর সুধীজন, সাংস্কৃতিক কর্মী, শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও মেস মালিক, পরিবহণ মালিক সমিতি এবং অটোরিক্সা মালিক-শ্রমিক সমিতির সাথেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মতবিনিময় করেছে।
২৫. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভর্তি-পরীক্ষা গ্রহণে অভিজ্ঞ শিক্ষক/কর্মকর্তাদের সাথে অভিজ্ঞতা শেয়ার করে অধিকতর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সভা সম্পন্ন করেছে।
কোন ইউনিটে কোন অনুষদ
‘এ’ ইউনিটে কলা, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান ও চারুকলা অনুষদভুক্ত ২৭টি বিভাগসহ শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট অন্তর্ভুক্ত আছে। ‘বি’ ইউনিটে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদভুক্ত ৬টি বিভাগ ও ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট এবং ‘সি’ ইউনিটে বিজ্ঞান, কৃষি, প্রকৌশল, জীববিজ্ঞান ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ২৬টি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত আছে।
বিশেষ নির্দেশনা
এবারে এক ঘণ্টাব্যাপী ভর্তি-পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতে গ্রহণ করা হবে। পরীক্ষা চলাকালে কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কক্ষের বাইরে যেতে পারবে না। পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন ও ক্যালকুলেটরসহ মেমোরিযুক্ত অন্য কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস সঙ্গে রাখা যাবে না। পরীক্ষা শুরুর ১ ঘণ্টা আগে পরীক্ষা ভবনের গেট ও ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কক্ষের প্রবেশগেট খুলে দেয়া হবে। ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে দেখা যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচলের নির্দেশনা
ভর্তি-পরীক্ষা সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে আছে ৫ থেকে ৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো শহরের নির্ধারিত স্থান থেকে সকাল সোয়া সাতটায় ক্যাম্পাস অভিমুখে ছেড়ে আসবে। ৫ ও ৬ মার্চ ক্যাম্পাস থেকে বিকেল সোয়া পাঁচটায় এবং ৭ মার্চ বেলা পোনে তিনটায় ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে যাবে। সকাল সাড়ে সাতটার পর ক্যাম্পাসে কোনো প্রকার ভারী যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না।
ব্যক্তিগত ও সাধারণ গাড়ি চলাচলের নির্দেশনা
ব্যক্তিগত গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন কাজলা ও বিনোদপুর গেট দিয়ে প্রবেশ করে মেইন গেট দিয়ে বেরিয়ে যাবে। কৃষি ও চারুকলা অনুষদে যাওয়ার ক্ষেত্রে মন্নুজান হল-বেগম খালেদা জিয়া হল- স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন-তুত বাগান সংলগ্ন রাস্তাটি সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে, শারীরিক প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা সকল রাস্তা ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়াও, চারুকলা ও কৃষি অনুষদে যাবার জন্য শহর থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের অক্ট্রয়মোড় থেকে ওভারব্রিজ সংলগ্ন রাস্তা ও ভদ্রা গেট এবং কাটাখালীর দিক থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের ফল গবেষণা ও বিশ্ববিদ্যালয় ফায়ার সার্ভিসের পাশের রাস্তা ব্যবহারের অনুরোধ করা হচ্ছে।
সকাল সাড়ে সাতটার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনমুখী সংযোগ সড়কগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল এবং অটোরিক্সাসহ কোনো প্রকার যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। পরীক্ষা সংক্রান্ত ও চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত গাড়িসমূহ এই নির্দেশের আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়াও বাইরের বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন রাখার জন্য বিহাস থেকে আমচত্বরগামী লিংকরোড ব্যবহার করতে পারবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপাড়া আবাসিক এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ ভর্তি পরীক্ষার দিনগুলোতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আবাসিক এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কাজলা গেট ব্যবহার করবেন এবং বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্যারিস রোড হয়ে মেইন গেট এবং রোকেয়া হলের পেছনের রাস্তা (ফ্লাই-ওভার সংলগ্ন) ব্যবহার করতে পারবেন।