রাবি প্রতিবেদক:রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নির্মাণাধীন ছাদ ধসে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান হলের একাংশের পড়েছে। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রাত আটটা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ করে ফায়ার সার্ভিস। এতে সহযোগিতা করে পুলিশ, র্যাব ও শিক্ষার্থীরা। এই দুর্ঘটনায় নয়জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে ছাদ ধসে পড়ার এসব তথ্য নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক। তিনি বলেন, উদ্ধার কাজ শেষ হয়েছে। কেউ চাপা পড়ে থাকার সম্ভাবনা নেই। কর্মরত শ্রমিকদের সংখ্যা মিলে যাচ্ছে। বিভিন্নভাবে আমরা জানতে পেরেছি, ওখানে নয়জন শ্রমিক আর তিনজন ডেভেলপারের লোক ছিল। এই মোট ১২ জনের খোঁজ পাওয়া গেছে। এই ১২ জনের মধ্যে নয়জন আহত হয়েছেন। আহতদের অধিকাংশই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে এসেছেন। কয়েকজন ভর্তি আছেন।
ছাদ ধসে পরে আহত শ্রমিকদের মধ্যে তিনজনকে প্রথমেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। তারা হলেনÑগাইবান্ধার সাঘাটার আজাদুল (৩৫), চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনুপনগরের সিফাত (২২) ও রাজশাহীর গোদাগাড়ীর শিহাব (২৫)। অন্য দুই শ্রমিককে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্র এবং পরে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দফতর সূত্রে জানা গেছে, রাবির ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১০ তলা বিশিষ্ট শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান আবাসিক হল এবং ২০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ পায় রূপপুরের বালিশ কাণ্ডে আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’। হল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৭০ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে ১০ তলা এ ভবণের নির্মাণকাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের জুন মাসে। তবে নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় পরে সময় বাড়ানো হয়। এই হলে ৩০ ফিট উচ্চতার একটি অডিটোরিয়াম নির্মাণের কাজ চলছে। সোমবার অডিটোরিয়ামের ছাদের ঢালায় সম্পন্ন হয়। এর পরদিন মঙ্গলবার দুপুরেই সাটারিং ধসে পড়ে।
কামারুজ্জামান হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিকি বলেন, সোমবার হলের অডিটোরিয়ামের ছাদের ঢালাই চলছিল। সে ঢালাইয়ে হয়তো কোনো অনিয়ম ছিল। তাই ধসে পড়েছে। আমরা থাকা পর্যন্ত সবকিছু ভালোই ছিল। ছাদের ঢালাই একটা চলমান প্রক্রিয়া।
রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক ওহিদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট কাজ করেছে। নির্মাণ ত্রুটির কারণেই ভবনটির ছাদ ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে। ত্রুটি যদি নাই থাকে, তাহলে সেটিতো আর এমনি এমনি ভেঙে পড়বে না। তিনি আরও বলেন, এইখানে মোট ১১ জন ছিল, ৯ জন শ্রমিক ও দুজন কোম্পানির লোক। শ্রমিক নয়জনই উদ্ধার হয়েছেন। কোম্পানির দুজন পলাতক আছেন। এইখানে আমাদের আটটি ইউনিট উদ্ধারের কাজ চালিয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক খন্দকার শাহরিয়ার বলেন, আমি রাজশাহীর বাইরে আছি। তবে নির্মাণাধীন হলের একটা অডিটোরিয়ামের কাজ চলছিল, সেটার শাটারিং ধসে পড়ে প্রায় ৯ জন শ্রমিক আহত হয়েছে বলে শুনেছি।
দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘কী আর বলবো। অবশ্যই আমরা পদক্ষেপ নেব। আমরা মিটিংটা করি। আমি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা ৭টা বা ৮টা বাজবে। আমি এখন গোটা কাজটি নিয়ে সন্দিহান। আমি এক্সপার্টদের ডেকে আনব। যেটা করার করা হবে। এটির সঙ্গে আমাদের অর্থ ও শিক্ষার্থীদের জীবন জড়িত। শিক্ষার্থীদের জীবনটার বড় গুরুত্ব। এটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে সন্ধ্যা ছয়টায় দুর্ঘটনা বিষয়ে জরুরি সভায় বসে রাবি প্রশাসন। সভা সূত্রে জানা যায়, সভায় তদন্ত কমিটি গঠন জরিমানাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হবে ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এই ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গেল বছরের ২৬ অক্টোবর নির্মাণাধীন এএইচএম কামারুজ্জামান হলে কাজ করার সময় বৈদ্যুতিক শকে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল।
আলোচনায় মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের বালিশকাণ্ডে বেশ আলোচিত ছিল তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদেরই একটি ‘মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’। বালিশকাণ্ডের ঘটনার পর এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধ্বসে পড়া ঘটনায় আবারও আলোচনায় এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। এরইমধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), সিটি করপোরেশনসহ বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের চারটি ভবনে আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক পণ্য সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সাজিন এন্টারপ্রাইজ, মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও জিকেপিবিএল-পায়েল-এইচএল কনসোর্টিয়াম। মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশনের সরবরাহ করা মালামাল ‘স্পেসিফিকেশন’ অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়নি বলে তথ্য উঠে এসেছিল।
বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনো কথা না বলেই সংযোগ কেটে দেন মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের এক কর্মকর্তা।