রাবি শিক্ষক ড. সুজন সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়, চাকরিচ্যুতির দাবি

আপডেট: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪, ১০:২৪ অপরাহ্ণ

রাবি প্রতিবেদক:


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুজন সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় হাজির করেছেন শিক্ষার্থীরা। তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ছিলেন। ওই হলের এবং তার বিভাগের শিক্ষার্থীরা এসব অভিযোগ জানিয়েছেন। তারা তার চাকরিচ্যুতির দাবি করে রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। পাশাপাশি, বিভাগের সভাপতি বরাবর অনুলিপি দেন তারা।



এর আগে বেলা ১২টার দিকে চারুকলা অনুষদের মুক্তমঞ্চের সামনে জড়ো হতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। পরবর্তীতে শিল্পচর্চা জয়নুল আবেদিন অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে অভিযুক্ত শিক্ষকের কুশপুত্তলিকা পোড়ান শিক্ষার্থীরা।

এ সময় ‘ভাউচার সুজনের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘এক দফা এক দাবি, সুজন সেনের চাকরিচ্যুতি’, ‘কুলাঙ্গার শিক্ষকদের কালো হাত, ভেঙ্গে দাও, গুড়িয়ে দাও’, ‘সুজনের চামচারা, হুশিয়ার সাবধান’, ‘তেলবাজি না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘চারুকলায় দূর্নীতি, চলবে না চলবে না’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

লিখিত অভিযোগ পত্রে ড. সুজন সেনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো হলো- চরম মাত্রায় দুর্নীতিবাজ ও অপরাধী হওয়া, ন্যূনতম শিক্ষাদানেও অক্ষমতার পরিচয় দেওয়া, ইচ্ছাকৃতভাবে টার্গেটেড শিক্ষার্থীদের মার্ক কমবেশি করে দেওয়া, অন্যের শিল্পকর্ম নিজের নামে চালানো, কোর্স না করিয়েই পরীক্ষা নেওয়া, ব্যবহারিক কাজ ব্যবহারিকভাবে না করানো, হলের জিনিসপত্র ক্রয়ে জালিয়াতি করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ।

ড. সুজন সেন আপাদমস্তক একজন দুর্নীতিবাজ উল্লেখ করে অভিযোগ পত্রে বলা হয়, তিনি আপাদমস্তক একজন স্বৈরাচারী, অযোগ্য, প্রতারক, দালাল, চাটুকার ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি। তিনি তার শিক্ষকতার কর্মজীবনের প্রতি পদে পদে তার অযোগ্যতা ও প্রতারণার পরিচয় দিয়ে এসেছেন এবং এসব ধামাচাপা রাখতে তিনি দিনের পর দিন শিক্ষার্থীদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে নিপীড়ন করে গেছেন। তার নানা অপকর্ম ও অত্যাচারে আমাদের শিক্ষাজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের অনুসন্ধানী প্রচেষ্টায় ড. সুজন সেনের বিরুদ্ধে বিভাগে এবং হলে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেছে, যাতে পরিলক্ষিত হয় তিনি শিক্ষক হিসেবে অযোগ্য হওয়ার বাইরেও ব্যক্তি হিসেবেই চরমমাত্রায় অনৈতিক, দুর্নীতিবাজ ও অপরাধী।

ড. সুজন অনেক শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস করেছেন উল্লেখ করে অভিযোগ পত্রে বলা হয়, শিক্ষক হিসেবে তার দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষাদান করা। কিন্তু সঠিক শিক্ষাদান তো দূরের বিষয়, তিনি ন্যূনতম শিক্ষাদানেও অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। উল্টো তিনি স্বৈরাচারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে অনেক শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস করে দিয়েছেন। ড. সুজন সেন শিক্ষাজীবন থেকে শ্রেণিকোর্সের কাজ না জেনে অন্যের শ্রেণিকাজ চুরি করে স্নাতক-স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণি পান। বিষয়টি জানাজানির পর শিক্ষকতার জন্য তৎকালীন শিক্ষকদের সুপারিশ না পেয়ে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে প্রথমে খন্ডকালিন, অ্যাডহক এবং পরবর্তীতে স্থায়ী পদে শিক্ষকতায় যোগ দেন বলে বিদিত আছে।

আরও বলা হয়, চারুকলার প্রতিটি বিষয় ব্যবহারিক হওয়া সত্ত্বেও তিনি কর্মজীবনের পুরো সময়ে কোনো শিক্ষার্থীকে সরাসরি শ্রেণির ব্যবহারিক বিষয় হাতেনাতে শেখাননি। কখনও পেন্সিল হাতে শিক্ষার্থীদের সামনে একটা ড্রইং পর্যন্ত তিনি করেননি। একজন শিক্ষক হিসেবে এটিই তার সবচেয়ে বড় দুর্নীতি, অযোগ্যতা এবং শিক্ষার্থীর সঙ্গে একটা স্পষ্ট প্রতারণা। এই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েই শিক্ষকতার লেবাস ধরে তিনি বছরের পর বছর এদেশের জনগনের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

প্রাধ্যক্ষ থাকাকালীন হলে দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ পত্রে বলা হয়, হলে প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের সময়কালে ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন তিনি। তিনবছর মেয়াদে প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকাকালে নাস্তা, খাবার, ইলেকট্রনিক দ্রব্যাদি, তৈজসপত্রসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি ক্রয়ের শতকরা ৮০ ভাগ ভাউচারেই তার জালিয়াতি রয়েছে। এই ভাউচারগুলোর মধ্যে কিছু ভাউচার তিনি নিজে লিখেছেন, কিছু ভাউচার হলসুপার মামুনুর রহমানের হাতে লিখিয়েছেন। শুধুমাত্র মামুনুর রহমানের হাতের লিখা তিনশতাধিক জাল ভাউচারেই তিনি প্রায় ১০ লক্ষ ৪৬ হাজার ৪৫৬ টাকার দ্রব্যাদি ক্রয় দেখিয়েছেন। যার অধিকাংশই হলের সংস্থাপন তহবিল এবং বিবিধ তহবিলে দেখা গেছে। এছাড়া, অন্যান্য অনেক ভাউচারে বার বার একই হাতের লিখা দেখা গেছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক ড. সুজন সেনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

সার্বিক বিষয়ে চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. বনি আদম বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের দেওয়া অনুলিপি পেয়েছি। আগামীকাল বিভাগের শিক্ষকরা বসে সিদ্ধান্ত নিব। অধিকাংশ শিক্ষকের মতামতের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত আসবে, তা জানিয়ে দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ড.সুজন সেনের বিরুদ্ধে চারুকলার বর্তমান ও সাবেকদের মধ্যে ৪৬ জন শিক্ষার্থী অনলাইনে গুগল ফর্ম পূরণের মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইতোপূর্বে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিভাগের সামনে ব্যানার টানিয়ে দিয়েছে এবং বিচার দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি করেছে। একইসঙ্গে শহীদ জিয়াউর রহমান হলে প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের সময় বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ‘ফাদার অব ক্রিমিনালস্’ অ্যাখ্যা দিয়ে হল গেটেও ব্যানার টানিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।