রাবি ছাত্রলীগের ৯৮ নেতাকর্মীর নামে ছাত্রদল নেতার মামলা, ছাত্রলীগের প্রতিবাদ

আপডেট: অক্টোবর ৯, ২০২৪, ১০:৪৭ অপরাহ্ণ

রাবি প্রতিবেদক


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের ৯৮ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ২২০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন শাখা ছাত্রদলের এক নেতা। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) মতিহার থানায় মামলাটি করা হয় বলে জানান মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মালেক।

অন্যদিকে এই মামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে রাবি শাখা ছাত্রলীগ। বুধবার (৯ অক্টোবর) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদলিপিতে বিষয়টি জানানো হয়। মামলায় নানান ভিত্তিহীন তথ্য দেয়ার মাধ্যমে ছাত্রদল প্রতিহিংসামূলক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে বলে দাবি দলটির।

মামলার বাদী ছাত্রদল নেতা হলেন মোহাম্মাদ আহসান হাবিব। তিনি রাবি আইন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এবং রাবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক। তার বাসা বগুড়ার ধুনট উপজেলার নাংলু গ্রামে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় রাবি ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদ-পদবিধারী নেতৃবৃন্দ রাবি শিক্ষার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের উপর বিভিন্ন ধরনের চাপ প্রয়োগ করে। এমনকি তারা চাপ প্রয়োগের একপর্যায়ে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। শিক্ষার্থীগণ ছাত্রলীগের অবৈধ বলপ্রয়োগ, ভয়ভীতি ও হুমকি উপেক্ষা করে গত ১৬ জুলাই রাবি ক্যাম্পাসের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে পাকা রাস্তার উপর কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মসূচী পালনের জন্য সমবেত হলে বিকেল ৩:১০ মিনিটের সময় রাবির বিভিন্ন পদ-পদবিধারী ছাত্রলীগের নেতাগণ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাবির সাধারণ শিক্ষার্থীগণ প্রতিবাদ করে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনী শিক্ষার্থীদের উপর ককটেল বিস্ফোরণ করে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। ককটেল বিস্ফোরণের পরে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ তাদের কাছে থাকা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রাণনাশের ভীতি সৃষ্টি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যায়।
অন্যদিকে প্রতিবাদলিপিতে রাবি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর দায়েরকৃত মামলার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে। দায়েরকৃত মামলায় নানান ভিত্তিহীন তথ্য দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়বাদী ছাত্রদল প্রতিহিংসামূলক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়েছে, তবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি নেতা-কর্মীদের এ নিয়ে মর্মাহত না হয়ে ধৈর্য্য ধরে থাকার অহ্বান জানানো হচ্ছে। অন্ধকারাচ্ছন্ন এই ভয়াল পরিবেশে আশার আলো সঞ্চার হবেই। তাই সকল নেতা- কর্মীদের একসাথে কাধে কাধ মিলিয়ে থাকার অনুরোধ করা হচ্ছে। আইনের প্রতি আমরা সকলেই শ্রদ্ধাশীল, এই বানোয়াট তথ্যের মামলা আমরা আইনগত ভাবেই লড়াই করবো।

মামলার আসামীরা হলেন- সাকিবুল হাসান বাকি, মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, মো. আসাদুল্লাহ-হিল গালিব, শামীম ইমতিয়াজ, সারোয়ার হোসেন, মেজবাহুল ইসলাম, শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন, জাকিরুল ইসলাম জ্যাক, মইন উদ্দিন রাহাত, মেহেদী হাসান তায়েব, মামুন শেখ, নূর সালাম, আলতাফ সায়েম জেমস, আশিকুর রহমান আশিক, তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয়, ইমরান হোসেন, সামিউল আলম সোহাগ, শাখাওয়াত হোসেন শাকিল, জুয়েল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বদেশ, আল মুক্তাদির তরঙ্গ, রাব্বিউল হাসান রুপক, হাসিবুল ইসলাম শান্ত, মুশফিক তাহমিদ তন্ময়, মো. হাবিবুর রহমান মুক্ত, আল-আমিন।

মিঠুন বকসী, গৌরভ শেখ বন্ধন, বুলবুল জোয়ার্দার, মিহাত, হাসান লাবন, সম্রাট, জাহিদ হাসান সোহাগ, মনু চন্দ্র মোহন দেব বর্মন বাপ্পা, ইসমাইল হোসেন, মোসাদেক সাজিদ, মাহফুজ আদিল, প্রণজিৎ, জামসেদ সবুজ, ভাস্কর সাহা, রিদওয়ান হৃদয়, আব্দুল্লাহ আল তাসরিফ, আবুল বাশার আহম্মেদ, শাকিল আহমেদ, ফরহাদ রেজা, শাকিল খান, মিনহাজুল আবেদীন, শামিম রেজা, কাইয়ুম মিয়া, প্রিন্স, পারভেজ মোশারফ, আল আমিন মোহাম্মদ তানভির, নিলয় কুমার সিংহ, রাহাত মাহমুদ, রাজ, রাকিবুল ইসলাম রাকিব, রাশেদ খান, সাদেকুল ইসলাম সাদিক, সাহাবুদ্দিন শেখ স্পর্শ, সোহান, সৈকত, সৌমিক হাসান অরণ্য, শুভ্র দেব সাহা, আসিফ মাহমুদ ধ্রুব।

আরও আসামি করা হয়েছে মেহেদী হাসান মিশু, কাবিরুজ্জামান রুহুল, মোস্তাফিজুর রহমান রাতুল, স্বাধীন খান, রাজিব হোসেন, তাসবিউল হাসান অপূর্ব, রামিম আহম্মেদ, শেখ কামাল বিন হারুন সিয়াম, আব্দুল্লাহ আল মারুফ নবাব, শুভ্র দেব ঘোষ, শামীম হোসেন, চিরন্তন চন্দ্র, মমিন ইসলাম, নিয়াজ মোর্শেদ শুভ, নাইম আলী, রেজা সাফায়েত, শফিউর রহমান রাধিক, মমিনুর রহমান মমিন, আশিকুর রহমান অপু, রাশেদ আলী, অপু মল্লিক, ফিরোজ, আবু সিনহা, অমিত হাসান, মাজহারুল ইসলাম মাজহার, মিনহাজুল ইসলাম ইভান, রিদওয়ান, সোহান, ওলিউল্লাহ রাজু, মাসুদ, খন্দকার শাহরিয়ার সৌরভ, আরিফুল ইসলাম আরিফ, তামিম, রায়হান হোসেন এবং রুহুল আমিন সরকার প্রিন্স।

তবে, ক্যাম্পাসের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মামলায় নাম উল্লেখকৃত ৯৮ জন আসামির মধ্যে সাবেক এবং বহিষ্কৃত বেশ কয়েকজন নেতার নামও রয়েছে। তারা ওইদিন ক্যাম্পাসে ছিলেন না। তাদের দাবি, মামলাটি আরও খোঁজখবর নিয়ে করা উচিত ছিল। প্রতিহিংসার রাজনীতি ফিরে না আসুক।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ