রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
রাবি প্রতিবেদক :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের ছাপচিত্র ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুজন সেনের বিরুদ্ধে এপর্যন্ত ৪৩জন শিক্ষার্থী অভিযোগ জানিয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজেরা গুগল ফর্মের মাধ্যমে এসকল অভিযোগ সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচারের দাবিতে চারুকলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচিতে এই তথ্য জানান শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচিতে এই শিক্ষকের বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন না বলে ঘোষণা দেন ছাপচিত্র ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা। এর আগে, গত ২৫ আগস্ট অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গত ২৫ আগস্ট দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর না নিয়েই ২৭ আগস্ট দুটি বর্ষের ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ড. সুজন সেন। এ বিষয়ে বিভাগের কর্মচারী মোমিন ইসলামের মাধ্যমে বিভাগের একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দেওয়া হয়।
পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে সে পোস্ট সরিয়ে ক্ষমা চাওয়া হয়। তিনি বিগত সময় তেমন ক্লাস না নিলেও হঠাৎ করেই এই সিদ্ধান্ত নেন। অথচ সেসময় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকজন শিক্ষার্থী বন্যার কারণে নিজ এলাকায় বিপদে সময় পার করছিলেন।
এঘটনায় গত ২৫ আগস্ট রাতে লিখিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ২৭ আগস্ট বিকেলে বিভাগের সামনে দুইটি ব্যানার টানিয়ে দেন বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে গত ২৯ আগস্ট বিকেলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে এমন ঘোষণা দিয়ে তার ব্যক্তিগত চেম্বারেও তালা দেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া গুগল লিংকের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের অভিযোগগুলো সংগ্রহ করেন তারা।
বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আসা অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, কখনই ক্লাসে ড্রইং হাতে ধরে না শেখানো, শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন, টার্গেট করে শিক্ষার্থীদের কম নম্বর দেওয়া এবং পছন্দের শিক্ষার্থীকে বেশি নম্বর প্রদান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার পক্ষে অবস্থান, কাজ চুরি করে নিজের রেজাল্ট তোলার পর দূর্নীতির আশ্রয়ে শিক্ষক হওয়া এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে অর্থ লোপাট।
এছাড়া, শহীদ জিয়াউর রহমান হলে প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকাকালেও তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ তছরুপ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিনিয়ত এমন অভিযোগ আসছে।
এ বিষয়ে ছাপচিত্র ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আসাদ সাদিক রাফি বলেন, উনি কখনোই আমাদের হাতেকলমে ড্রইং শেখান না। ফলে, এবিষয়ে ওনার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া, উনি শিক্ষার্থীদের মানসিক নির্যাতন করেন। পরীক্ষার খাতায় ইচ্ছাকৃতভাবে মার্ক কমবেশি করে দেন। এরকম অনেকগুলো অভিযোগ আছে ওনার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষীতে আমরা তার বিচার চাই।
একই ডিসিপ্লিনের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাহুল দেবনাথ বলেন, ওনার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো হাতেকলমে ড্রইং না শেখানো। যেখানে আমাদের ডিসিপ্লিনের কারিকুলামে ব্যবহারিক কাজই বেশি। এছাড়া অন্যের কাজ (ড্রইং) চুরি করা, অর্থ তছরুপসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে ওনার বিরুদ্ধে।
এপর্যন্ত ডিসিপ্লিনের ৪০ জন এবং জিয়াউর রহমান হলের ৩ জন শিক্ষার্থী ওনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ জানিয়েছেন। আমরা ওনাকে সকল অ্যাকাডেমিক এবং প্রশাসনিক কাজ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। আমরা ওনার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আপাতত উপাচার্য না থাকায় আমরা ওনার বিচারের দাবিতে বিভাগীয় সভাপতি ও ডিন বরাবর লিখিত অভিযোগ জানাবো।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ড. সুজন সেনের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।