রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পক্ষে- বিপক্ষে কর্মসূচি পালিত

আপডেট: জানুয়ারি ২৭, ২০১৭, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক



সুন্দরবনের কাছে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল বৃহসাপতিবার পক্ষে ও বিপক্ষে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবিতেঅর্ধদিবস হরতাল কর্মসূচিপালিত হয়েছে। এ সময় রামপাল বিরোধীদের মিছিলে পুলিশ কাদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। অন্যদিকে বাগেরহাটে ওই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে স্থানীয় সাংসদের উপস্থিতিতে। বিক্ষোভ-সমাবেশ, অবস্থান ও কর্মসূচি
সুন্দরবনের কাছে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবিতে ঢাকায় আধাবেলা হরতালের পর বিক্ষোভ, সারা দেশে রাজপথে অবস্থান ও খুলনায় মহাসমাবেশের তিনটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হরতালের পর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, হরতালের সমর্থনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর মিছিলে ‘পুলিশি হামলা ও ত্রাস সৃষ্টির প্রতিবাদে’ ২৮ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ হবে।
রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ ‘সুন্দরবন-বিনাশী’ সব প্রকল্প বাতিলের দাবিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
এছাড়া আগামী ১১ মার্চ খুলনা মহানগরীতে ‘উপকূলীয় মানুষদের নিয়ে’ হবে মহাসমাবেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশের সঙ্গে হরতালকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, দফায় দফায় কাঁদুনে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার রামপালবিরোধীদের আধাবেলা হরতাল শেষ হয়। পুলিশের টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট এ সময় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন বলে আন্দোলনকারীদের ভাষ্য।
হরতালের সমর্থনে সকাল থেকে পল্টন, প্রেসক্লাব, দৈনিক বাংলা মোড় ও আশপাশের সড়কে মিছিল করে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে সিপিবি, বাসদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টিসহ কয়েকটি সংগঠন পল্টন মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে সকাল সোয়া ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মতিঝিলমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও পল্টন ছাড়া ঢাকার অন্য সব এলাকার প্রধান সড়কগুলোতে নগর পরিবহন ও ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। হরতালের কারণে জনজীবনে তেমন কোনো প্রভাব পড়তেও দেখা যায়নি।
পল্টনের অবস্থান শেষে বেলা ১২টা থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ।
অন্যদের মধ্যে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী) সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশু ও গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি সমাবেশে বক্তব্য দেন।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে মানববন্ধন
সুন্দরবনের কাছে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবিতে ঢাকায় হরতালের দিনে বাগেরহাটে ওই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে স্থানীয় সাংসদের উপস্থিতিতে।
দক্ষিণাঞ্চল উন্নয়ন পরিষদ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে রামপাল উপজেলার খুলনা-মংলা মহাসড়কের বাবুরবাড়ি এলাকায় এক ঘণ্টার এ কর্মসূচি পালিত হয়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ কয়েক হাজার নারী-পুরুষ প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের স্বার্থে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে দ্রুত এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা।
বাগেরহাট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য তাদুলকদার আবদুল খালেক, রামপাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল ওহাব, সাধারণ সম্পাদক শেখ আবু সাইদ, মংলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু তাহেরসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ চলছে।
পরিবেশবাদীদের একটি অংশ বলে আসছে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। এ কারণে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রামপালের বিরোধিতা করে আসছে।
ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবিতে ঢাকায় বৃহস্পতিবার আধাবেলা হরতালও পালন করেছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
তবে সরকার বলে আসছে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না।- বিডিনিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ