রাবি ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মেস মালিকের বিরুদ্ধে মামলা

আপডেট: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৪, ৯:০১ অপরাহ্ণ

রাবি প্রতিবেদক:


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে এক মেস মালিকের বিরুদ্ধে। এঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) নগরীর মতিহার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।অভিযুক্ত সাইফুল নগরীর বিনোদপুর এলাকার মন্ডলের মোড়ে অবস্থিত ‘নাজ মহল’ মেসের মালিক।

এবিষয়ে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী মেয়েটি একটি মামলা করেছে। অভিযুক্তকে শিক্ষার্থীরাই ধরে থানায় নিয়ে এসেছিলো। তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এখন পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে, ভুক্তভোগী মেয়েটি রাত ১টার দিকে আইন বিভাগের একটা মেসেঞ্জার গ্রুপে তাকে হয়রানি করার বিষয়টি জানায়। একই বিষয়ে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপেও এ নিয়ে পোস্ট করে।

ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, আমি আমার মেস মালিকের দ্বারা ফিজিকালি এবং মেন্টালি হ্যারাসমেন্টের স্বীকার হয়েছি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে, কারফিউ জারি করার কয়েকদিন আগে আমি যখন রাতে মেসে ফিরি, তখন মেস মালিক রুমের দরজা নক না করেই ভিতরে ঢুকে যান। তারপর উনি আমার পিঠে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করে যে, আমি কী করছি। আমি তাকে সাথে সাথে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলি। কিন্তু উনি বের না হয়ে নানা রকম আজেবাজে কথা বলা শুরু করে। উনি বলতে থাকেন, ‘তুমি একা একা কি করবা? আমি থাকি এখানে একটু? তুমি তো সুন্দর। সাবধানে থাকো, কেউ যদি তোমার সর্বনাশ করে দেয়, তখন কী হবে! তুমিতো আন্দোলনে যাও। আন্দোলনে তো ভদ্র মেয়েরা যায় না। তোমার আন্টিতো নাই। তুমি একা একা আছো, আমার কাছে এসে থাকো’ ইত্যাদি।

তিনি আরও লিখেছেন, এসব বলতে বলতে সে আমার গায়ে হাত দেয়ার চেষ্টা করতে থাকে৷ আমি বারবার তার হাত সরিয়ে দেই। তাকে চলে যেতে বলি। আমি যখন চিৎকার করে কথা বলা শুরু করি, তখন উনি চলে যায়। আমি তখন আমার ইউনিটে একা ছিলাম। আমার পাশের ইউনিটে একজন মেয়ে ছিলো। সে বাথরুমে থাকায় তেমন কিছু শুনতে পায়নি। তারপর থেকে আমার বাড়ি চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত সে বিভিন্ন আজেবাজে কথা বলে। ওনার বাসায় যাওয়ার কথাও বলে। আমি তখন থেকে আমার পাশের ইউনিটের মেয়েটার সাথে থাকা শুরু করি৷ তারপরও সে প্রায় প্রতিদিন আমাদের দরজায় নক করতো। এক পর্যায়ে আমি অতিষ্ট হয়ে আমার আত্মীয় বাড়ি চলে যাই। এই ঘটনা আমার মানসিক অবস্থা পুরো নষ্ট করে ফেলেছে। আমি এখনো পুরোপুরি নরমাল হতে পারিনি। এখন আমার কী করা উচিৎ, আমি বুঝতে পারছি না। আমি জানি আমি অনেক লেট করে ফেলেছি। কিন্তু আমি আসলে এই ব্যাপারে আলোচনা করার মতো মানসিক অবস্থায় ছিলাম না।

এই পোস্টটি ছড়িয়ে পড়ার পর রাত দেড়টার দিকেই আইন বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের ও হলের প্রায় দুইশত শিক্ষার্থী অভিযুক্ত মেস মালিকের মেসে যায়। সেখান থেকে তাকে নিয়ে থানায় যায় তারা। সেখানে ভুক্তভোগী মেয়েটি বাদি হয়ে ওই মেস মালিকের নামে একটি যৌন হয়রানির মামলা করে।

এবিষয়ে মোজাহিদ হোসেন নামে আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ২৪ এর বিপ্লবী চেতনা আমাদেরকে নতুন বাংলাদেশ দিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আমরা বিশ্বাস করি, দেশে আইনের পূর্ণ শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে সকল ধরনের অন্যায় অবিচার দূর হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি ক্যাম্পাস, শহর ও গ্রাম হবে নিরাপদ আশ্রয়স্থল, যেখানে কোনো নারী বা, মেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে না। যদি কোনো হয়রানির ঘটনা ঘটেও, তাহলে কোনো অপরাধী ছাড় পাবে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় এনে অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করে সুবিচার প্রদানের নিশ্চয়তা থাকবে। আমরা চাই, আমাদের ছোটোবোনের এই ঘটনাটি তারই একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক।