মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
রাবি প্রতিবেদক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহেরের নৃশংস হত্যাকা-ের ১১ বছরেও মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিভাগে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় তারা এ দাবি জানানো হয়।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি প্রতিবাদ র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিভাগের গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন। বক্তারা সভায় হাইকোর্টের বিচারের রায় দ্রুত নিষ্পত্তি ও কার্যকরের দাবি জানায়। এসময় বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক খোন্দকার ইমামুল হক, অধ্যাপক হামিদুর রহমান, অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক মৃনাল কান্তি রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুবয়ারি রাতে অধ্যাপক তাহের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার পশ্চিম ২৩/বি বাসা থেকে নিখোঁজ হন। পরে ৩ ফেব্রুবয়ারি সকালে নিজ বাসার পেছনের সেপটিক ট্যাংক থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ পুলিশ অধ্যাপক তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরকে আটক করে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ৭ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী জামায়াতপন্থি শিক্ষক মিয়া মো. মহিউদ্দিনকে আটক করে পুলিশ। হত্যাকা-ের ঘটনায় শিক্ষক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভী নগরীর মতিহার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন উপ-পরিদর্শক আহসানুল কবির জামায়াতপন্থী শিক্ষক মিয়া মহিউদ্দিন ও তৎকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহীসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
পরে ২০০৭ সালের ৩ জুলাই রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। ২০০৮ সালের ২২ মে আদালত শিক্ষক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীরের ভাই শিবির কর্মী আব্দুস সালাম ও নাজমুল ইসলামকে মৃত্যুদ-াদেশ দেয়। অভিযোগপত্রের অন্য দুই আসামি তৎকালীন মাহবুবুল আলম সালেহী ও জাহাঙ্গীরের বাবা আজিমুদ্দিনকে বেকসুর খালাস দেয় আদালত। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলও করেন আসামিরা। ৫ বছর পর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। ওই বছরের ২১ এপ্রিল আপিলের রায়ে শিক্ষক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যু দ-াদেশ বহাল এবং জাহাঙ্গীরের ভাই শিবির কর্মী আব্দুস সালাম, নাজমুল ইসলামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়া হয়।
তবে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের দুই জন খালাস ও অন্য দুই জনের সাজা কমানোয় ড. তাহেরের পরিবারের পক্ষ থেকে আবার উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। কিন্তু ৪ বছর পরেও আপিলের নিষ্পত্তি হয়নি। ফলে বিচারের রায় কার্যকরও সম্ভব হয়নি।
ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক খোন্দকার ইমামুল হক বলেন, ‘প্রথমে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ মামলার রায় হয় ২০০৭ সালে। কিন্তু পরবর্তীতে আসামিরা আপিল করে করলে তাদের সাজা কমে যায়। কিন্তু বর্তমানে মামলাটির কোনও অগ্রগতি নেই। ২০১৩ সালে পরিবােেরর পক্ষ থেকে করা হাইকোর্টে আপিল শুনানিও শেষ হয়নি। যা আমাদের হতাশ করছে। দ্রুত এ মামলার বিচার নিষ্পত্তির মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি কামনা করছি।’